নন্দনে ঠাঁই না পেলেও জেলায় জেলায় রমরমিয়ে চলছে দেব-মিঠুনের ‘প্রজাপতি’
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- কলকাতার নন্দনে দেখানো হয়নি অভিজিৎ সেন পরিচালিত ‘প্রজাপতি’। যা নিয়ে গোটা রাজ্য জুড়েই বিতর্ক যখন তুঙ্গে তখন কলকাতার বাইরে মফঃস্বল এলাকায় রীতিমত দাপিয়ে চলছে দেব-মিঠুনের ‘প্রজাপতি’ সিনেমা। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এই ‘প্রজাপতি’ ছবিকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন, জেলায় জেলায় ছবির সাফল্য তাঁর সেই বক্তব্যকেই কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে চলেছে। আর তা নিয়ে পাল্টা মন্তব্য করেছে বিজেপির বর্ধমান জেলা নেতারাও। ইতিমধ্যেই নন্দনে দেব-মিঠুন অভিনীত এই ছবির ঠাঁই না পাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক কুটকাচালি যখন তুঙ্গে তখন জেলায় জেলায় এক সপ্তাহ, দু’সপ্তাহ ধরে হাউসফুল হয়ে উঠছে প্রেক্ষাগৃহগুলি। বাদ নেই খোদ পূর্ব বর্ধমান জেলাও। আর এই পরিস্থিতিতে আরও নজরকাড়া ঘটনা হ’ল খোদ তৃণমূল পরিচালিত পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের অধীন সংস্কৃতি লোকমঞ্চের মেট্রো প্রক্ষাগৃহে রমরমিয়ে চলছে এই ছবি। আর এব্যাপারে জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, ‘প্রজাপতি’ ভালো চলছে। দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষ করে তৃতীয় সপ্তাহ চলছে। দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ১ টা শো চলেছে। গত শুক্রবার থেকে তৃতীয় সপ্তাহে পা দেওয়া প্রজাপতির জন্য ২ টো শো শুরু হয়েছে। শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, সংস্কৃতির মেট্রোতে ১৭৫ টি আসন। ৭৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এটা যথেষ্ট ভালো। টিকিটের দাম – ৮০ টাকা এবং ১০০ টাকা। তিনি জানিয়েছেন, তৃতীয় সপ্তাহের শো-টাইম – ১.১৫ এবং ৬.৩০। প্রজাপতি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সভাধিপতি জানিয়েছেন, দু-পক্ষরই চাহিদা অনুযায়ী সিনেমা আসে। ডিস্ট্রিবিউটরও বলে আবার আমরাও চাই। যেমন ২৫ তারিখ পাঠান রিলিজ করছে। ওরা আমাদের খোঁজ করেছে, আমরাও চাইছি। বিতর্ক নিয়ে তিনি বলেছেন, সিনেমা হল পাওয়ার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতি দেখা হয় না এটাই প্রমাণিত হল। কারণ মেট্রো পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের। তেমন হলে এখানেও প্রজাপতি চালানো হত না। শুধু সংস্কৃতি নয়, বর্ধমান শহরের ‘বর্ধমান সিনেমা’ হলের ম্যানেজার মধুসূদন দত্ত তো এখন রীতিমত হাত কামড়াচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই হলে প্রজাপতি চলছে না। ছবিটা ভালো ছবি। আমাকে ডিষ্ট্রিবিউটররা প্রথমেই বলেছিল হিন্দি না বাংলা চালাবেন। আমার-ই ভুল সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। না হলে ছবিটা আনলে ভালো হত। একই ডিস্ট্রিবিউটরের ছবি। আমাকে অপশন দিয়েছিল। আমি বুঝতে না পেরে হিন্দী বেছে নিয়েছি। এখন দেখছি ভুল সিদ্ধান্ত। পরে সুযোগ থাকলে প্রজাপতি এনে চালাবো। তিনি জানিয়েছেন, আসলে এগুলো সিঙ্গেল