বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- মঙ্গলবার দিনভর বর্ধমান স্টেশনের দখল নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির দফায় দফায় সংঘর্ষ, বোমাবাজি, পুলিশের লাঠিচার্জকে ঘিরে বুধবারও গোটা স্টেশন এলাকা থমথমে চেহারাতেই থাকল। মঙ্গলবার সকালেও যেখানে ষ্টেশন এলাকায় বিজেপির বেশ কিছু পতাকা, ফেষ্টুন, ব্যানারকে দেখা গিয়েছিল বুধবার সকাল থেকেই সেগুলোকে আর দেখতে পাওয়া গেল না। এমনকি যে চায়ের স্টলকে বসানোকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ধন্ধুমার কাণ্ড ঘটে সেই স্টল ছাড়াও আরও কয়েকটি বিজেপি সমর্থিত দোকানকেও এদিন দেখতে পাওয়া যায়নি। এদিকে, বর্ধমান ষ্টেশনের যে দখলদারীকে ঘিরে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে মঙ্গলবার তা নিয়েই বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়ে গেল ব্যাপক চাপান উতোর। বর্ধমান ষ্টেশনের সামনে থাকা ব্যাটারি চালিত ই-রিকশা (বর্তমানে চলতি কথায় টোটো) স্ট্যাণ্ডকে ঘিরেই মূল অভিযোগ তোলা হয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপির অভিযোগ, বর্ধমান ষ্টেশনে আসা যাওয়া প্রতিটি ই-রিকশা থেকে প্রতিদিন ২০ টাকা করে নিচ্ছে তৃণমূল। আর এভাবেই চলছে দেদার তোলাবাজি। আর সেই তোলাবাজি বন্ধের ডাক দেওয়া নিয়েই শুরু হয় বিজেপি তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষ। বিজেপির আনা এই অভিযোগের পাল্টা খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি ইফতিকার আহমেদ ওরফে পাপ্পু জানিয়েছেন, রেল দপ্তরের অনুমোদন রয়েছে এই ই-রিকশা স্ট্যাণ্ডের। ফলে এর মধ্যে কোনো অন্যায় নেই। এমনকি তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা সংগঠন থেকেই ই-রিকশা প্রতি ২০ টাকা ধার্য করে দিয়েছেন। যেখানে রেলের নিয়ম অনুসারে ৩৪টাকা করে দেবার কথা। বস্তুত, এই চাপান উতোরের মাঝেই শুরু হয়েছে বর্ধমান ষ্টেশনের এই ই-রিকশা স্ট্যাণ্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন। একইসঙ্গে বর্ধমান শহরে ই-রিকশার অবৈধ বাড় বাড়ন্ত নিয়ে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে তৃণমূলকেই। খোদ পাপ্পু জানিয়েছেন, বর্ধমান ষ্টেশনে ৬০০০ হাজার ই-রিকশা আসা যাওয়া করে। আর তাকে ঘিরেই প্রশ্ন উঠেছে – আদৌ বর্ধমান শহরে প্রশাসনের নির্দেশ অনুসারে কত ই-রিকশা চলার অনুমোদন রয়েছে? জেলা পরিবহণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে ২৫৯২টি ই-রিকশা চলার অনুমোদন রয়েছে বর্ধমান শহরে। ইতিমধ্যেই এই সংখ্যক ই-রিকশাকে নির্দিষ্ট রুটের ভিত্তিতে পরিবহণ দপ্তর ধাপে ধাপে অনুমোদনও দিচ্ছেন। জেলা পরিবহণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হাইকোর্টের নির্দেশানুসারে বর্ধমান শহরে ২৫৯২টির বেশি ই-রিকশা চলাচল করার কথাই নয়। তাহলে প্রশ্ন উঠেছে কেবলমাত্র বর্ধমান ষ্টেশনেই কিভাবে চলছে ৬ হাজার ই-রিকশা? খোদ সরকারে রয়েছে তৃণমূল। সেখানে তৃণমূলের নির্দেশেই কিভাবে সরকারী নির্দেশকেই বুড়ো আঙুল দিয়ে অবৈধ ই-রিকশার রমরমাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয় – অভিযোগ উঠেছে বর্ধমান ষ্টেশন এলাকাতেই নয় শহরের বেশ কিছু জায়গায় কয়েকজন তৃণমূল নেতা রীতিমত এই ই-রিকশা থেকে তোলাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠেছে তার মধ্যে কতগুলি বৈধ? এদিকে, মঙ্গলবার সকাল থেকে যেভাবে বর্ধমান ষ্টেশনে বিজেপি এবং তৃণমূল রীতিমত দাপাদাপি চালিয়েছে তাতে রীতিমত আতংকিত হয়ে পড়েন সাধারণ যাত্রীরাও। গোটা বিষয়টি নিয়ে টনক নড়েছে রেল দপ্তরেরও। বর্ধমান ষ্টেশনের ষ্টেশন ম্যানেজার স্বপন অধিকারী জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি নিয়ে তাঁরাও চিন্তিত। বর্ধমান ষ্টেশনের সামনে ই-রিকশা স্ট্যাণ্ড নিয়ে স্বপনবাবু জানিয়েছেন, বর্ধমান ষ্টেশনের সামনে একটি সংস্থাকে ৩ বছরের চুক্তিতে সাড়ে ৫ হাজার স্কয়ার ফুটের একটি অস্থায়ী স্ট্যাণ্ড করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেই স্ট্যাণ্ডে ই-রিকশা না গাড়ি থাকবে তা সংস্থার বিষয়। একইভাবে বর্ধমান ষ্টেশনের উল্টোদিকে ৮ নং প্ল্যাটফর্মের সামনে দুটি স্ট্যাণ্ডের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একটি ৪ হাজার স্কয়ার ফুটের এবং অন্যটি ৫ হাজার স্কয়ার ফুটের। তিনি জানিয়েছেন, বর্ধমান ষ্টেশনের সামনে বরাত পাওয়া সংস্থার মেয়াদ আগামী অক্টোবর – নভেম্বর মাসেই শেষ হচ্ছে। মঙ্গলবার যে ঘটনা ঘটেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা নতুন করে যাতে কোনো স্ট্যাণ্ডের অনুমোদন না দেন তার জন্য রেল দপ্তরকে চিঠি করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, দেখা গেছে, রেল দপ্তরের এই অনুমোদন পাওয়া স্ট্যাণ্ডে রাখা হচ্ছে মোটরবাইক। আর ৫ হাজার স্কয়ার ফুটের অনেক বেশি এলাকা জুড়ে সারি সারি ই-রিকশা সহ মোটরবাইকও দাঁড়িয়ে থাকছে। আর তাকে ঘিরেই ক্রমশই উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতি।