E Purba Bardhaman

দুর্নীতি রোধে ভুয়ো জবকার্ড বাতিলের উদ্যোগ, জেলা জুড়ে গুচ্ছ প্রকল্পের কাজ শুরুর নির্দেশ

Press Conference - Vijay Bharti, District Magistrate, Purba Bardhaman. The order to cancel the false MGNREGS job card to prevent corruption across the Purba Bardhaman district

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সাম্প্রতিক সময়ে কাটমানি নিয়ে গোটা জেলা জুড়েই প্রতিদিন কোথাও না কোথাও চলছে ঘেরাওভাঙচুরের ঘটনা। বস্তুতমুখ্যমন্ত্রীর কাটমানির টাকা ফেরত দেবার নির্দেশ দেবার পর শাসকদলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের লোকেরাও শাসকদলের নেতাদের কোণঠাসা করতে হাতে অস্ত্র পেয়ে গেছেন। আর তার জেরেই চলছে লাগাতার ঘেরাওভাঙচুরশারীরিক হেনস্থা করার ঘটনাও। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাটমানি কাণ্ডে উঠে আসছে ১০০ দিনের কাজ এবং বাংলা আবাস যোজনা নিয়ে দুর্নীতির বিষয়। আর তাই সরকারী এই সমস্ত প্রকল্পগুলিকে আরো আইনী কড়া বাঁধনে বাঁধার কাজ শুরু করে দিল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। এর জেরেই পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও ১০০ দিনের কাজে ভূয়ো জব কার্ড বাতিলের নির্দেশ সহ কর্মদিবস সৃষ্টিতে জোর না দিয়ে প্রকৃত চাহিদা সম্পন্ন মানুষকেই ১০০ দিনের কাজ দেবার নির্দেশ দিলেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী। জেলাশাসক জানিয়েছেনবিগত দিনগুলিতে পূর্ব বর্ধমান জেলা অন্যান্য জেলার তুলনায় কর্মদিবস সৃষ্টিতে রেকর্ড করেছে। একইসঙ্গে মাথা পিছু ব্যয়েও রেকর্ড করেছে। কিন্তু এটাই লক্ষ্য নয়। এবছর তাঁদের লক্ষ্য প্রকৃত মানুষকে কাজ দেওয়া এবং সম্পদ সৃষ্টি করা। তিনি জানিয়েছেনএকইসঙ্গে ভূয়ো জবকার্ড দ্রুত বাতিল করে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে জবকার্ডের জন্য আবেদন করেও পাননি তাঁদের জবকার্ড দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক জানিয়েছেনদেখা গেছেবহু মানুষ সরকারী সুযোগ সুবিধা পাবার জন্য জবকার্ড করিয়ে রেখেছেন। কিন্তু তাঁরা কাজ করছেন না। আবার দেখা গেছে বিভিন্ন পঞ্চায়েতে নতুন জবকার্ডের জন্য আবেদন করা হলেও তাঁদের সেই কার্ড দেওয়া হয়নি। তিনি জানিয়েছেনপূর্ব বর্ধমান জেলায় মোট জব কার্ডধারীর সংখ্যা প্রায় ৯ লক্ষ। তিনি জানিয়েছেনরাজ্যের মধ্যে প্রথম পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রথম জুলাই মাস থেকে চালু হচ্ছে পরিষেবা সপ্তাহ। সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে বিভিন্ন এলাকায় শিবির করে এলাকার মানুষের সমস্যা শোনা এবং সম্ভব হলে সঙ্গে সঙ্গে তা নিষ্পত্তির জন্যই এই পরিষেবা সপ্তাহ চালু করা হচ্ছে। এরফলে সাধারণ মানুষ অনেক বেশি সরকারী প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা পেতে পারবেন। তিনি জানিয়েছেনকোন্ কোন্ পঞ্চায়েতে জবকার্ড নিয়েও কাজ করেনি তার হিসাব নিকাশ করে ভূয়ো কার্ড বাতিল করা হবে। প্রসঙ্গতউল্লেখ্যসম্প্রতি কাটমানি নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে সেই অভিযোগে রয়েছে ১০০ দিনের কাজও। একই পুকুরকে দুবার কাটানো হয়েছে দেখিয়ে আবার কোথাও পুকুর না থাকলেও তা কাটানো হয়েছে দেখিয়ে টাকা নেওয়ার মত অভিযোগ সামনে এসেছে। তাই কেন্দ্রীয় সরকার