Site icon E Purba Bardhaman

পরপর তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে খুনের ঘটনা ঘটলেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে অস্বীকার করে ধামাচাপা দেবার চেষ্টা নেতাদের

নিজস্ব প্রতিবেদন, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে কার্যত ধামাচাপা দেবার কুফলের জেরেই চলতি সপ্তাহেরই মাত্র ৪দিনের ব্যবধানে প্রাণ দিতে হল দুজনকে। এর মধ্যে খোদ তৃণমূলের একজন অঞ্চল সভাপতিও রয়েছেন। শনিবার ঈদের অনুষ্ঠান নিয়ে যখন রায়নার ছোটকয়রাপুরের দেওয়ানপাড়ায় রীতিমত খুশীর বাতাবরণ। সেই সময় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে প্রাণ গেল এক নিরীহ যুবকের। মূহূর্তের মধ্যে ঈদের আনন্দ উত্সব ম্লান হয়ে গেল। মৃতের নাম আনিসুর মল্লিক (২২)। মৃত যুবকের বাবা পেশায় কৃষক আব্দুস সালাম মল্লিক জানিয়েছেন, তাঁর দুটি ছেলের কেউই রাজনীতি করেন না। কিন্তু ঈদের দিন যেভাবে তাঁর ছেলের মাথা লক্ষ্য করেই বোমা মারা হয়েছে তাতে গোটা বিষয়টিতে আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল বলে মনে করছেন তাঁরা। রায়নার ছোট কয়রাপুরে শনিবার রাতে এই নৃশংস্য খুনের ঘটনার পর ফের রায়না অঞ্চলে বাম আমলের সেই সন্ত্রাসের ছবিই ফুটে উঠেছে। উল্লেখ্য, বাম আমলে লাগাতার সংঘর্ষে খবরের শিরোনামে উঠে আসে রায়নার এই জ্যোতসাদি, বাঁধগাছার নাম। সকাল থেকে রাত বোমার আওয়াজেই ঘুম ভাঙত এলাকার মানুষের। এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর কিছুদিন এলাকা শান্ত থাকলেও ফের দুষ্কৃতিরা মাথা চাড়া দিতে শুরু করেছে। যার খেসারত দিতে হল আনিসুরকে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই এই এলাকায় সেলিম গোষ্ঠীর সঙ্গে লালন ওরফে আবেল গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতা দখলের লড়াই চলছিল। গোটা বিষয়টি জানতেন দলের উর্ধতন নেতৃত্বরাও। কিন্তু তারা এই দ্বন্দ্ব মেটানোর উদ্যোগ নেননি। বরং এক একটি গোষ্ঠীকে এক একটি নেতা গোপনে উত্সাহ দিয়ে গেছেন। যার পরিণতিতেই নিরীহ যুবকের নৃশংস্য খুন। যদিও এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই বলে দায় সারার চেষ্টা করেছেন রায়নার তৃণমূল বিধায়ক নেপাল ঘড়ুই। তিনি জানিয়েছেন, দুষ্কৃতিদের ছোঁড়া বোমায় এক নিরীহ যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো যোগ নেই। পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। তাঁরা চান দোষীরা শাস্তি পাক। অন্যদিকে, গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, গ্রামের রাস্তা দিয়ে জোড়ে বাইক চালানো নিয়ে শনিবার জ্যোত্সাদির পার্টি অফিসে একটি মীমাংসা বৈঠক ডাকা হয়। সেই বৈঠক চলাকালীনই এই বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। অপরদিকে, গত বৃহস্পতিবার রাতে বোমা মেরে, লাঠি, রড, টাঙি গিয়ে বেধড়ক মারধোর করে খুন করা হয়েছে আউশগ্রামের বিল্বগ্রাম অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি উজ্জ্বল বন্দোপাধ্যায়কে। এই খুনের ঘটনায় সরাসরি দীর্ঘদিনের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দায়ী করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও আউশগ্রামের তৃণমূলের দলীয় সমর্থক থেকে দলীয় নেতৃত্বরাই দাবী করেছেন, তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে বারবার জানানো হয়েছে এই দ্বন্দ্ব মেটানোর জন্য কিন্তু তাঁরা সেটা করেননি। বরং তাঁরা কার্যত এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই জিইয়েই রেখে দিয়েছিলেন। যার পরিণতিতেই প্রাণ হারাতে হয়েছে উজ্জ্বল বন্দোপাধ্যায়কে। অথচ এই ঘটনার পর কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন তৃণমূলের উর্ধতন নেতৃত্ব। যাকে মোটেও ভাল চোখে নেননি আউশগ্রামের তৃণমূল সমর্থকরা। ফলত, রবিবার উজ্জ্বল বন্দোপাধ্যায়ের খুনের ৩দিন পর এলাকার বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার মৃতের বাড়িতে গেলে রীতিমত ক্ষোভের মুখে পড়েন তৃণমূল সমর্থকদের। বিধায়ক জানিয়েছেন, ঘটনার দিন নাকি তিনি এলাকায় ছিলেন না। ফোনে খবর পেয়েছিলেন। অথচ এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক থেকে নেতৃত্বের দাবী, বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার তাঁর বিধানসভা এলাকাতেই ছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো খোঁজখবর নেননি।

Exit mobile version