E Purba Bardhaman

শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বাংলায় দুর্নীতি হয়েছে, নির্দোষদের সবরকমের আইনি সহায়তা দেবে বিজেপি – নরেন্দ্র মোদি

There has been corruption in Bengal regarding the appointment of teachers, BJP will provide all legal assistance to the innocent - Narendra Modi

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বাংলায় চরম দুর্নীতি হয়েছে, কিন্তু অনেক নির্দোষ ফেঁসে গেছেন। এব্যাপারে বাংলার বিজেপি নেতাদের বলেছি তাঁদের আইনি সহায়তা দেবে। তাঁরা সমস্ত প্রমাণ, কাগজ নিয়ে দেখা করুক। তাঁদের জন্য আইনি লড়াইয়ের সবরকমের সহযোগিতা করবে বিজেপি। তাঁদের সুবিচার দিতে পুরো শক্তি নিয়োগ করবে বিজেপি। যে অন্যায় করেছে সে ভুগবে। তৃণমূল সব জায়গায় লুঠপাট চালাচ্ছে। শুক্রবার বর্ধমানের ঝিঙুটির কাছে সাই কমপ্লেক্সের মাঠে বর্ধমান-দুর্গাপুর এবং বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনে বিজয় সংকল্প সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এভাবেই রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে বিঁধে গেলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একইসঙ্গে এদিন তিনি আক্রমণ শানিয়েছেন ইন্ডিয়া জোটের বিরুদ্ধেও। মোদি বলেন, টিএমসি, কংগ্রেস বলছে মোদিকে লাঠি মার দো, গোলি মার দো। কিন্তু মোদি দাঙ্গাবাজদের সঙ্গে নেই। গরিবের জেদ অটুট। আমারও অটুট। যতই আমার বিরোধিতা করো। আমি হারছিনা। ত্রিপুরা ৫ বছরে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা বদলে দিয়েছে বিজেপি। তিনি বলেন, এরা একটাই পারে ভোটের জন্য সমাজকে ভাগ করো, দেশকে ভাগ করো। ধ্বংস করতে। মোদি এদিন বলেন, বাংলায় তৃণমূলের এক বিধায়কের বক্তব্য তিনি টিভিতে শুনেছেন। ওই বিধায়ক বলেছেন, হিন্দুদের হটিয়ে দেবো ২ ঘণ্টার মধ্যে। এ কোন ভাষা? বাংলায় হিন্দুরা কি অবস্থায় রয়েছেন? কি হচ্ছে বাংলায় হিন্দুদের সঙ্গে? হিন্দুদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে রাখা হয়েছে। সন্দেশখালিতে মহিলাদের ওপর অত্যাচার হয়েছে। শাহজাহান সেখকে আড়াল করছে। সন্দেশখালিতে অপরাধীদের রাজ্যের সরকার বাঁচাতে চাইছে। পুষ্টিকরণের রাজনীতি হচ্ছে। তিনি বলেন, ভোট ব্যাংক মানুষের থেকে বড় নাকি। তৃণমূল তোষণের রাজনীতি করে। ইন্ডিয়া জোট ভোট ব্যাংকের জন্য সমস্ত কিছু করতে পারে। কংগ্রেস চায় আপনাদের সম্পত্তি লুঠ করতে। বাম, তৃণমূল, কংগ্রেস ভোটের নামে বিভাজন করে সব সময়। দলিত ও আদিবাসীদের পিছিয়ে দিতে চায় কংগ্রেস। তাই সংরক্ষণ প্রথা চালিয়ে যেতে চাইছে। দলিত আর আদিবাসীরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধান জাতপাত, ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ দিতে বলে না। জন্মের ওপর সংরক্ষণ, ধর্মের ওপর সংরক্ষণ করতে চাইছে কংগ্রেস। দলিত, সংখ্যালঘুদের নিয়ে মিটিং করছে যাতে তাঁদের ভোট পায়, তাঁদের সংরক্ষণ জারি রাখতে পারে।