এই দুর্নীতি রোধে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকদফা নয়া নির্দেশিকা পাঠিয়েছে। সেক্ষেত্রে মাটির কাজ কম করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে সম্পদ সৃষ্টির ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে। বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নদী সংস্কারের ওপর। জেলাশাসক জানিয়েছেনতিনি পূর্ব বর্ধমান জেলায় দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর সমস্ত সরকারী প্রকল্প ধরে ধরে খতিয়ে দেখেছেন। তাতে দেখা গেছে এই জেলার বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত সরকারী প্রকল্পের কাজের ক্ষেত্রে চুড়ান্ত অনীহা প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে অনিচ্ছা‘ কথাটি লেখা হয়েছে। জেলাশাসক জানিয়েছেনকেন আনউইলিং তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। পঞ্চায়েত প্রধান কাজ না করতেই পারেন। তাহলে তিনি ছুটি নিন কিংবা দায়িত্ব ছাড়ুন। তাঁর ইচ্ছা বা অনিচ্ছার জন্য সাধারণ মা্নুষ কেন কাজ পাবেন না – এটা কখনই বরদাস্ত করা হবে না। এব্যাপারে জেলার সমস্ত আধিকারিকদের নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। তিনি জানিয়েছেনবাংলা আবাস যোজনা ও গীতাঞ্জলী প্রকল্পে অনেক উপভোক্তাই টাকা নিয়েও বাড়ি তৈরী করেননি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এরই পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেনপূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রতিটি সরকারী দপ্তরের আধিকারিকদের সপ্তাহের প্রতি সোমবার নিজের নিজের দপ্তরে বসেই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সমস্ত ধরণের গ্রিভেন্স বা অভিযোগ গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেনপ্রতি সোমবার সেই সমস্ত অভিযোগ গ্রহণ করার পর মঙ্গলবার তা পরীক্ষা করে দেখে বুধবারই তাঁরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। জেলাশাসক জানিয়েছেনএই কর্মসূচী ধারাবাহিকভাবেই চলবে। উল্লেখ্যলোকসভা নির্বাচনে বিজেপির উত্থানকে সামনে রেখেই রাজ্য সরকার সরকারী প্রকল্পের সুযোগ ও সুবিধা আরও বেশি করে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত যাতে প্রকৃত মানুষের কাছে পৌঁছায় সেজন্য ইতিমধ্যেই প্রতিটি জেলায় জেলায় নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও একগুচ্ছ প্রকল্পের কাজে হাত দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বিশেষত১০০ দিনের কাজের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে নার্সারী ও চারা রোপনপ্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের অধীন পোলট্রি ফার্ম তৈরী করাপ্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে সলিড লিকুইড ওয়েষ্ট ম্যানেজমেণ্ট তৈরী করা এবং প্রতি ব্লকে কমপক্ষে একটি করে খেলার মাঠ তৈরীর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক জানিয়েছেনখুব শীঘ্রই তাঁরা মিড ডে মিল তৈরীর জন্য একটি কেন্দ্রীয়ভাবে রান্নাঘর তৈরী করতে চলেছেন। এব্যাপারে বাইরে থেকে উন্নতমানের মেশিন নিয়ে আসা হবে। মেশিনের মাধ্যমে খাবার তৈরী করে তা বিভিন্ন আইসিডিএস সেণ্টার এবং স্কুলে স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

Exit mobile version