বিপুন ভট্টাচার্য, গলসী (পূর্ব বর্ধমান) :- গোটা দেশ যখন প্রয়াত লোকসভার স্পীকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের শোকে মূহ্যমান, তখন বাদ রইল না পূর্ব বর্ধমানের গলসী থানার পুরষা গ্রামের মানুষজনও। কারণ আজ থেকে প্রায় ৯ বছর আগেই দেবদূতের মতই এই পুরষা গ্রামের পুরষা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হাজির হয়েছিলেন সোমনাথবাবু। সমৃদ্ধ করে দিয়ে যান পুরষা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে। গলসীর এই পুরষা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীদের কাছ থেকে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৫ নভেম্বর বোলপুর থেকে কলকাতার পথে স্ত্রী রেণুকা চট্টোপাধ্যায়কে রওনা দিয়েছিলেন জাতীয় সড়ক দিয়ে। পথে পানাগড় অতিক্রম করতেই স্ত্রী রেণুকাদেবী শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন। দ্রুত তাঁর চিকিত্সা করানো দরকার ছিল। পথেই রাস্তার বাম পাশে পুরষা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে দেখে দ্রুততার সঙ্গে স্ত্রীকে সেখানে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিত্সার উদ্যোগ নিয়েছিলেন সোমনাথবাবু। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, তাই সেখানে ছিল না আধুনিক কোনো যন্ত্রও। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই অভাব তিনি চোখে দেখেছিলেন। যদিও সেই সময় ব্লক মেডিকেল অফিসার শ্যামল কুমার বিশ্বাস। তিনি সাধ্যমত চেষ্টা করেন আধুনিক যন্ত্র ছাড়াই। বেশ কিছুক্ষণ সেবা শ্রুশ্রুষার পর কিছু সুস্থ ও স্বাভাবিক হলে স্ত্রীকে নিয়ে রওনা দেন সোমনাথবাবু। কিন্তু সেদিনের সেই ঘটনা তিনি ভুলতে পারেননি। কিভাবে কোনো আধুনিক যন্ত্র ছাড়াও সেদিন প্রাথমিক ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিত্সক তাঁর চিকিসা করিয়েছিলেন। হয়ত সেই প্রাথমিক চিকিত্সার জন্যই কোনো অঘটন ঘটেনি রেণুকাদেবীর। বোধহয় সোমনাথবাবুও সেই উপলব্ধি করেছিলেনও। তাই ২০০৯ সালে ১৩ জানুয়ারি সপরিবারে সোমনাথবাবু ফের পুরষার ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেআসেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। একটি জেনেরেটর এবং রক্তের শর্করা মাপার যন্ত্র গ্লুকো মিটার। তিনি আর নেই। কিন্তু রয়ে গেছে পুরষায় সেই প্রাথমিক চিকিত্সার উপকরণ। সোমবার সকালে যখন সোমনাথবাবুর মৃত্যু সংবাদ এসে পৌঁছেছিল গলসীতে তখন পুরষার মানুষ গভীর শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিলেন। অনেকেই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটে গেছেন সোমনাথবাবুর দান করা সেই মেশিনপত্র দেখতে।