গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- নির্দোষ হয়েও আইনি জটিলতায় ছাড়া পাচ্ছে না তিন যুবক। প্রায় এক বছর ধরে বিনা বিচারে সংশোধনাগারে বন্দি রয়েছে তারা। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি পুলিস। তা সত্বেও দিনের পর দিন সংশোধনাগার থেকে তাদের আদালতে পেশ করা হচ্ছে। আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পুলিসের রিপোর্ট অনুযায়ী তারা নির্দোষ। বিচারক তাদের ব্যক্তিগত বন্ডে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু, তাদের হয়ে কেউ বন্ডও জমা দেয়নি। মঙ্গলবার তাদের ফের বর্ধমান সিজেএম আদালতে পেশ করা হয়। সরকারি আইনজীবী নারদ কমার ভূঁইঞা বিষয়টি সিজেএমের গোচরে আনেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন সিজেএম। যদিও ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মত আইনজীবীদের। আইনজীবী হরদীপ সিং আলুওয়ালিয়া বলেন, পুলিস আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট পেশ করার পরই ধৃতদের জামিন মঞ্জুর হওয়া উচিত ছিল। অযথা তিনজন জেল খাটছে। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। আইনবিরুদ্ধও বটে।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় রায়না থানার বাঁকুড়া মোড়ের রাইস মিলে ধান বিক্রি করে ১ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা নিয়ে ট্রাক্টরে চেপে ফিরছিলেন গণেশ থাণ্ডার ও পলাশ মাঝি। মঙ্গলকোট থানার বরাকরে তারা ফিরছিলেন। জাতীয় সড়ক ধরে ফেরার সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদবর্ধমান থানার গোদায় জাতীয় সড়কে ৪ বাইক আরোহী ট্রাক্টরটিকে আটকায়। ট্রাক্টরে থাকা গণেশ ও পলাশকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তাদের কাছে থাকা টাকা কেড়ে নেয় দুষ্কৃতিরা। তাদের মারধরও করা হয়। ট্রাক্টরের চাবি ও দু’জনের মোবাইল নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতিরা। ঘটনার বিষয়ে ধান্য ব্যবসায়ী শেখ গোলাম রসুল বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে পুলিস জানতে পারে, ছিনতাইয়ের ঘটনায় লালচাঁদ মল্লিক, তপন মাণ্ডি ও শেখ কুতুবউদ্দিন জড়িত। রায়না থানার বেলসরে কুতুবউদ্দিনের বাড়ি। বাকিদের বাড়ি খণ্ডঘোষ থানার উদয়কৃষ্ণপুরে। মাদক মামলায় তাদের আগেই গ্রেপ্তার করে পুলিস। ছিনতাইয়ের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পুলিস অবশ্য ধৃতদের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ ও তথ্য জোগার করতে পারেনি। টিআই প্যারেডে গণেশ ও পলাশ তাদের শনাক্ত করতে পারেনি। সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য না থাকায় পুলিস গত বছরের ১৪ জুলাই রিপোর্ট পেশ করে ঘটনায় তারা জড়িত ছিলনা বলে জানিয়ে দেয়। পুলিসের রিপোর্টের বিষয়ে মতামত জানতে অভিযোগকারীকে নোটিশ পাঠানো হয়। যদিও অভিযোগকারীর মতামত এখনও আদালতে জমা পড়েনি। তবে, নির্দোষ প্রমাণিত হয়েও এক বছর ধরে জেলে বন্দি রয়েছে তিনজন।