বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ভাতার থানার পুলিশের উপর বোমাবাজিতে ধৃত ৪ জনের জামিন মঞ্জুর করল বর্ধমান সিজেএম আদালত। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুরুলিয়ার ঘাটবাঁধ, আমডিহা ও কাতিনপাড়ার বাসিন্দা নেপালচন্দ্র মারদানা, কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, খোকন মোদক ও সঞ্জীব সেনকে ৫ দিন নিজেদের হেপাজতে নেয় ভাতার থানার পুলিশ। পুরুলিয়ার সামসেরগঞ্জ থানার দুটি মামলায় তারা ধরা পড়ে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ভাতারের ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে পারে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিজেএম আদালতে আবেদন করে ভাতার থানার পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের উপর বোমাবাজিতে তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করে পুলিশ। সেই আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর ধৃতদের হেপাজতে নেয় পুলিশ। ধৃতরা এলাকায় বিজেপির সক্রিয় কর্মী হিসাবে পরিচিত। হেপাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর শনিবার ধৃতদের ফের আদালতে পেশ করে পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে কোনও বোমা উদ্ধার হয়নি। ঘটনার বিষয়ে তেমন কোনও তথ্য তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। ধৃতদের হয়ে আইনজীবী পুলক মুখোপাধ্যায় ও কমল দত্ত জামিন চেয়ে সওয়াল করেন। আদালতে তারা বলেন, ধৃতদের নাম এফআইআরে নেই। তাদের কাছ থেকে কিছু উদ্ধার হয়নি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলায় তাদের ফাঁসানো হয়েছে। সরকারি আইনজীবী নারদ কুমার ভূঁইঞা অবশ্য জামিনের জোরালো বিরোধিতা করেন। সওয়াল শুনে চার্জশিট না হওয়া পর্যন্ত তদন্তকারী অফিসারের কাছে সপ্তাহে একদিন হাজিরার শর্তে প্রত্যেকের ২ হাজার টাকার বন্ডে ধৃতদের জামিন মঞ্জুর করেন সিজেএম রতন কুমার গুপ্তা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৩ এপ্রিল সিপিএমের কয়েকজন ভাতারের বিডিও অফিসে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পেশ করতে যান। কিন্তু, তৃণমূলের লোকজন মনোনয়ন পেশে বাধা দেয়। মনোনয়ন পেশ করে বিডিও অফিস থেকে বের হওয়া মাত্র সিপিএমের প্রার্থীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে তৃণমূলের লোকজন। পুলিশ বিডিও অফিস থেকে সিপিএম প্রার্থীদের পার্টি অফিসে পৌছে দিতে যায়। সেই সময় বর্ধমান-কাটোয়া রোডে কামারপাড়া মোড়ের কাছে তৃণমূলের কয়েকজন সিপিএমের প্রার্থী ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। পরে বোমাবাজিও করা হয়। বেশ কয়েকটি বোমা পড়ে। বোমার ঘায়ে ভাতার থানার সাব-ইনসপেক্টর সঞ্জয় মণ্ডল, সার্কেল ইনসপেক্টর ও কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার জখম হন। পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ঘটনাস্থল থেকে ২টি তরোয়াল, ছুরি, ফাটা বোমার অংশ ও ১০টি লাঠি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। ঘটনার বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে পুলিশ। ঘটনায় কয়েকজনকে শনাক্ত করে পুলিশ। অভিযুক্তদের মধ্যে অমল বাগদি ও সন্দীপন মাঝি গ্রেফতার হয়। কয়েকজনের আগাম জামিন মঞ্জুর করেন জেলা জজ। ভাতারের ঘটনায় পুরুলিয়ার বিজেপি কর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী এদিন বলেন, দলের কর্মীরা জামিন পাওয়ায় সত্য সামনে এল। তাদের যে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে তদন্তে তা প্রমাণিত। সিপিএম-তৃণমূলের গণ্ডগোলে বিজেপির কর্মীদের অন্যায়ভাবে পুরুলিয়া থেকে ধরে নিয়ে এল পুলিশ।