বিরোধীরা দেশকে ভাগ করার জন্য ভোটে লড়ছে। মোদি এদিন বলেন, কেন্দ্র সরকারের পাঠানো সমস্ত টাকা তৃণমূলের তোলাবাজরা লুঠ করে নিয়েছে। তৃণমূলের তোলাবাজরা সব জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে, টাকার হিসাব করতে গিয়ে মেশিন কাহিল হয়ে যাচ্ছে। এদিন মোদি বলেন, সন্দেশখালি নিয়ে কয়েকজন মহিলা একটা গান শুনিয়েছেন তাঁকে। বাংলায় গান হলেও সেই গানের আবেগে তাঁর চোখেও জল এসে গেছে। এদিন মোদি সবাইকে সেই গান শোনার জন্যও বলেন। এরপরই মোদির হুংকার কি করছে তৃণমূল? কেন্দ্রের সব প্রকল্পে টিএমসি তোলাবাজি করেছে। লুঠপাট করেছে। মোদির বিরুদ্ধে ভোট জিহাদ ঘোষণা করেছে। কংগ্রেস, সিপিএম, টিএমসি সব ভোট জিহাদের সমর্থক। তাই চুপ। মোদি যতদিন বাঁচবে কাউকে লুঠতে দেবে না। নাম না করেই এদিন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করেন মোদি। তিনি বলেন, উনি ভয়ে ভাগছেন৷ কোথাও নিশ্চিত আসন পাচ্ছে না। আমি বলেছিলাম ভোটে লড়তে ভয় পাচ্ছে। পালিয়ে বেড়াবে। রায়বেরিলিতে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে। আমেথিতেও রাস্তা হারিয়েছে। যদিও এদিন রায়বেরিলি আসনেই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন রাহুল। মোদি এদিন বলেন, আপনাদের সকলকে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। আপনারা এত আশীর্বাদ দিয়েছেন যে দুনিয়ার কেউ পাননি। ইশ্বররূপী জনতা জনার্দনের বছরের পর বছর এই আশীর্বাদ বেড়েই চলেছে। অনেকেই বলেন, অনেক হয়েছে এবার আরাম করুন। কিন্তু আমি দেশের সেবার জন্য নিজের জীবন দিতেও প্রস্তুত আছি। আমি ১৪০ কোটি ভারতবাসিকে সেবা করার জন্য আছি। আমার একটাই স্বপ্ন আপনাদের স্বপ্নকে পূরণ করা। আমার কিছু নেই। আমার আগে কেউ নেই পিছে কেউ নেই। আপনারাই আমার পরিবার, মেরা ভারত মেরা পরিবার। এদিন মোদির এই সভায় একজন একটি বড় রুদ্রাক্ষের মালা মোদিকে দিতে চাইলে তৎক্ষণাৎ তিনি লোক পাঠিয়ে ‘আর্শীবাদস্বরূপ’ তা গ্রহণ করেন। মোদি বলেন, বিকশিত ভারত তৈরির জন্য, আত্মনির্ভর ভারত নির্মাণের জন্য কাজ করছি দিনরাত। তিনি বলেন, দারিদ্র দেখলে আমার শৈশবের কথা মনে পড়ে। কারণ আমি শৈশবে দারিদ্র্য দেখে বড় হয়েছি। কিন্তু আমি চাই একজন ভারতবাসীও এই দারিদ্র্য নিয়ে না থাকেন। যখন আপনাদের সমস্যা, চিন্তিত হন। তখন আমার চিন্তা হয়। আগামী ৫ বছরে গরিবি দূর করার সংকল্প নিয়েছি। ধানে বর্ধমান আর শিল্পে দুর্গাপুরকে মানুষ যাতে চিনতে পারে সেজন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের ৩ কোটি মহিলাকে লাখপতি দিদি বানানোর সংকল্প নেওয়া হয়েছে। এদিন অন্যান্যদের মধ্যে এই সভায় উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনের প্রার্থী দিলীপ ঘোষ, বর্ধমান পূর্বের প্রার্থী অসীম সরকার, রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা প্রমুখরাও। উল্লেখ্য, এদিন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী আসার আগে এই ধরনের অভিযোগ তোলার পিছনে কোনো কারণ আছে কিনা দেখা দরকার। বাকি অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত হলেই বোঝা যাবে। অপরদিকে, এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে বর্ধমান পূর্বের প্রার্থী অসীম সরকার বলেন, মার আর খাবো না, এবার আমরা মার দেবো। আমরা আর মার খেয়ে হাসপাতালে থাকবো না। ৩ মাস হাসপাতালে থাকার থেকে মার দিয়ে ৩ মাস জেলে থাকবো।

Exit mobile version