বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- রাত পোহালেই বর্ধমানে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা। আর এই প্রশাসনিক সভাকে ঘিরে রীতিমত তোড়জোড় চলছে প্রশাসনের। আর সেই প্রশাসনিক সভার আগেই রাজ্য সরকার এবং জেলা প্রশাসনের বর্ধমানের মিষ্টি হাব গড়া নিয়ে সিদ্ধান্তের দিকেই আঙুল তুলে বিতর্ক তুঙ্গে তুলে দিলেন বর্ধমান উত্তরের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক নিশীথ মালিক। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে আসানসোলের একটি সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বর্ধমান শহরের উপকন্ঠে বামচাঁদাইপুর মৌজায় মিষ্টি হাবের উদ্বোধন করেন। পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন নামী দামী মিষ্টির পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী অন্যান্য জেলার খ্যাতনামা মিষ্টিগুলিও এখান থেকে বিপণন করার লক্ষ্য নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী এই হাবের উদ্বোধন করেন। দুটি ভাগে মিষ্টি হাবের দুটি তলার ৩০টি স্টল এবং প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ হলেও মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরই মুখ থুবড়ে পড়ে গোটা প্রকল্প। বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত দোকান। ব্যতিক্রম একটিমাত্র দোকান। যা আজও নিয়মিতই প্রতিদিনই খোলে। কিন্তু সেখানেও নেই কোনো খদ্দের। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের এই প্রকল্পের ভবিষ্যত নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়। যদিও ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল মাঝে বহুবার বিভিন্নরকমভাবে এই মিষ্টিহাবকে চালুর উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু ততবারই কার্যত বিফলে যায় সব প্রচেষ্টা। মিষ্টি হাবের ব্যবসায়ীদের দাবী ছিল, শক্তিগড়ের ল্যাংচার দোকানগুলি মূলতই চলে সেখানে সমস্ত রুটের বাসস্টপ থাকায়। তাই তাঁরাও প্রশাসনের কাছে দফায় দফায় মিষ্টি হাবের সামনে বাসস্টপ করার দাবী জানাতেই থাকেন। কিন্তু লাভ হয়নি। গত ২ বছর ধরেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এব্যাপারে কোনো ফলপ্রসু সিদ্ধান্তই নেওয়া যায়নি। এদিকে, মিষ্টিহাব বন্ধ থাকায় এবার তা নিয়েই রীতিমত সরব হলেন বিধায়ক নিশীথ মালিক। সরাসরি তিনি জানিয়েছেন, এই মিষ্টিহাবের জন্য তিনি আলাদা জমি দেখিয়েছিলেন। শক্তিগড় ঢোকার মুখে চারমাথার মোড়ে বর্তমানে যেখানে পথের সাথী রয়েছে তার পাশেই এই মিষ্টি হাব তৈরীর জন্য তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর প্রস্তাব মানা হয়নি। শুধু তাই নয়, তিনি এলাকার বিধায়ক হলেও তাঁকে এবং সেই সময় বর্ধমান ২ ব্লকের বিডিওকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখেই মিষ্টি হাবের জায়গা বাছাই করা হয়। নিশীথ মালিক দাবী করেছেন, তিনি শুনেছেন ৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিভাবে এই টাকা খরচ হল সন্দেহ পোষণ করে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তিনি দাবী করেছেন, গোটা টাকাটাই কার্যত বিফলে গেছে। এব্যাপারে তিনি জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই তিনি পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতীর সঙ্গে কথা বলেছেন। মিষ্টি হাবের জন্য কতটাকা খরচ হয়েছে সে ব্যাপারে তদন্তের দাবী জানিয়েছেন। দলেরই দায়িত্বশীল একজন বিধায়কের এই বিস্ফোরক মন্তব্যকে ঘিরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে গোটা জেলা জুড়ে। যদিও এব্যাপারে জেলাশাসক জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে একটি বৈঠকে বিধায়ক তাঁকে এব্যাপারে বলেছেন। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। অপরদিকে, দলেরই বিধায়কের এহেন মন্তব্য সম্পর্কে খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন, এই প্রকল্প মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। সেই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে তাঁরা চেষ্টা করছেন। বাসস্টপের মত কিছু সমস্যার জন্য প্রকল্পটি চালু করা না গেলেও তাঁরা এটিকে পুরোদমেই চালু করবেনই। নিশীথ মালিকের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে স্বপনবাবু জানিয়েছেন, উনি কি বলেছেন এবং কেন বলেছেন তা তিনি জানেন না। তাঁরা প্রকল্পটি নিয়ে ভাবছেন এবং তা বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই খড্গপুরের আইআইটির বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। জেলাশাসক গোটা বিষয়টি তদারকি করছেন। জেলাশাসক জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই খড্গপুরের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মিষ্টি হাবেই বর্ধমানের বিখ্যাত সীতাভোগ, মিহিদানা, ল্যাংচার মত মিষ্টিগুলিকে প্যাকেজিং করা কিভাবে যায় সে ব্যাপারে খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তাঁরা চাইছেন মিষ্টি হাব থেকেই প্যাকেজিং কারবার চালাতে। আর তা করা গেলেই মিষ্টি হাব চালুর জন্য তাঁদের আর ভাবতে হবে না। স্বপনবাবু জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের আবেদন মত জেলা পরিবহণ আধিকারিককে মিষ্টি হাবে বাসস্টপ দেবার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেন, বিধায়ক যে জায়গা দেখিয়েছিলেন সম্ভবত সেই জায়গাটি ২নং জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের অধীন। পাশাপাশি যে সময় এই প্রকল্প তৈরী হয় সেই সময় সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দপ্তর গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।