বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- আগামী আগষ্ট মাস থেকেই বর্ধমান শহরের যানজট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে চলেছে জেলা পুলিশ। গোটা শহর কার্যত টোটোর দখলে চলে যাওয়ায় এবং কার্যত প্রতিদিনই এব্যাপারে প্রশাসনের কর্তাদের কাছে নানাভাবে অভিযোগ জমা পড়তে শুরু করায় এবার বড়সড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বর্ধমান শহরের যানজটের মূল কারণ ছিল একদা রিক্সা। পুরসভা অনুমোদিত রিক্সা ছাড়াও ছিল নাম্বারপ্লেট হীন কয়েক হাজার রিক্সা। তার সঙ্গে ছিল আশপাশের পঞ্চায়েত এলাকা থেকে আসা রিক্সার দাপট। রীতিমত রিক্সার দাপটে নাজেহাল হয়ে উঠেছিল বর্ধমানের মানুষ। সম্প্রতি ব্যাটারি চালিত ইকো রিক্সার রমরমায় বাজার থেকে কার্যত উধাও হতে শুরু করেছে রিক্সা। পরিবর্তে পুরসভা অনুমোদিত টোটো ছাড়াও অবৈধ হাজার খানেক টোটো এখন রিক্সার মতই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহরে। ফলে প্রতিদিনই নানাবিধ অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। আর এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নবাগত পুলিশ সুপার নতুন করে যানজট মোকাবিলার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে সোমবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং হাসপাতাল লাগোয়া রাস্তাগুলি তিনি নিজে খতিয়ে দেখেন। এরপর তিনি বর্ধমা্নের জেলখানা মোড় এলাকা দেখেন। এখানেই একটি বেসরকারী মার্কেট কমপ্লেক্স এবং সিনেমা হলকে কেন্দ্র করে কার্যত রাস্তা চলে গেছে হকারদের দখলে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আগামী আগষ্ট মাস থেকেই এই রাস্তার জবরদখল উচ্ছেদের পথে হাঁটতে চলেছে জেলা পুলিশ। সাধারণ মানুষকে ন্যূনতম চলাফেরা করতে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নিতে চলেছে জেলা পুলিশ। এরইসঙ্গে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিবেশকে সুস্থ ও স্বাভাবিক করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে চলেছে জেলা প্রশাসন। সোমবার জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ডিএসপি (ট্রাফিক) প্রদীপ মণ্ডল, ডিএসপি (হেড কোয়ার্টার) চন্দন ঘোষ প্রমুখরা বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনও করলেন। দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল হাসপাতালে যত্রতত্র পার্কিং-এর ফলে হাসপাতালের রোগীরা চরম সমস্যায় পড়েন। হাসপাতালে চিকিত্সক নিগৃহের ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। এমনকি হাসপাতাল সংলগ্ন রাস্তার দুপাশে এ্যাম্বুলেন্স সহ একাধিক গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় রীতিমত যানজটের শিকার হন সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতি থেকে বেড়িয়ে আসতে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকেও দফায় দফায় নানাবিধ আলোচনা হয়। গত শুক্রবারও জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের উপস্থিতিতে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে এব্যাপারে সদর্থক ভূমিকা নেবার বিষয়ে জোরদার আলোচনা হয়। আর তারপরেই জেলা পুলিশ সুপার হাসপাতালের যানজট মোকাবিলায় সোমবার কয়েকটি নির্দেশও দিয়ে গেলেন। জেলা পুলিশ সুপার এদিন জানিয়েছেন, হাসপাতালের মোট ২৯২জন নিরাপত্তা রক্ষীর মধ্যে ৮৪জন রয়েছেন বিশেষ কমাণ্ডার গ্রুপ নামে একটি ঠিকাদার সংস্থার অধীনে। হাসপাতালের অভ্যন্তরে চিকিত্সকদের সঙ্গে রোগীদের প্রায়শই সংঘর্ষ, মারপিটের ঘটনায় এবার থেকে এই ৮৪জন নিরাপত্তারক্ষীর হাতেই বিশেষ দায়িত্ব দেবার কথা জানিয়েছেন তিনি। এব্যাপারে দুদফায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ওই ৮৪জন নিরাপত্তারক্ষীকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেবার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। অন্যদিকে, হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশকে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশকে হাসপাতালের বাইরের শ্যামসায়রের রাস্তায় যানজট মোকাবিলায় কড়া পদক্ষেপ নেবার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, হাসপাতালের লাগোয়া শ্যামসায়রের রাস্তায় কোনোরকম পার্কিং চলবে না। মোটরবাইকও পার্কিং করা যাবেনা। পার্কিং করলেই পুলিশ তা বাজেয়াপ্ত করবে। তিনি জানিয়েছেন, হাসপাতালের জরুরী বিভাগের গেট সংলগ্ন যে এ্যাম্বুলেন্স পার্কিং এলাকা রয়েছে তা গেট থেকে ৫০ ফুট দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং এ্যাম্বুলেন্সগুলিকে রাস্তা ছেড়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আগামী আগষ্ট মাস থেকেই এই ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে। এছাড়াও হাসপাতালের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা, নিরাপত্তারক্ষীদের পরিচয়পত্র ঝোলানো বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।