বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- কাটমানি নিয়ে গোটা রাজ্য জুড়ে হৈচৈ শুরু হয়েছে এবং কার্যত বিজেপি এই কাটমানি কাণ্ড নিয়ে তৃণমূলকে কোণঠাসা করে তুলেছে। এরই মধ্যে এবার তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাল্টা কৌশল নেওয়ার অভিযোগ উঠল। ইতিমধ্যেই গোটা রাজ্যের পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়েও জায়গায় জায়গায় কাটমানি কাণ্ড নিয়ে তৃণমূল নেতাদের বাড়ি ঘেরাও, মুচলেখা লেখানো, বাড়ি ভাঙচুর, মারধর করারও অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। রীতিমত কোণঠাসা অবস্থায় পড়ে যাওয়া তৃণমূল কংগ্রেস এবার বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা পোষ্টার দেবার কৌশল নিতে শুরু করার অভিযোগ সামনে এল রবিবার। রবিবার সকালে বর্ধমান শহর এবং শহর লাগোয়া একটি এলাকায় হুমকি পোষ্টার দেবার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।বিজেপি করলে মাথা কেটে নেবো – সাদা কাগজে নীল কালিতে লেখা এই পোষ্টারকে ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ালো বর্ধমান শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বড়নীলপুর বটতলা এবং শক্তিগড় থানা এলাকার বাম এলাকায়। রবিবার সকালে বর্ধমান পুরসভার ১৩ নং ওয়ার্ডের বড়নীলপুর বটতলা এলাকায় চারজন বিজেপি সমর্থকের বাড়ির দেওয়ালে এই পোষ্টার দেখতে পাওয়া যায়। এরপরই ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দেয়। কে বা কারা এই পোষ্টার লাগিয়েছে তা নিয়ে সকাল থেকেই চাপান উতোর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা। বিজেপি নেতা শ্যামল রায়ের অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দূষ্কৃতিরা এই পোষ্টার লাগিয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন। কারণ বড়নীলপুর এলাকায় বিজেপি ক্রমশই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। আর এই বিজেপির উত্থানকে সহ্য করতে না পেরেই তৃণমূল এই উত্তেজনা ও আতংক ছড়ানোর জন্য এই ধরণের পোষ্টার লাগিয়েছে। শ্যামলবাবু জানিয়েছেন,শুধু বর্ধমান শহরেই নয় এদিন বাম গ্রাম এলাকাতেও একই ধরণের পোষ্টার দিয়ে আতংক সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে। অপরদিকে,এই ঘটনায় যাঁদের বাড়িতে পোস্টার লাগানো হয়েছে তাঁরা সকলেই এই ঘটনায় আতঙ্কিত বলে জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা উত্তম দে জানিয়েছে্ন, তাঁরা বিজেপি করেন বলেই ভয় দেখাতেই এবং আতংকগ্রস্ত করতেই রাতের অন্ধকারে তাঁদের বাড়ির দেওয়ালে এই পোষ্টার দেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি তাঁরা দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগেই এই বটতলা এলাকায় ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় তৃণমূল কর্মী পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে তৃণমূল। সেই ঘটনায় পুলিশ ৫জনকে গ্রেপ্তারও করে। বর্তমানে তাঁরা জেলা হেফাজতে রয়েছেন। এলাকার বাসিন্দাদের আরো অভিযোগ, এই ঘটনার পর বিজেপি সমর্থিত বাড়ির পুরুষরা অনেকেই ঘর ছাড়া। প্রায় প্রতিদিনই রাতে পুলিশ এসে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করছে। আতঙ্কে ঘরের পুরুষরা বাড়ি ঢুকতে পারছেন না। এলাকায় ফিরতে পারছেন না। যদিও এই হুমকি পোষ্টারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। তাঁদের বক্তব্য বিজেপি এই পোস্টার লাগিয়ে তাদের ওপর দোষ দিচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন, বিজেপি জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন ধরণের পোষ্টার দিয়ে আতংক ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইছে। শুধু বর্ধমান শহর নয়, অন্যান্য এলাকাতেও তারা সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এদিনের পোষ্টার সম্পর্কে স্বপনবাবু জানিয়েছেন,বিজেপিই পোষ্টার লাগিয়ে তৃণমূলের নামে চাপাতে চাইছে। তাঁরা গোটা বিষয়টির ওপর নজর রেখেছেন। অন্যদিকে, এদিন বাম গ্রামেও একইভাবে দুটি পোষ্টার পড়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এব্যাপারে শক্তিগড় থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। অপরদিকে, বিজেপি করায় বর্ধমান শহর লাগোয়া নেড়োদিঘী এলাকায় এক ব্যক্তির ওপর অত্যাচার করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। কাজল সেখ নামে আক্রান্ত ওই ব্যক্তি এই ঘটনায় বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। কাজল সেখ জানিয়েছেন, তিনি পেশায় লরী চালক। সম্প্রতি তিনি একটি জায়গা কিনে একটি বাড়ি তৈরী করেছেন। তাঁর পরিবারে একটি বিবাদ রয়েছে। সেই বিবাদের সূত্র ধরে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা তাঁকে সেই বিবাদ মিটিয়ে দেবার জন্য ৩ লক্ষ টাকা চায় তাঁর কাছ থেকে। কিন্তু তিনি তা দিতে না চাওয়ায় তাঁর বাড়ি চড়াও হয়ে তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রীকে ব্যাপক মারধর করা ছাড়াও বাড়ি ভাঙচুর করে লুঠপাট চালানে্া হয়েছে। তৃণমূলের নেতারা জানিয়েছেন, বিজেপি করলে এই এলাকায় থাকা যাবে না।