স্ক্রিনে অসুবিধা। ডবোল স্ক্রিন, মেট্রো, আইনক্স -এইসব জায়গায় ঠিক আছে। আমাদের বড় স্ক্রিন। ভেঙে মাল্টিপ্লেক্স করলে ভালো হবে। ইচ্ছা আছে বর্ধমান সিনেমা হলকে মাল্টিপ্লেক্স করার। সেক্ষেত্রে ৯০০-১৫০০ সিট চলবে না। ১০০-১৩০ করে চালাতে হবে। তিনি জানিয়েছেন, এখনকার পাবলিক তো হলে গিয়ে নিয়মিত সিনেমা দেখেন না। কোনও ভাবে ভালো ফিডব্যাক পেলে তবেই দেখতে যায়। আবার বর্ধমান শহরের ‘বিচিত্রা সিনেমা’ হলের ম্যানেজার সমর ঘোষ জানিয়েছেন, প্রজাপতি ২৩ তারিখ রিলিজ করেছে। প্রথম সপ্তাহে খুবই ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। প্রথম সপ্তাহে প্রতি শোতে প্রায় ২০০ টিকিট বিক্রি হয়েছে। দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রতি শোতে ৭০-৮০ টি করে টিকিট বিক্রি হয়েছে। তৃতীয় সপ্তাহেও ভালোই চলছে। এই হলে প্রায় ৬০০ আসন। প্রতিদিন ৩ টে করে শো চলছে। ১১ টা, ২ টো এবং ৫ টা। প্রজাপতির ফিডব্যাক আগের সিনেমাগুলি থেকে অনেক ভালো। একসময় হলে গিয়ে সিনেমা দেখা যেসব মানুষ ঘরে ঢুকে গিয়েছিলেন তাঁরা আবার বেরিয়ে এসেছেন। যারা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, তাঁরা আসছেন। কেউ বলছেন ১০ বছর, কেউ ১৫ বছর, কেউ আবার ২০-২৫ বছর পরে হলে এলাম বলে জানিয়েছেন। সিনেমার ফিডব্যাক শুনে এবং বিজ্ঞাপন দেখে আসছেন। আবার মেমারীর ‘কৃষ্টি’ হলের ম্যানেজার সজল মুখার্জী জানিয়েছেন, ভিড় ভালোই হচ্ছে। প্রথম সপ্তাহে ভালোই হয়েছে। দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথম দিকেও ভালোই হয়েছে। এবার একটু কমেছে। তৃতীয় সপ্তাহেও চলবে। ১৫০-২০০ টিকিট প্রতি শোতে বিক্রি হয়েছে। এখন ৭০-৮০ টা করে হচ্ছে। এই হলে ৭৭২ টি আসন। দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ১ টা শো চলেছে। শুক্রবার তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ২ টো শো চলছে। বর্ধমানের আইনক্স -এর এক কর্মী জানিয়েছেন, এখানেও ‘প্রজাপতি’ ভালোই চলছে। প্রথম সপ্তাহে হাউসফুল। দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ দিকে হাউসফুল না হলেও চাহিদা আছে। চারটে করে শো চলেছে। শুক্রবার থেকে প্রতিদিন ৫ টা শো শুরু হয়েছে। চাহিদার জন্য শো বাড়ছে। কালনার এস ভি এফ -এর মালিক সুরজিৎ মুখার্জী জানিয়েছেন, প্রজাপতি-র বেশ ভালো সাড়া। প্রথম দিকে তো খুবই ভালো ছিল। এখনও ভালোই আছে। প্রথম ২ সপ্তাহ ২ টো শো চলেছে। তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ৩ টে করে শো চলছে। প্রায় ৮০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এখানে ৯৯ টা আসন। সুরজিৎ মুখার্জী জানিয়েছেন, এখন কালনা শহরে খাদ্য পিঠে-পুলি মেলা চলায় সন্ধ্যার পর কিছু মানুষ ওখানে যাচ্ছেন, তাও ভালোই মানুষ হলে আসছেন। এদিকে, অভিজিৎ সেন পরিচালিত ‘প্রজাপতি’ বর্ধমানে রীতমত ভালো বাজার পাওয়ায় কুণাল ঘোষকে সিনেমা নিয়ে মুখ বন্ধ করার আবেদন জানিয়ে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সুধীররঞ্জন সাউ জানিয়েছেন, সিনেমা সিনেমার জায়গায় থাক। তাতে নোংরা রাজনীতি ঢুকিয়ে কুণাল ঘোষ যা করতে চেয়েছিলেন সাধারণ মানুষ তার যোগ্য জবাব দিয়েছেন।