E Purba Bardhaman

তৃণমূলের অত্যাচারের অভিযোগ নিয়ে ছেলেমেয়েদের সাথে জেলাশাসকের অফিসে ধর্ণায় বসলেন বৃদ্ধা

The old woman sat on a dharna with her children at the district magistrate's office to seek redress for the Trinamool's torture.

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- প্রায় চার বছর ধরে লাগাতার প্রশাসনের দরজায় কড়া নাড়িয়েও কোনো ফল না পাওয়া এবং খোদ রাজ্যপালের দরবারে অভিযোগ জানিয়েও কোনো সুরাহা না পাওয়া মেমারীর দেবীপুর অঞ্চলের হেতমপুর গ্রামের কংগ্রেসি এক পরিবার ফের হত্যে দিলেন জেলাশাসকের দরবারে। চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল বর্ধমানের রাজপথে রাস্তায় গড়াগড়ি দিতে দিতে জেলাশাসকের কাছে তৃণমূলের অত্যাচারের বর্ণনা দিতে এসেছিলেন বৃদ্ধা সেখ কোহিনুর সেখের দুই ছেলে। মা কোহিনুর সেখ এবং অবিবাহিত বোনকে নিয়ে তাঁরা এসেছিলেন সুরাহা চাইতে। কিন্তু বছর গড়িয়ে গেলেও আজও কোনো সুরাহা না মেলায় ফের বৃহস্পতিবার তাঁরা এলেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের কাছে। বৃদ্ধা কোহিনুর সেখ জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী প্রয়াত সেখ নুর ইসলাম কংগ্রেস করতেন। তিনি জীবিত থাকাকালীন তাঁর দুই মেয়ের বিয়ে হয়। বর্তমানে বিবাহযোগ্য আরও একটি মেয়ে রয়েছে। রয়েছে তাঁর দুটি পুত্র সন্তানও। গত প্রায় বছর কয়েক ধরেই তাঁর ছোট মেয়ের বিয়ে দেবার জন্য চেষ্টা করছিলেন। সেজন্য তাঁর জমি বিক্রির প্রয়োজন পড়ে। সেই জমি (পুকুর-সহ মোট প্রায় ১১ বিঘা) বিক্রি করতে গিয়ে বিএলআরও দপ্তরে গিয়ে জানতে পারেন তাঁদের জমির কোনো রেকর্ড নেই। ওই দপ্তর থেকে সমস্ত নথি লোপাট করা হয়েছে। এরপরই তৃণমূলের নেতারা তাঁর বাড়ির ওপর চড়াও হয়। তাঁর বড় ছেলে বাজান সেখকে বেধড়ক মারধর করা হয়, কেড়ে নেওয়া হয় স্বাস্থ্যসাথী কার্ড, রেশন কার্ড। এর ফলে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে রেশন পাচ্ছেন না। এব্যাপারে জেলা ও ব্লক স্তরের সমস্ত প্রশাসনিক অধিকারিকদের কাছে আবেদন করলেও কোনো ফল হয়নি। বাধ্য হয়ে তাঁরা কলকাতার রাজভবনের সামনে ধর্ণায় বসেন, কিন্তু পুলিশ সুকৌশলে তাঁদের সেখান থেকে তুলে দেয়। শুধু এটাই নয়, এই অবস্থায় এলাকারই কিছু তৃণমূলের নেতা তাঁর মেয়ের বিয়ে ভেঙে দিতে শুরু করেছে। যেখানেই যোগাযোগ করা হচ্ছে সেখানেই তৃণমূলের নেতারা বিয়ে ভেঙে দিচ্ছে। কোহিনুর সেখের ছোট ছেলে জীবান সেখ জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা কংগ্রেস পার্টি করেছেন। কিন্তু বর্তমানে তাঁদের পাশে কংগ্রেসের নেতারা সেভাবে দাঁড়াননি। তাই তিনি বিজেপির কাছে গিয়েছিলেন সাহায্য প্রার্থনার জন্য। আর এজন্যই তাঁদের ওপর চড়াও হয়েছে তৃণমূলের নেতারা। তাঁদের প্রায় ১১ বিঘে জমির চাষ বন্ধ করে দিয়েছে। গতবার হিমঘরে রাখা প্রায় ৪০ কুইন্টাল আলুও তাঁদের বিক্রি করতে দেওয়া হয়নি। আলুর বণ্ড জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাঁদের কাছ থেকে। কোহিনুর সেখের মেয়ে সেখ মুমতাজ জানিয়েছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। আর তাঁরই দলের নেতারা তাঁদের ওপর এই বছরের পর বছর ধরে অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ, প্রশাসন সব জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সেখ মুমতাজ জানিয়েছেন, তিনি বিয়ে করতে চান, সংসার করতে চান। এটা কি তাঁর অপরাধ? উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারও এই ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয় পতাকা নিয়ে জেলাশাসকের অফিসে আসেন বৃদ্ধা কোহিনুর সেখের পরিবার। যা নিয়ে রীতিমতো কৌতূহল এবং চাঞ্চল্য ছড়ায়। এদিকে, এব্যাপারে তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিত দাস জানিয়েছেন, এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ। ওই পরিবার কেন থানায় যাচ্ছেন না? তাঁর কাছে যদি এব্যাপারে কোনো প্রমাণ থাকে তিনি তৃণমূল দলেও জানাতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তাঁরা নাটক করছেন। প্রসেনজিত দাস জানিয়েছেন, তৃণমূল দলের কাছে অভিযোগ জানালে, যদি কোনো তৃণমূলের নেতা বা কর্মী যুক্ত থাকে তাহলে দল যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। একইসঙ্গে প্রশাসনের কাছে নির্দিষ্ট অভিযোগ জানালে প্রশাসনও ব্যবস্থা নেবে।

Exit mobile version