E Purba Bardhaman

‘স্বৈরাচারী’ উপাচার্য! জবাব দিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্র

Vice-Chancellor Goutam Chandra clarified his position in various comments about the Vice-Chancellor of Burdwan University.

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- প্রাক্তন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রমের পিএইচডি করা নিয়ে বিতর্কের সঙ্গে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের করা মন্তব্য নিয়ে শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্র নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন। বৃহস্পতিবারই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ, তৃণমূল প্রভাবিত কর্মচারী সংগঠন এবং ওয়েবকুপার প্রবল বাধায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠক করতে পারেননি উপাচার্য। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ তুলে তিনি জানান, স্থায়ী উপাচার্য না হলে যদি তাঁর ইসি মিটিং ডাকার বৈধতা না থাকে তাহলে তিনি উপাচার্য হিসাবে ২০২৩ -এর সেপ্টেম্বর মাসে যোগ দেবার পর ২টি ইসি মিটিং করেছেন এবং তার বৈধতা নিয়েও কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। তাহলে এখন কেন? তিনি এদিন বলেন, বৃহস্পতিবার এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের একটা মিটিং ডাকা হয়েছিল, সেই মিটিং করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এই মিটিং ডাকার পেছনে কর্তৃপক্ষের কোনও স্বার্থ নেই। গতকাল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর সৌরভ মধুর দে এই মিটিং ডাকার জন্য সংবাদমাধ্যমের সামনে বিষোদ্‌গার করেছেন এবং উপাচার্যকে স্বৈরাচারী বলেছেন। যে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করে তাঁকে স্বৈরাচারী বলে। আর যিনি ইসি মিটিং ডেকে সদস্যদের সবকিছু জানিয়ে মতামত বিনিময় করে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন তাঁকে নিয়মনিষ্ঠ মানুষ বলে। গৌতম চন্দ্র জানিয়েছেন, সৌরভ মধুর দে বিশ্ববিদ্যালয়ের নথি অনুযায়ী সেকেন্ড সেমে প্রায় ১২০ টি ক্লাসের মধ্যে ৩ মাসে মাত্র ১১ টি ক্লাস নিয়েছেন। চতুর্থ সেমে ১২০ টি ক্লাসের মধ্যে মাত্র ১৪ টি ক্লাস নিয়েছেন। তিনি নিজে কতটা স্বৈরাচারী সেগুলো দেখার সময় হয়েছে। প্রায় ৫০ জন অধ্যাপক, আধিকারিক এবং শিক্ষা কর্মী বন্ধুর পদোন্নতি দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে আটকে রেখেছিলেন পূর্বতন উপাচার্য ডক্টর নিমাই চন্দ্র সাহা। গত কয়েক মাসে সিলেকশন কমিটি বসিয়ে এই বিষয়ে আমাকে সাহায্য করেছেন রেজিস্ট্রার ডক্টর সুযিত কুমার চৌধুরি। পদোন্নতির কাগজ তৈরি করে রেখেছি কিন্তু আমি নিরুপায় ইসি-র অনুমোদন ছাড়া এই পদোন্নতি লাগু করা যাচ্ছে না। নিমাই বাবুর কার্যকালে আগস্ট ২০২২ এবং মার্চ ২০২৩-এর মধ্যে ৩ বারে মোট ১ কোটি ৯৩ লক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা তছরুপ হয়েছে। যেটা সাম্প্রতিক সময়ে ধরা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটা মজবুত এনকোয়ারি কমিটি, একটি স্পেশাল অডিট কমিটি এবং একটা ইন্টার্নাল অডিট কমিটি তৈরি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জনৈক প্রাক্তন কর্মী একটা মামলা করেছেন এবং বলেছেন কর্তৃপক্ষ নাকি এর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় নি। কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা নিয়েছে সেটা ইসিতে জানানো দরকার ছিল। