E Purba Bardhaman

অস্ত্রোপচারের পর কিশোরের দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঘটনায় রাজ্য ও জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায় খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট

The Supreme Court dismissed the judgment of the State and National Consumer Protection Court in the case of the loss of eyesight of a teenager after cataract surgery.

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ছানি অস্ত্রোপচারের পর ১৩ বছরের কিশোরের ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঘটনায় রাজ্য ও জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায় খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। বহাল রাখল জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়। জেলা ক্রেতা আদালতের রায় অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি বিক্রম নাথ ও বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মাকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ। তার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিপূরণ আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জেলা ক্রেতা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে।
জেলা ক্রেতা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালের ১৪ নভেম্বর বর্ধমানের শাহাজাদপুরের বাসিন্দা নজরুল শেখের ছেলে ইশাব শেখ আরও কয়েকজনের সঙ্গে খেলা করছিল। সেই সময় তার মাথা ইটের দেওয়ালে ঠুকে যায়। তাতে সে গুরুতর জখম হয়। তার ডান চোখেও আঘাত লাগে। চোখ লাল হয়ে যায়। চোখে অস্বস্তি অনুভব করে সে। নজরুল অত্যন্ত দরিদ্র। তা সত্ত্বেও পরেরদিন তিনি উত্তর ২৪ পরগণার বারাকপুরের একটি নামি চক্ষু হাসপাতালে ছেলেকে নিয়ে যান। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর জানানো হয়, তাঁর ছেলের ট্রমাটিক ক্যাটারাক্ট হয়েছে। তার জন্য ছোট অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। অস্ত্রোপচারের জন্য ১০ হাজার টাকা লাগবে বলে জানানো হয়। কিন্তু, নজরুলের পক্ষে সেই টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না। সে জন্য তিনি বর্ধমান শহরের জেলখানা মোড় এলাকার একটি চক্ষু ক্লিনিকে যান। সেখানে এক নামি চিকিৎসক ২৪ নভেম্বর তার অস্ত্রোপচার করেন। অস্ত্রোপচারের পর ইশাবের চোখের পরিস্থিতি খারাপ হয়। তার চোখে রক্ত জমাট বাঁধে। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়। তাকে ফের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি আরও কিছু ওষুধ লিখে দেন। যদিও তাতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এরপর ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল ইশাবকে কলকাতার রিজিউনাল ইন্সটিটিউট অব অপথালমোলজিতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা করে চিকিৎসক জানান, ইশাব ডান চোখের দৃষ্টি সম্পূর্ণভাবে হারিয়েছে। দৃষ্টিশক্তি হারানোর জন্য ভুল অস্ত্রোপচারকে দায়ী করা হয়। বিষয়টি জানার পর অভিযুক্ত চিকিৎসক ইশাবের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়। পঞ্চায়েত প্রধান ও অন্যান্য মেম্বারদের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত চিকিৎসক ক্ষতিপূরণ বাবদ ইশাবকে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়। যদিও এই দয়ার দান নিতে রাজি হয়নি তার পরিবার। ক্ষতিপূরণ পেতে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন নজরুল। ২০১৩ সালের ১৬ মে উদয়ন মুখোপাধ্যায় ও শিল্পী মজুমদারকে নিয়ে গঠিত জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বেঞ্চ ক্ষতিপূরণ বাবদ চিকিৎসককে ৯ লক্ষ টাকা, মামলা চালানোর জন্য ৫ হাজার টাকা এবং ক্রেতা ওয়েলফেয়ার ফান্ডে ৫০ হাজার টাকা জমা করার নির্দেশ দেয়। রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় ক্রেতা আদালত। অন্যথায় ক্ষতিপূরণের টাকার উপর ১০ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হবে বলে রায়ে জানানো হয়। জেলা ক্রেতা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য ক্রেতা আদালতের দ্বারস্থ হন অভিযুক্ত চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। জেলা ক্রেতা আদালতের রায়কে খারিজ করে দেয় রাজ্য ক্রেতা আদালত। তার বিরুদ্ধে জাতীয় ক্রেতা আদালতের দ্বারস্থ হন নজরুল। জাতীয় ক্রেতা আদালতের রায়ও তাঁর বিপক্ষে যায়। এরপরই তিনি সুপ্রিম কোর্টে সিভিল অ্যাপিল ফাইল করেন। সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জেলা ক্রেতা আদালতের রায় বহাল রাখে এবং রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে রায় কার্যকর করার জন্য নির্দেশ দেয়। বিচারপতিরা রায়ে উল্লেখ করেছেন, রাজ্য এবং জাতীয় ক্রেতা আদালত চিকিৎসকের ত্রুটি খুঁজে পায়নি। উল্টে অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসকের পরামর্শ না মেনে একমাস পর রিজিওনাল ইন্সটিটিউট অব অপথালমোলজিতে চিকিৎসা করাতে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ না মানাকেই কিশোরের দৃষ্টিশক্তি হারানোর ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে মেনে নেয় রাজ্য ও জাতীয় আদালত। যদিও সেই যুক্তি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতিরা। তাঁদের মতে, জেলা ক্রেতা আদালতে এক চিকিৎসক গাফিলতির বিষয়ে যে মতামত দিয়েছিলেন তা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হয়েছে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আরএমও তথা ক্লিনিক্যাল টিউটর যে মতামত দিয়েছেন তা উপেক্ষা করা হয়েছে। জেলা ক্রেতা আদালতের রায়ে উল্লিখিত পর্যবেক্ষণের বেশকিছুটা অংশ তুলে ধরা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে।

Exit mobile version