E Purba Bardhaman

জেলা জুড়ে জল যন্ত্রণা অব্যাহত, উদ্ধার জলে তলিয়ে যাওয়া ছাত্রের মৃতদেহ

Water woes continue across the district, body of drowned student rescued

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- মন্তেশ্বরের দেনুর পঞ্চায়েতের ধেনুয়া গ্রামে খড়ি নদীর বিলে রবিবার তলিয়ে যাওয়া দশম শ্রেণীর ছাত্র সূর্য ঘোষের মৃতদেহ পাওয়া গেল। রবিবার দুপুরে বন্ধুদের সঙ্গে স্নান করতে গিয়ে জলে তলিয়ে গিয়েছিল ভুরকুন্ডা হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর পড়ুয়া। রবিবার বিকাল থেকেই বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দপ্তরের কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে সোমবার দুপুরে ওই পড়ুয়ার নিথর দেহ উদ্ধার করেন। এই ঘটনায় ধেনুয়া গ্রাম-সহ গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অন্যদিকে, জেলাশাসক রবিবার ঘোষণা করার পর সোমবার থেকে দামোদর নদের উপর শম্ভুপুর ঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিল জেলা প্রশাসন। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া অবধি পারাপার বন্ধ থাকবে। এর ফলে সমস্যায় পড়তে চলেছেন প্রায় ৩৫ টি গ্রামের মানুষ। রায়না ও জামালপুর ব্লকের অসংখ্য মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম এই শম্ভুপুর ঘাট। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, শম্ভুপুর ঘাট থেকে স্থায়ী সেতুগুলি দুদিকে ১৮ এবং ১৯ কিলোমিটার দূরে। একদিকে সদরঘাটের কৃষক সেতু অপর দিকে জামালপুরে হরেকৃষ্ণ সেতু। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ দামোদরের নতু, হরিপুর, জামুদহ, চক্ষ্ণণজাদি, বোরো, বালাগড়, মোহনপুর, জামদহ, মধুবন গ্রামের বাসিন্দারা এই শম্ভুপুর ঘাট পেরিয়ে যাতায়াত করেন। ফেরি বন্ধ হওয়ায় অসুস্থ মানুষ-সহ নিত্যযাত্রীদের চরম সমস্যায় পড়তে হবে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই এই শম্ভুপুর ঘাটের বাঁশের সেতুর বদলে স্থায়ী কংক্রিটের সেতুর দাবি জানানো হচ্ছে। কিন্তু আজও সেই দাবি পূরণ হয়নি। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, প্রতিবছরই দামোদরে জল বাড়লে এই অস্থায়ী বাঁশের সেতু খুলে ফেলা হয় এবং জল কমলে চালু করা হয়। জেলার অন্যান্য জায়গার ফেরিঘাটও বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে, এদিন টানা বৃষ্টির জেরে রায়নার বিস্তীর্ণ এলাকার চাষের জমি জলমগ্ন হওয়া এবং নিকাশি নালা সংস্কারের দাবিতে রায়নার বাঁকুড়া মোড়ের কাছে বর্ধমান-আরামবাগ রোড অবরোধ করেন স্থানীয় চাষিরা। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে অবরোধ চলায় রাস্তায় ব্যাপক যানজট হয়। পরে রায়না থানার পুলিশ গিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেয়। চাষিদের অভিযোগ, বারবার খন্ডঘোষ, রায়না ১ বিডিও অফিসে নিকাশির দাবি জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। নিকাশির ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি জল বেরোতে পারছে না। ফলে, বিঘের পর বিঘে ধান চাষের জমি জলের তলায়। এমনকি এলাকাও প্লাবিত হয়েছে। এরই পাশাপাশি অতিবর্ষণের ফলে পাঁচদিন ধরে যাতায়াত বন্ধ আউশগ্রামের দিগনগর ১ পঞ্চায়েতের তেলোতা গ্রামের রাস্তা। এর ফলে সমস্যায় তেলোতা, যাদবগঞ্জ, কুমারগঞ্জ, বনপাড়া, রাধামোহনপুর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। গ্রামবাসীদের ঘুরপথে বাজার হাটে যেতে হচ্ছে। পড়ুয়াদের অনেকেই স্কুলে যাতায়াত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। চারচাকা গাড়ি, টোটো এসব কিছু চলাচল না করায় বিশেষ করে রোগীদের চিকিৎসায় নিয়ে যাওয়া বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রায় দুই বছর আগে ওপর তোলাতার এই রাস্তার কাজের টেন্ডার হয়। কাজ শুরু হয়েছে অনেকদিন আগেই। কিন্তু ঢিমেতালে কাজ চলছে। এর মধ্যে তীব্র বর্ষণের সঙ্গে ক্যানেলের জলে পুরানো কালভার্ট ভেঙে উড়ে গেছে। আর এখন রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ছয় কিলোমিটার ঘুরপথে গ্রামবাসীদের বাজার হাট করতে যেতে হচ্ছে। এই দুর্ভোগের অবসান চাইছেন এলাকাবাসী। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার জানিয়েছেন, ‘বাস্তুকাররা এলাকায় যাবেন। আপাতত কাজ চলার মত কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেজন্য বলা হয়েছে। পরে পাকাপাকি সারাইয়ের কাজ করা হবে।’ উল্লেখ্য, পূর্ব বর্ধমান জেলার সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এদিনই জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসেন। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, আগামী শুক্রবারের মধ্যে গোটা জেলার রিপোর্ট আসার পর শুক্রবার ফের এই বৈঠকে বসা হবে। তারপরেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মিঠু মাঝি জানিয়েছেন, আগামী শুক্রবারের মধ্যে পূর্ত দপ্তর এবং পঞ্চায়েত দপ্তর-সহ সমস্ত বিডিওর কাছ থেকে রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরই কাজ শুরু হবে। জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ রায় জানিয়েছেন, এই জমা জল নেমে যাবার পর উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখা হয়েছে। এদিনই জেলার মুখ্য স্বাস্থ্যাধিকারিককে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় সবরকমের ব্যবস্থা নেবার কথা জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে পঞ্চায়েতগুলিকেও নজরদারি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Exit mobile version