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে পূর্বতন উপাচার্য নিমাই চন্দ্র সাহা টিসিএস-এর সঙ্গে একটি কয়েক কোটি টাকার চুক্তি করেছিলেন। টিসিএস-কে দিয়ে কাজ করিয়েছিলেন কিন্তু কোনও পেমেন্ট করে যাননি। বিশাল পরিমাণে অর্থ বাকি আছে, টি সি এস কাজ করতে চাইছে না। পরীক্ষার্থীদের ফল বের হতে দেরি হচ্ছে। আমি নিরুপায় ইসি মিটিং ছাড়া এই বিশাল পরিমাণ অর্থ মিটিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। এই সমস্ত কারণে ইসি মিটিং ডাকা হয়েছিল। জাতীয় শিক্ষা নীতি লাগুর জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অর্ডিন্যান্স পরিবর্তন প্রয়োজন। যেটা ইসি মিটিং করে করতে হবে। এটা মিটিং-এ প্রথম অ্যাজেন্ডা ছিল। উপাচার্য জানিয়েছেন, সোসিওলজির ওই অধ্যাপক সংবাদমাধ্যমের সামনে আমাকে স্বৈরাচারী বলছেন, তাই আমিও সংবাদমাধ্যমের সামনে এগুলো জানালাম। এবার শিক্ষা দপ্তরেও জানাব।
অন্যদিকে, ইতিহাস বিভাগের পিএইচডি ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করার দাবিতে এদিনই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে উপাচার্যকে স্মারকলিপিও দেওয়া হল। উল্লেখ্য, প্রাক্তন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম এই পিএইচডি ভর্তির মেধা তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে। এদিন উপাচার্য জানিয়েছেন, গত ৯ ও ১০ জুলাই পরপর দুটি চিঠি দেওয়া হয়েছে হুগলী কারাগার কর্তৃপক্ষকে। উত্তর আসলেই তাঁরা ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করে দেবেন। একইসঙ্গে তিনিও চান অর্ণব পিএইচডি করুক এখান থেকেই। তাঁর আন্তরিকতা নিয়ে কুণাল ঘোষ যে মন্তব্য করেছেন তাঁকে কেউ ভুল বোঝানোর জন্যই করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন উপাচার্য। উপাচার্য এদিন জানিয়েছেন, অর্ণব দামকে বিচারাধীন বন্দী না ভেবে তাঁকে আমি ছাত্র ভেবেছি, যেটা আমার স্বভাবজাত। সেজন্যই সঙ্গে সঙ্গে অর্ণবকে ইন্টারভিউতে বসার সুযোগ করে দিয়েছি। ছাত্র দরদি এবং শিক্ষা অনুরাগী হিসাবেই আমার পরিচিতি। ইন্টারভিউ হওয়ার পর মেরিট লিস্ট আমার কাছে আসার পর সানন্দে তাতে অনুমোদন দিই এবং রেজাল্ট প্রকাশ পায়। এটাও আমার সদিচ্ছার পরিচয়। এখানে বিভাগের ইতিবাচিকতা বা আন্তরিকতার কোনও প্রশ্ন নেই। এরমধ্যে কিছু বিষয় সামনে আসে। তারমধ্যে অর্নব যখন সশরীরে উপস্থিত থেকে পিএইচডির কাজ করবেন তখনকার নিরাপত্তা বিষয়টা ইউ জি সি-র গাইডলাইন অনুযায়ী করতে হবে। সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছে কারাদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন আছে কিনা? এবং এই মর্মে আদালতের কোনও নির্দেশিকা আছে কিনা? ৯ এবং ১০ জুলাই সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকে রেজিস্ট্রার ই-মেইল পাঠিয়ে এইসমস্ত বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছি। উত্তর এলেই ইতিহাস বিভাগের পিএইচডি ভর্তি শুরু হবে। আমাদের সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতা আছে বলেই ইতিহাস বিভাগের সম্পূর্ণ বিষয়টা আমরা স্থগিত রেখেছি। আমি আশা করি খুব শীঘ্রই অর্ণব দাম পিএইচডি-তে ভর্তি হবেন এবং একজন শিক্ষানুরাগী হিসাবে আমি আনন্দ লাভ করবো। এরপর বিভাগের আন্তরিকতা দেখানোর বিষয়টা শুরু হবে। বিভাগ কতটা আন্তরিকতা এবং ইতিবাচিকতা দেখাচ্ছে সেই দিকে সকলের নজর থাকবে। তিনি এদিন জানিয়েছেন, তিনি উপাচার্য না থাকলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়েই তিনি আরও ৪ বছর থাকবেন। তাই কে আন্তরিক বা আন্তরিক নন তা সকলেই বুঝতে পারবেন।

Exit mobile version