গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দালালির অভিযোগে দুজনকে পুলিসের হাতে তুলে দেওয়া হল। হাসপাতালের কর্মীরা তাদের ধরে পুলিসের হাতে তুলে দেয়। পরে হাসপাতালের কর্মী রূপদ দাসের অভিযোগের ভিত্তিতে পরিচয় গোপন করে প্রতারণার ধারায় মামলা রুজু করে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে বর্ধমান থানার পুলিস। ধৃতদের নাম আনিসুর মণ্ডল ও সুরজিৎ কর্মকার। বর্ধমানের নবাবহাট এলাকার একটি আবাসন উপনগরীতে বাড়ি আনিসুরের। বাঁকুড়ার ইন্দাস থানা এলাকায় সুরজিৎ-এর বাড়ি। আনিসুর বর্ধমানের নবাবহাট এলাকার একটি নার্সিংহোমের মালিক। সুরজিৎ সেখানকার কর্মী। এদিনই ধৃতদের বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ধৃতদের বিচার বিভাগীয় হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন সিজেএম রতন কুমার গুপ্তা।।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার ভোরে বর্ধমান স্টেশনে নামেন অসমের বাসিন্দা বছর চল্লিশের লালু মিঞা। তার সঙ্গে স্ত্রী সফিয়া বেগমও ছিলেন। স্টেশনে শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় লালু মিঞাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। এক টোটো চালক তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা শুরু হয় লালু মিঞার। সেই সময়ই স্কুটি চেপে এক যুবক হাসপাতালে আসে। তার স্কুটিতে ‘ডক্টর’ স্টিকার লাগানো ছিল। সে নিজেকে চিকিৎসক বলে পরিচয় দেয়। যদিও হাসপাতালের কর্মীদের তাকে দেখে সন্দেহ হয়। তাকে ভিতরে ঢুকতে দেননি হাসপাতালের কর্মীরা। এসবের মধ্যেই জরুরি বিভাগের সামনে একটি অ্যাম্বুল্যান্স এসে দাঁড়ায়। তা থেকে নেমে দু’জন রোগীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলে। এনিয়ে জরুরি বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে তাদের বচসা বাধে। সেই সুযোগে ডাক্তার পরিচয় দেওয়া লোকটি পালিয়ে যায়। প্রাথমিক পরীক্ষার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক লালুকে নাক-কান-গলা বিভাগের নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। তার টনসিলে সমস্যা রয়েছে বলে জানা যায়। জরুরি বিভাগ থেকে নাক-কান-গলা বিভাগে নিয়ে যাওয়ার সময় সফিয়া বেগমকে অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে আসা দু’জন পাকড়াও করে। তারা হাসপাতালের চিকিৎসা সম্পর্কে খারাপ ধারণা তৈরি করে রোগীকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার জন্য লালুর স্ত্রীকে বোঝায়। বিষয়টি স্বাস্থ্যকর্মীদের নজরে আসে। তাঁরা দু’জনকে আটকে রেখে হাসপাতাল ক্যাম্পের পুলিসকে খবর দেন। পুলিস দু’জনকে ধরে রাখে।
হাসপাতালে দালাল চক্রের রমরমা যে এখনও চলছে এদিনের ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। দালালচক্রের রমরমা ঠেকাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কড়া নজরদারি চালু করেছে। হাসপাতালে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। বছর খানেক আগে হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় দালালদের রুখতে সতর্কতামূলক বোর্ড ঝোলানো হয়। তাতে অবশ্য কতখানি কাজ হয়েছে তা নিয়ে বেশ সন্দেহ রয়েছে। হামেশাই হাসপাতাল থেকে দালাল ধরা পড়ে। অনেক ক্ষেত্রেই নজরদারি এড়িয়ে দালালরা তাদের কাজ হাসিল করে ফেলে। দালালদের সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের যোগসাজশের বিষয়টি বহুবার নজরে এসেছে। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা বলেন, রাতের দিকে হাসপাতালে নার্সিংহোমের দালালরা উৎপাত চালায়। এ ব্যাপারে পুলিস ও হাসপাতালের কর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে। দালালদের রুখতে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।