E Purba Bardhaman

তৃণমূলের আদিবাসী সম্মেলনে সম্বর্ধনা দুই প্রার্থীকে, এই ভোটে আদিবাসীদের অধিকার বুঝে নেবার লড়াইয়ের ডাক

Trinamool Adivasi Conference welcomes two candidates

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- দুর্গাপুরের ডিএসপি এবং দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার এলাকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে চলতে থাকা বিতর্কে উচ্ছেদকারীদের পাশে দাঁড়ালেন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কীর্তি আজাদ। শনিবার বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেস আদিবাসী শাখার উদ্যোগে আদিবাসী সম্মেলনে আসেন তিনি। এখানেই তিনি জানিয়ে যান, কেন্দ্র সরকারের অধীনস্থ সংস্থাগুলি অত্যন্ত অন্যায় কাজ করছে। এই লোকসভা ভোটকেই তাঁরা অন্তিম লড়াই বলে মনে করছেন। তৃণমূল সরকার উচ্ছেদকারীদের পাশে আছে। এভাবে উচ্ছেদ কিছুতেই মেনে নেওয়া যাবে না। তাই এই ভোটকেই কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে অন্তিম লড়াই হিসাবে নিয়ে কেন্দ্র সরকারকে উৎখাত করার ডাক দেওয়া হয়েছে। এদিন দামোদর নদের নাব্যতা বাড়াতে নদের পলি পরিষ্কার নিয়ে যে দীর্ঘকাল দাবি, আন্দোলন চলছে সেই প্রসঙ্গে কীর্তিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানিয়েছেন, যেহেতু এটা কেন্দ্রের বিষয়। তাই তিনি সাংসদ হলে লোকসভায় এ ব্যাপারে আওয়াজ তুলবেন। প্রসঙ্গত, কীর্তি আজাদ জানিয়েছেন, দুর্ভাগ্য যে এই কেন্দ্র সরকারের মধ্যেই তিনি একদিন ছিলেন। কিন্তু বর্তমান কেন্দ্র সরকার এই ভারী শিল্পকে রাখতে চাইছে না। তাদের চোখে এখন অনলাইন শপিং অ্যাপসগুলিই শিল্প। ফলে যে ভারী শিল্প অর্থনৈতিক বুনিয়াদ তা ধ্বংস করে দিচ্ছে। একদা যে ডিএসপিতে ৩৪ হাজার কর্মী কাজ করতেন তা এখন ঠেকেছে ৭ হাজারের। এভাবেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। কীর্তি জানিয়েছেন, যে দেশের মানুষ ভুখা পেটে থাকে তারা চাঁদে উপগ্রহ পাঠালে হাততালি দেবে না – এটা বুঝতে চাইছে না কেন্দ্র সরকার। অন্যদিকে, বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের এই প্রার্থীর ভাষা সমস্যা নিয়ে ইতোমধ্যেই যে চর্চা শুরু হয়েছে এদিন তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন কীর্তি। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মাতৃভাষা মৈথেলী। মৈথেলীর সঙ্গে বাংলার প্রচুর মিল রয়েছে। তিনি চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাংলা বলতে ঠিক সমস্যাটা কোথায় সেটা তিনি এখনও ধরতে পারেননি। যেদিন ধরতে পারবেন সেদিন থেকেই তিনি বাংলায় বলতে শুরু করবেন। আর এজন্যই তিনি ২-৩ মাসের সময় চেয়েছেন। অন্যদিকে, দিলীপ ঘোষের দাদাগিরি নিয়েও এদিন সরব কীর্তি বলেন, দাদাগিরি, গুণ্ডাগিরি করছে বিজেপি আরএসএস। তাঁদের ভাষাই অত্যাচারী জমিদারদের মতই। বাংলার মানুষ তার জবাব দেবেন। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়েও কীর্তি এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষকে ভস্মাসুর কখনও মহিষাসুর বলে উল্লেখ করে জানিয়েছেন, যেভাবে মা দুর্গা ত্রিশূল নিয়ে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন, এখানকার মা-বোনেরাও তেমনি ইভিএমে জোড়াফুলের বোতাম টিপে দিলীপ ঘোষকে বধ করবে। তাঁকে এমনভাবে হারাবেন যে দিলীপ ঘোষ রাজনীতিই ছেড়ে দেবে সারাজীবনের মত। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে কীর্তি আজাদ হিন্দু দেবদেবীর প্রসঙ্গকে বারবার তুলে ধরেন। তিনি এদিন বলেন, মোদীর ঝুটা গ্যারাণ্টির বদলা হচ্ছে মমতার সারাজীবনের ওয়ারাণ্টি। মমতা যা বলেন, তা করেন। কিন্তু মোদি গত ১০ বছরে কোনো কথাই রাখেননি। কীর্তি বলেন, দিলীপ ঘোষ যেভাবে নারীজাতিকে অপমান করেছেন, তাতে এই সমস্ত লোকের চিন্তাধারা ও বিচারধারা সম্পর্কে সকলেই বুঝতে পারছেন। আর এই লোকেরা সংসদে গেলে আপামর নারী জাতির কি অবস্থা হবে তা সকলেই বুঝতে পারছেন। এদিন এই আদিবাসী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এবং বীরবাহা হাঁসদা, বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ডা. শর্মিলা সরকার, জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় সহ জেলা তৃণমূল নেতৃত্বরাও। বক্তব্য রাখতে গিয়ে এদিন বীরবাহা হাঁসদা জানিয়েছেন, এই লোকসভার ভোট আসলে আদিবাসীদের অধিকার বুঝে নেবার লড়াই। আদিবাসী সমাজ দীর্ঘদিন ধরে সারণা ধর্মের জন্য লড়াই করছেন। কিন্তু কেন্দ্র এখনও তাতে আমল দেননি। এই ভোটে সেই লড়াইকে বুঝে নিতে হবে আদিবাসীদের। এটাই সুযোগ। তিনি জানিয়েছেন, বিজেপি আসলে আদিবাসীদের অধিকার বলে আর কিছু থাকবে না। বক্তব্য রাখতে গিয়ে এদিন স্বপন দেবনাথ বলেন, বিজেপি সরকার মুখেই আদিবাসীদের কথা বলে, কিন্তু দেশের রাষ্ট্রপতি দাঁড়িয়ে থাকলে যেখানে প্রধানমন্ত্রী বসে থাকেন, কিংবা নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনে যেখানে রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণই জানানো হয় না, তা থেকেই বোঝা যায় আদিবাসীদের সম্পর্কে কেন্দ্রের ভাবনা কি। এদিন আদিবাসী নেতৃত্বদের আদিবাসীএলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারের অনুরোধ করেন স্বপনবাবু। অন্যদিকে, এদিন বর্ধমান পূর্বের প্রার্থী ডা. শর্মিলা সরকার জানিয়েছেন, তাঁর লোকসভা এলাকায় গঙ্গার ভাঙন, তাঁতিদের সমস্যা এবং সবজি হিমঘর তৈরির বিষয় নিয়ে তিনি জয়ী হলে এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবেন।

Exit mobile version