বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বৃহস্পতিবার রাজ্য বাজেটকে পাইয়ে দেওয়া বাজেট বলে সমালোচনায় মুখর হলেন বিরোধীরা। শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বেকারত্ব প্রভৃতি নিয়ে কোনো আলোকপাত করা হয়নি এই রাজ্য বাজেটে এমন অভিযোগের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বাজেট পেশের পরই বিরোধীরা রাজ্য সরকারের কাজের নমুনা তুলে ধরতে গিয়ে হাতিয়ার করল খোদ রাজ্য বিধানসভার ওয়েবসাইটকে। বিজেপির জেলা যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক সুধীররঞ্জন সাউ জানিয়েছেন, এই বাজেট অনুদানের বাজেট। তিনি জানিয়েছেন, আর এদিন যিনি বাজেট পেশ করেছেন রাজ্যের অর্থ দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, তিনি ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ করেছেন ‘অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের’ অর্থমন্ত্রী হিসাবে। সুধীররঞ্জনবাবু জানিয়েছেন, এটাই এখনও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ওয়েবসাইটে জ্বলজ্বল করছে। যাঁরা এই ভুলকে এখনও সংশোধন করতে পারল না, তাঁদের কাছ থেকে বাজেটে এর থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় না। সিপিআই(এম)-এর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই বাজেটে আগামী ১ বছর সরকার কীভাবে চলবে তার কোনো দিশা নেই। গোটা রাজ্য জুড়ে বেকারত্বের জ্বালা মেটানোর কোনো কথা নেই। কৃষি শ্রমিকদের জন্য একটাও কথা নেই। নেই শিল্প কর্মসংস্থানের কোনো পদক্ষেপ। পাইয়ে দেবার বাজেট আর লুটেরাদের আড়াল করার বাজেট পেশ হয়েছে। অপূর্ব বাবুও এদিন জানিয়েছেন, রাজ্য বিধানসভার ওয়েবসাইটে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া রয়েছে। যা সংশোধন করার কোনো তাগিদ নেই সরকারের। শুধু এটাই নয়, অপূর্ববাবু জানিয়েছেন, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফলের তালিকা আজও প্রকাশ করেনি রাজ্য নির্বাচন কমিশন। গোটা সরকারটাই চলছে ডামাডোলে। জেলা কংগ্রেস নেতা গৌরব সমাদ্দার জানিয়েছেন, সামনেই লোকসভা ভোট। আর সেই ভোট টানতেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে টাকা বাড়ানো হয়েছে, সিভিক ভলানটিয়ার, ভিলেজ পুলিশদের মাইনে বাড়ানো হয়েছে। অথচ গোটা সরকারটাই দেনার দায়ে ডুবছে। গৌরববাবুও জানিয়েছেন, এদিন তাঁরা লক্ষ্য করেছেন রাজ্য বিধানসভার ওয়েবসাইটে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর নামের পাশে লেখা রয়েছে ২০২৩ সালে, ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি যখন বাজেট পেশ করেছেন সেই সময় নাকি তিনি অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লকের (এআইএফবি) নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভার প্রতিনিধি ছিলেন। গৌরববাবু জানিয়েছেন, রাজ্য বিধানসভা একটা সম্মানের জায়গা। বহু মানুষ বিধানসভার গতিপ্রকৃতি জানতে নিয়মিত ওয়েবসাইট দেখেন। তাঁদের কাছে কী বার্তা যাচ্ছে? এর থেকে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ সাঁই জানিয়েছেন, বাজেটে ৪ শতাংশ ডিএ ঘোষণার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, রাজ্যের সরকার প্রান্তিক মানুষের জন্য শতাধিক প্রকল্প চালু রেখেছেন। তাঁরা ডিএ যেমন চান, তেমনি সাধারণ মানুষের জন্য মানবিক প্রকল্পগুলো চালু থাকে এটাও চান। আর এগুলো চালাতে গিয়ে সরকারের যে আর্থিক চাপ তৈরি হচ্ছে তার প্রধান কারণ যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে চুরমার করে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের বিভিন্ন টাকা আটকে রাখছে। যারা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরোধিতা করছেন, যারা ডিএ আন্দোলনের নামে মঞ্চে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের ডেকে এনে রাজনীতি করছেন তাঁদেরকে বলবো আপনারা রাজনৈতিক মঞ্চ না করে চলুন সবাই মিলে কেন্দ্রের কাছে পাওনা আদায় করবার জন্য যৌথভাবে আন্দোলন করি। যাতে আমরা আমাদের ডিএ-টাও পাই আবার মানবিক প্রকল্পগুলোও সচল থাকতে পারে। তিনি বলেন, সাধারণ কর্মচারীদের বিভ্রান্ত করে অর্থ নিয়ে আদালতে মামলা করেছেন। রাজ্য সরকার আদালতের রায় বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই পারতো, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের আবেদনে সাড়া দিয়ে রাজ্য সরকার আসতে আসতে ডিএগুলো দিচ্ছেন। আমরা যেমন আমাদের পাওনা চাইবো, তেমনি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভাবনাটাও ভাববো। কেন্দ্রের সরকার চাকরির সমস্ত জায়গাগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। সমস্ত কিছু বিক্রি করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। ভবিষ্যতে চাকরি পাবেন কোথায়। এর পাশাপাশি বিধানসভার ওয়েবসাইটে ভুল তথ্য প্রসঙ্গে বিশ্বজিৎ সাঁই জানিয়েছেন, বর্তমান রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেকটি মানুষের জন্য যেভাবে কাজ করে চলেছে তাতে বিরোধীরা কোনও ইস্যু পাচ্ছে না। তাই ছোট একটা ‘টাইপিং ত্রুটি’-কে সামনে এনে রাজনীতি করতে চাইছে।