বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সরকারীভাবে যখন কোনো কোম্পানীর কাছ থেকে চাষের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন গাড়ি বা মেশিন কেনা হচ্ছে তখন গাড়ি প্রতি দর পড়ছে বেশি। অথচ কোনো ব্যক্তি যখন সেই মেশিনই কিনছেন তিনি অনেক কম দামে তা পাচ্ছেন। শোরুমগুলি সরাসরি চাষীদের কাছ থেকে কম নিলেও কেন সরকারকে দেওয়ার সময় বেশি নিচ্ছে তা নিয়ে এবার উপযুক্ত তদন্ত এবং ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানালেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইল। জেলা প্রশাসনের কৃষি সংক্রান্ত বৈঠকে সরাসরি এব্যাপারে বিভিন্ন কোম্পানীর শোরুমের বিরুদ্ধে ইসমাইল সাহেব দুর্নীতির অভিযোগ তোলায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কার্যত বেসরকারী বিভিন্ন কোম্পানী সরকারকে ঠকাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এব্যাপারে মহম্মদ ইসমাইল জানিয়েছেন, প্রায়শই তাঁরা লক্ষ্য করছেন বিভিন্ন শোরুমগুলি থেকে যখন সরকারীভাবে কোনো গাড়ি বা যন্ত্রাংশ কেনা হচ্ছে সেই তুলনায় যখন কেউ ব্যক্তিগতভাবে সেই গাড়িই বা যন্ত্রাংশ কিনছেন তার দাম পড়ছে অনেক কম। কেন সরকারের কাছে বেশি নেওয়া হয়েছে। এটা তো সরকারী অর্থ লুঠের মত মারাত্মক বিষয়। তাই তিনি জেলাশাসকের কাছে এব্যাপারে উপযুক্ত তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন। পাশাপাশি এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চাষীদের শিবির করে তাদের হাতে কৃষি সংক্রান্ত গাড়ি বা যন্ত্রাংশ তুলে দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইসমাইল সাহেব জানিয়েছেন, কোম্পানীর কাছ থেকে একলপ্তে তাঁরা এগুলি ক্রয় করে তা চাষীদের মধ্যে শিবির করে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যদিকে, শুধু এটাই নয়, সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের কৃষি সংক্রান্ত একটি বৈঠকে বেশ কিছু নতুন সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ধানকা্টার মেশিন হারভেস্টারের জন্য চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। ইসমাইল সাহেব জানিয়েছেন, হারভেস্টার মেশিন চালানোর চালকরা সিংহভাগই পাঞ্জাব থেকে আসেন। কার্যত পাঞ্জাবের চালকরাই এব্যাপারে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। পূর্ব বর্ধমান জেলায় হারভেস্টার মেশিন চালানোর জন্য কোনো চালক নেই। অথচ প্রতিবছর পূর্ব বর্ধমান জেলায় ধান কাটার মরশুমে ব্যবহার বাড়ছে ধান কাটার মেশিন এই হারভেস্টারের। সিংহভাগ চালকই পাঞ্জাব থেকে আসেন। যাঁদের বেতন ৩০ হাজার টাকার কাছাকাছি। আর তাই এবার এই জেলাতেও হারভেস্টার মেশিন চালনা করার জন্য বেকারদের তথা চাষীদের প্রশিক্ষণ দেবার উদ্যোগ নিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০টি হারভেস্টার মেশিন জেলায় কাজ করছে। মহম্মদ ইসমাইল জানিয়েছেন, স্বাভাবিকভাবেই এই জেলার বেকার এবং চাষীদের যদি এই মেশিন চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় তাহলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রোজগারেরও একটি দিক খুলে যাবে। তিনি জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের উত্কর্ষ বাংলা প্রকল্পের মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এব্যাপারে একটি পরিকল্পনা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে অনুমোদন আসার পরই এব্যাপারে কাজ শুরু করে দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে তাঁরা আশা করছেন আগামী দুর্গাপুজোর পরই এব্যাপারে প্রশিক্ষণ শুরু করে দেওয়া যাবে। মহম্মদ ইসমাইল জানিয়েছেন, হারভেস্টার মেশিন চালানোর পাশাপাশি হারভেস্টার মেশিন মেরামত করার বিষয়েও একটি প্রশিক্ষণ দেবার চিন্তাভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে চাষীদের আগ্রহ দেখেই তাঁরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। অন্যদিকে, হারভেস্টার মেশিন চালানোর প্রশিক্ষণের পাশাপাশি জেসিবি মেশিন নিয়েও একইভাবে একটি চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। জেসিবি মেশিন চালানোর জন্যও আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মহম্মদ ইসমাইল জানিয়েছেন, চলতি সময়ে জেসিবি মেশিনের ব্যবহারও বেড়েছে। কিন্তু যাঁরা জেসিবি মেশিন চালাচ্ছেন সেই চালকদের সংখ্যা কম থাকায় মেশিন থাকলেও চালকের অভাবে অনেক সময়ই সমস্যা দেখা দেয়। তাই জেসিবি মেশিন চালানোর জন্যও আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে বেকাররা রোজগারের দিক খুঁজে পাবেন বলে তাঁরা আশা করছেন।