E Purba Bardhaman

গলসীর রাস্তা খারাপ নিয়ে সাংসদের ক্ষোভ নিয়ে চাপান-উতোর শুরু

The protest has started with the method of expressing the anger of MPs about the bad road in Galsi.

গলসী (পূর্ব বর্ধমান) :- গলসীর মনোহর সুজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গলিগ্রাম লকগেট পর্যন্ত ২.২ কিমি বেহাল রাস্তা নিয়ে মঙ্গলবার রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের সাংসদ কীর্তি আজাদ। এমনকি তাঁর এই রাস্তা পরিদর্শনের সময় হাজির থাকা পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের পকেটে পাথর ঢুকিয়ে দিয়ে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন। আর এই ঘটনাকে নিয়ে গোটা জেলা জুড়ে রীতিমতো হইচই শুরু হয়ে গেল। বুধবার এই প্রসঙ্গে খোদ পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার জানিয়েছেন, সাংসদ জেলা পরিষদের সম্মানীয় আমন্ত্রিত সদস্য। কিছু বলার আগে তাঁর জেলা পরিষদ থেকে তথ্য জেনে নেওয়া উচিত ছিল। ইঞ্জিনিয়ারের পকেটে পাথর পুড়ে দেবার মধ্য দিয়ে তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত করার বিষয়টি তিনি সমর্থন করেন না বলে জানিয়েছেন সভাধিপতি। উল্লেখ্য, পথশ্রী প্রকল্পে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই রাস্তার কাজ করা হয়। যদিও এব্যাপারে স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তা চলাচলের অযোগ্য থাকার পর গ্রামবাসীরা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী – ফোন নাম্বারে অভিযোগ জানান। তারপরই জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে পথশ্রী প্রকল্পে এই রাস্তাকে অন্তর্ভুক্তি করা হয়। ৯৭ লক্ষ টাকা বাজেট বরাদ্দ হয়। গত মে মাসেই এই রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ হয়। জানা গেছে, ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে সিংহভাগ টাকা দেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু ২ মাস যেতে না যেতেই রাস্তা বেহাল হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা গোটা বিষয়টি সাংসদ কীর্তি আজাদকে জানালে তিনি মঙ্গলবার বিকালে ওই রাস্তা পরিদর্শনে যান। রাস্তার এই বেহাল অবস্থা নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হন তিনি। উপস্থিত অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের পকেটে বেহাল রাস্তার স্টোন চিপস ভরে দিয়ে সাংসদ বলেন, আপনার সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারকে বলবেন এটা দেখতে এবং তিনি এটা নিয়ে কি করবেন সেটা ভাবতে। এটা কি তার চোখে পড়েনি? এরপর ক্ষুব্ধ সাংসদের প্রশ্ন, অভিযোগ পেয়ে একজন সাংসদ আসতে পারেন আর এক্সকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার আসতে পারেন না? এখানে ১০০ শতাংশ দুর্নীতি হয়েছে বলেও তিনি এদিন সরব হন। সাংসদ বলেন, দিদির সরকার গ্রামের মানুষের জন্য কাজ করছেন, এতো ভালো ভালো প্রকল্প করছেন, আর মানুষকে এইভাবে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমি জেলাশাসককে চিঠি দেবো এবং এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলবো। একই সাথে ওই সংস্থাকে দিয়েই এই রাস্তা ঠিক করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলবো। এদিকে, মঙ্গলবার একেবারে সাংসদের এই কড়া অবস্থানে খুশি গ্রামবাসীরা জানান, ৮৩ সালের মতোই ফুল ফর্মে আছেন সাংসদ কীর্তি আজাদ। তাঁর এই কড়া অবস্থানে আমাদের দাবি দ্রুত পূর্ণ হবে বলেই আমরা আশা করছি। আর মঙ্গলবার কীর্তি আজাদের এই মন্তব্যকে ঘিরেই রীতিমতো চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার জানিয়েছেন, ওই রাস্তা তৈরির পর তা ২ মাসের মধ্যেই খারাপ হওয়ার অভিযোগ আসতেই তাঁরা কড়া ব্যবস্থা নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার-সহ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে তাঁরা বৈঠক করেছেন। ঠিকাদারের পেমেন্ট আটকে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু বর্ষা নেমে গেছে, তাই ঠিকাদার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বর্ষার পরই রাস্তা ঠিক করে দেবেন। সভাধিপতি জানিয়েছেন, যেহেতু জেলা পরিষদের অধীনে এই রাস্তা, তাই সাংসদ জেলা পরিষদের সঙ্গে কথা বলে নিলে ভাল করতেন। একইসঙ্গে অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের পকেটে স্টোন চিপস ভরে দেওয়া প্রসঙ্গে শ্যামাপ্রসন্ন লোহার জানান, কারও আত্মসম্মানে আঘাত করা তিনি সমর্থন করেন না। তিনি জানান, যদি কোনো ঠিকাদার কাজ ঠিকভাবে না করেন তাহলে তাঁর পেমেন্ট আটকে দেওয়া, তাঁকে ব্লাক লিস্টেড করার মত পদক্ষেপ নেন তাঁরা। এমনকি দপ্তরের কর্মীদেরও শাস্তি দেওয়া হয় বিভিন্ন ভাবে। কিন্তু কারও আত্মসম্মানে আঘাত করে নয়। অপরদিকে, এব্যাপারে সুর চড়িয়েছে বিজেপি। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র জানিয়েছেন, গোটাটাই কাটমানির খেলা। ওই রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে মোটা টাকা কাটমানির খেলা হয়েছে। সাংসদ যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তাকে স্বাগত জানালেও যারা কাটমানি খেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সাংসদ কী ব্যবস্থা নেন সেটাই দেখার। তাহলেই বোঝা যাবে সাংসদ নাটক করছেন নাকি সত্যিই মানুষের জন্য কাজ করছেন। মৃত্যুঞ্জয়বাবু জানিয়েছেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করছেন, বাংলায় সমস্ত কাজেই এই কাটমানির খেলা চলছে। মানুষ ভুগছে। মনোহর সুজাপুরের এই রাস্তার বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে তাঁদের সেই অভিযোগই দেখিয়ে দিয়েছে।

Exit mobile version