E Purba Bardhaman

কেন্দ্রীয় প্রকল্পের উপভোক্তাদের তথ্য সংগ্রহের সময় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের ‘ভুয়ো’ তকমা দিয়ে আটকে রাখলেন গ্রামবাসীরা

The villagers detained the representatives of the Ministry of Information and Broadcasting Department in Jhinguti village, suspecting them to be 'fake' while talking to the beneficiaries of the central scheme.

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- একদিকে যখন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল পূর্ব বর্ধমানে আবাস যোজনার অভিযোগের তদন্তে এসেছেন, সেই সময় আর একটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলকে রীতিমত ‘ভূয়ো’ আখ্যা দিয়ে তাঁদের ঘেরাও করে ফেরত পাঠালেন গ্রামবাসীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ালো বর্ধমান ১ ব্লকের বেলকাশ গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝিঙুটি এলাকায়। বেলকাশ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জাহানারা খাতুন জানিয়েছেন, এদিন দুপুরে তিনি খবর পান ঝিঙুটি বারুইপাড়ায় ভারত সরকার লেখা একটি গাড়িতে কয়েকজন আসেন। তাঁরা এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বাংলা আবাস যোজনা, উজ্জ্বলা গ্যাস-সহ একাধিক বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। গোটা বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় এদিন এলাকার মানুষজন তাঁদের আটকে খবর দেন। প্রধান জানিয়েছেন, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে আগত ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চান। কিন্তু তাঁদের কথাবার্তায় অসংগতি পান তিনি। এরপর খবর দেন বর্ধমান ১ ব্লকের বিডিও অভিরূপ ভট্টাচার্য্যকে। তিনিও দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন। ক্রমশই ওই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় তাঁদের সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় ফাগুপুরে বেলকাশ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে। সেখানে তাঁদের দীর্ঘ প্রায় কয়েকঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। জানা গেছে, ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের এ্যাসিস্ট্যাণ্ট ডিরেক্টর (নিউজ) পদমর্যাদা সম্পন্ন সুজাতা মিত্র। বর্তমানে তিনি এফ.ও.বি. বর্ধমান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও একজন সহকর্মী এবং একজন চিত্রগ্রাহক। এদিন তাঁদের পঞ্চায়েত অফিসে নিয়ে আসা হলেও চিত্রগ্রাহক মহিলা নিজেকে অসুস্থ বলে দাবী করে গাড়িতেই থেকে যান। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তিনি সেখান থেকে চলে যান। এদিকে, ওই কেন্দ্রীয় কর্মীর বক্তব্য এবং দাবী সম্পর্কে সত্যতা যাচাই করতে ডেকে পাঠানো হয় বর্ধমান থানার আইসি সুখময় চক্রবর্তী এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগের একজন অফিসারকে। দীর্ঘক্ষণ তাঁদের মধ্যে রুদ্ধদ্বার আলোচনার পর পুলিশী প্রহরায় ওই কেন্দ্রীয় কর্মীকে পঞ্চায়েত অফিস থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এব্যাপারে ওই কেন্দ্রীয় কর্মী সুজাতা মিত্রের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো কিছুই বলতে চাননি। কেন তাকে আটকানো হল সে সম্পর্কেও তিনি কিছু বলতে চাননি। এব্যাপারে বর্ধমান ১ ব্লকের বিডিও অভিরূপ ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, ওই কেন্দ্রীয় কর্মীরা মোটেও ভূয়ো নন। তিনি ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের প্রতিনিধি। বিডিও জানিয়েছেন, চলতি সময়ে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল বর্ধমানে রয়েছে। একইসঙ্গে সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। স্বাভাবিকভাবেই কোথাও যাতে অশান্তি সৃষ্টি না হয় বা ভুল বোঝাবুঝি না হয় সেজন্যই গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মাঝ থেকে তাঁদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। বিডিও জানিয়েছেন, এদিন তাঁরা প্রশাসনের কাউকে কিছু না জানিয়েই গ্রামে এসেছিলেন। ফলে একটা বিভ্রান্তি দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে তাঁরা এলে যেন সরকারীভাবে প্রশাসনকে জানিয়েই আসেন সে ব্যাপারে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, এদিন ঝিঙুটি গ্রামের বাসিন্দা তথা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিজিত সোম জানিয়েছেন, সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। তাই বিজেপি নানা অছিলায় সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। এদিন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি বলে যাঁদের পাঠানো হয়েছে তাঁরা তাঁদের প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি। অন্যদিকে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে একজন মহিলা কেন আচমকাই পালিয়ে গেলেন – প্রশ্ন তুলেছেন অভিজিত সোম। তিনি জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে মোদির গুণগাণ করার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। তাই সরকারী কর্মীদের দিয়ে কৌশলে প্রচার করার চেষ্টা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে যাতে এলাকায় কোনোরকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেজন্যই এদিন তাঁদের আটকে রেখে দিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা।

Exit mobile version