খণ্ডঘোষ (পূর্ব বর্ধমান) :- সপ্তাহখানেক আগেই তাঁকে কালো পতাকা দেখানো হয়েছিল। কিন্তু তখন তিনি গোটা বিষয়টিকে স্নেহের দৃষ্টিতে দেখে তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের কালো পতাকা দেখানোর বিষয়টিকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছিলেন, যাঁরা কালো পতাকা দেখিয়েছেন তাঁরা সকলেই তাঁর সঙ্গে হেসে কথা বলেছেন। এমনকি কালো পতাকা দেখানো তৃণমূল সমর্থকরা তাঁকে নাকি জানিয়েছিলেন তাঁরাও তাঁর সঙ্গেই আছেন। কেবলমাত্র পার্টি আর পুলিশের চাপেই তাঁরা বাধ্য হয়েছেন কালো পতাকা দেখাতে। সপ্তাহ খানেক আগের সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁকে শুধুমাত্র কালোপতাকাই দেখানো হল না, একইসঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগও তোলা হল। চেষ্টা চালানো হল সৌমিত্র খাঁয়ের গাড়ির ওপর হামলা চালানোরও। মারধর করার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বিজেপি সমর্থকের ওপরও। শনিবার দুপুর থেকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ালো পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানার শশঙ্গা গ্রামে। বিজেপি সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু আদালতের নির্দেশে সৌমিত্রবাবু বাঁকুড়ায় ঢুকতে পারছেন না, তাই বিষ্ণুপুর লোকসভার অন্তর্গত পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ বিধানসভা এলাকাতেই এখন প্রচারাভিযান চালাচ্ছেন। এদিন সকালেই পোলেমপুর, আলমপুর এলাকায় তাঁর প্রচারে যাবার কথা ছিল। কিন্তু জরুরী কাজে তিনি কলকাতায় চলে যাওয়ায় এদিন সকালের কর্মসূচী তাঁর বাতিল হয়। পরে এদিন দুপুরে তিনি খণ্ডঘোষের শশঙ্গা অঞ্চলে প্রচারে যান। আর এখানেই শশঙ্গা তৃণমূল পার্টি অফিসের সামনে সৌমিত্র খাঁয়ের গাড়ির ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ালো। বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ জানিয়েছেন,এদিন দুপুরে শশঙ্গা অঞ্চলে তাঁর প্রচারাভিযান ছিল। প্রচারাভিযান সেরে এক কর্মীর বাড়িতে দুপুরে খাবার খেয়ে কর্মী সহ তিনি যখন ফিরছিলেন শশঙ্গা গ্রামের রাস্তা দিয়ে সেই সময় বিজেপি কর্মীদের কয়েকজনকে তৃণমূল সমর্থকরা মারধর করে। একইসঙ্গে তাঁর গাড়ির ওপর কালো পতাকা এবং তৃণমূলের পতাকা নিয়ে হামলা চালানো হয়। সৌমিত্র খাঁ অভিযোগ করেছেন, এই ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ। তাঁদের সামনেই তাঁর গাড়ির ওপর হামলা চালানো হয়। এমনকি তাঁর অভিযোগ, পুলিশ এই ঘটনায় খুশি হয়ে হাততালিও দেন। সৌমিত্রবাবুর দাবী, এদিন তাঁর সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীরা না থাকলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণের শিকার হতেন। এদিকে, এই ঘটনার পরই সৌমিত্রবাবু সরাসরি খণ্ডঘোষ থানায় চলে যান। এরপর তিনি থানার সামনে বর্ধমান বাঁকুড়া রোডের ওপর দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবীতে ধর্ণায় বসে পড়েন। পাশাপাশি এদিন থানার সামনে রাস্তার ওপর বসে রীতিমত খণ্ডঘোষ থানার পুলিশকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করেন বলেও অভিযোগ। খণ্ডঘোষ থানার পুলিশকে খাঁকি উর্দি ছেড়ে শাড়ি এবং চুরি পড়ার নির্দেশ দেন সৌমিত্র খাঁ। এদিন তিনি হুমকি দিয়েছেন, এরপর যদি ফের তাঁর ওপর কোনো হামলা হয় তাহলে তিনি কলকাতায় গিয়ে রাস্তার ওপর শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ দেখাবেন। তাঁর অভিযোগ, শশঙ্গা অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি শ্যামল পাঁজার নেতৃত্বেই এদিন তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এদিন এব্যাপারে খণ্ডঘোষ থানায় শ্যামল পাঁজার বিরুদ্ধে এফআইআরও দায়ের করা হয় বিজেপির পক্ষ থেকে। অন্যদিকে, খোদ শশঙ্গা অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি শ্যামল পাঁজা জানিয়েছেন, এদিন তৃণমূল নয়, এলাকার মানুষ কালো পতাকা নিয়ে সৌমিত্র খাঁকে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাঁকে এলাকা থেকে চলে যেতে বলেছেন। শ্যামলবাবু এদিন জানিয়েছেন, সৌমিত্র খাঁ শশঙ্গা অঞ্চলের জন্য একটা টাকাও খরচ করেনি। তাঁর বিরুদ্ধে বালির টাকা, চাকরি দেবার নাম করে টাকা নেবার অভিযোগ রয়েছে। শ্যামলবাবু এদিন দাবী করেছেন, শশঙ্গা গ্রামের এক বাসিন্দার বাড়িতে মদ, মাংস খাওয়ানো হয়েছে। তাই এলাকার মানুষ তাঁকে কালো পতাকা দেখিয়ে এলাকা থেকে চলে যেতে বলেছেন।