জামালপুর (পূর্ব বর্ধমান) :- রাস্তায় নামতে হয়, ধর্নায় বসতে হয়, জীবন দিতে হয় -যা করতে হয় আমরা করতে রাজি। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের জৌগ্রাম-ঝাপানডাঙ্গা আঞ্চলিক কমিটির উদ্যোগে মতুয়া মহাসম্মেলনে যোগ দিতে এসে সিএএ নিয়ে এই হুঁশিয়ারিই দিয়ে গেলেন মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি মমতাবালা ঠাকুর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তি ও অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিদের মধ্যে পার্থক্য জানেন না মুখ্যমন্ত্রী। এর উত্তর দিতে গিয়ে এদিন মমতাবালা ঠাকুর বলেন, ওনারা জানেন, তার জন্যই তো এমন একটা আইন তৈরি করেছেন। সেই আইনের যে ৯ টা ধারা দিয়েছে যা যা ডকুমেন্টস দিতে হবে কোনও মানুষের কাছেই নেই। তাহলে নাগরিক হবে কী করে? তাঁরা বলছেন আমরা নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিচ্ছি। তাহলে এতগুলো শর্ত কেন বেঁধে দিল? বাবা-মা-ঠাকুরদা -তাঁদের জন্ম কোথায়? তার জন্ম শংসাপত্র দিতে হবে। কোথায় জন্মগ্রহণ করেছেন তা প্রমাণ দিতে হবে। তিনি এদিন প্রশ্ন করেন, এই ৯ টা ডকুমেন্টস কার কাছে আছে? ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আর প্রধানমন্ত্রী-তাঁদের কাছে আছে এগুলো? মমতাবালা এদিন বলেন, আসামে বিজেপির সরকার চলছে। তাহলে তারা কেন রাস্তায় নেমেছে,ধর্নায় বসেছে? ওখানে তো হেমন্ত সোরেন বলেই দিয়েছেন, আসামে একটা কেউ যদি নাগরিক পায় তাহলে তিনি চিফ মিনিস্টারের পদ ছেড়ে দেবেন। মমতা বালা বলেন, এর কারণ হচ্ছে উনিশে যে কথা দিয়েছিল তা রক্ষা করতে পারেনি। আজ কিংবা কাল-পরশুর মধ্যে ভোট ঘোষণা হয়ে গেলে সব বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ এই সময় সরকারি কাজ সব বন্ধ হয়ে যায়। ওরা ভেবেছে এই সময় যদি করি তাহলে মতুয়ারা আবার আমাদের ঢেলে ভোট দেবে। তিনি বলেন, আমাদের ভোটে তারা সরকার গঠন করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এমএলএ, মিনিস্টার, চিফ মিনিস্টার সব হচ্ছে অথচ বলছে আমরা নাকি নাগরিক নই। আইন পরিবর্তন করার কথা ছিল, অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের দাবি ছিল কোনও শর্ত থাকবে না। তারা যদি এটা বলত আধার কার্ড ভোটার কার্ড প্যান কার্ড থাকলেই এদেশের নাগরিক হবে তাহলে ঠিক ছিল। যে কটা প্রমাণ ওরা চেয়েছে ভারতের কোনও মানুষই সেটা দিতে পারবেন না। অন্য দেশ থেকে যারা এসেছেন তাঁরা তো দিতেই পারবেন না। জলে জঙ্গলে কখনো ঝড় হচ্ছে, আগুনে পুড়ে যাচ্ছে, কোথাও বন্যা হয়ে তাঁদের সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কী প্রমাণ তাঁরা রাখবে? কোথা থেকে দেবে? অনুপ্রবেশ নিয়ে অমিত শাহের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এদিন মমতাবালা ঠাকুর বলেন, এগুলো তো ক্ষমতায় আসার পরে ক্ষমতায় আসার আগের বিষয় নয়। বর্ডার তো ওনাদের। বর্ডারটা রাজ্য সরকারের নয়। কেন্দ্রের অধীনে সীমানা। বিজয় মালিয়া আজকে লক্ষ-কোটি টাকা নিয়ে চলে গেল, নীরব মোদী টাকা নিয়ে চলে গেল। এটা কি চিফ মিনিস্টারের ব্যাপার না এটা সেন্ট্রালের ব্যাপার? কি করে গেল? সীমানা দেখা তো কেন্দ্রের কাজ। তাহলে কীভাবে আজকে অনুপ্রবেশকারী ঢুকছে? দোষ তাঁদের। তাঁরাই ঢোকাচ্ছে। এখন বলছে আমরা ক্ষমতায় আসলে করে দেবো, তার মানে ক্ষমতায় না আসলে কিছু করবে না। তার মানে কি ললিপপ দেখাচ্ছে? মতুয়াদের নিঃশর্তে নাগরিকত্ব দেবো বলেও তাহলে ৯ টা শর্ত কেন বেঁধে দিলো? এই ৯ টা শর্ত যে দেবে না তাহলে সে পাবে না। ওরা বলবে, আপনাকে আমরা দিচ্ছি কিন্তু আপনি নিতে পারছেন না কারণ আপনার প্রমাণ নেই। মমতাবালা বলেন, আমরা ভারতের নাগরিক। আমাদের পূর্বপুরুষেরা অখণ্ড ভারতে জন্মগ্রহণ করেছেন। আমরা এখানে জন্মগ্রহণ করেছি। আমাদের সন্তানরা এখানে জন্মগ্রহণ করেছে। কোনোভাবে বে-নাগরিক আমাদের করতে পারবেনা। রাস্তায় নামতে হয়, ধর্নায় বসতে হয়, জীবন দিতে হয় যা করতে হয় আমরা করতে রাজি।