Site icon E Purba Bardhaman

‘ডাইনি’ তকমা দিয়ে ৭০ বছরের বৃদ্ধাকে বেধড়ক মারধর রায়নায়

witch-slander

গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, রায়না (পূর্ব বর্ধমান) :- ফের ‘ডাইনি’ তকমা দিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটল রায়নায়। এবার ডাইনি আখ্যা দিয়ে মারধর করা হয়েছে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধাকে। মারধরের ফলে গুরুতর জখম হয়েছেন বৃদ্ধা। তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে বৃদ্ধার এক আত্মীয় রায়না থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে মামলা রুজু করে পুলিস মনসা মল্লিক ও তার স্ত্রী সন্ধ্যারাণি মল্লিককে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি দুই অভিযুক্ত অবশ্য এখনও অধরা। তাদের ধরার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিস।
পুলিস জানিয়েছে, রায়না থানার বামুনিয়া গ্রামে বৃদ্ধার বাড়ি। গ্রামের সুজয় মল্লিকের স্ত্রী রমা মল্লিক অসুস্থ হয়ে পড়ে কিছুদিন আগে। তাকে স্থানীয় এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রামের ৭০ বছরের ওই বৃদ্ধার তুক-তাকে রমা অসুস্থ হয়েছে বলে নিদান দেয় ওঝা। মঙ্গলবার রাতে ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন বৃদ্ধা। সেই সময় মনসা, তার স্ত্রী সন্ধ্যারাণি, তাদের ছেলে সুজয় ও রমা ধাক্কা দিয়ে বৃদ্ধার ঘরের দরজা খোলায়। এরপর তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। লাঠি পেটায় গুরুতর জখম হন বৃদ্ধা। এক প্রতিবেশীর সামনেই সবকিছু ঘটে। তবে, তিনি প্রতিবাদের সাহস দেখাতে পারেন নি। মারধর করে ৪ জন চলে যাওয়ার পর বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার আত্মীয় বাবলু সর্দার। জেলায় ডাইন অপবাদ দিয়ে মারধর ও ঘরছাড়া করার ঘটনা হামেশাই ঘটছে। সরকারের তরফে এ ধরণের ঘটনা বন্ধে প্রচার চালানো হচ্ছে। ওঝা ও গুনিনদের নিয়ে সভাও করেছে জেলা প্রশাসন। যদিও তারপরও এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। মাস তিনেক আগে রায়না থানার বোড়ো-বলরামপুরে ডাইন অপবাদ দিয়ে এক মহিলাকে মারধর করা হয়। গ্রামের এক মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার অসুস্থতার জন্য দায়ী করা হয় মহিলার প্রতিবেশী নমিতা ক্ষেত্রপালকে। নমিতা খণ্ডঘোষের খোরকোল গ্রামের ওঝা ঝুমা মালিকের কাছ থেকে জাদু-টোনা শিখে তা গ্রামের কয়েকজনের উপর প্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ তুলে তাকে মারধর করা হয়। ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। এমনকি পুলিসের উপরও হামলা চালানো হয়। এ বছরের ২৩ এপ্রিল রায়না-২ ব্লকের নেওর গ্রামে ডাইন অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে মারা হয় মাকু বাস্কে ও রামসিং মাণ্ডি ওরফে মঙ্গলকে। ঘটনায় ৪৯ জনের নাম জড়ায়। এর আগে মেমারি থানার সাতগেছিয়ার ঘটকপাড়ায় ডাইনি অপবাদ দিয়ে একটি পরিবারকে ২ বছরেরও বেশি ঘরছাড়া করে রাখা হয়েছে। প্রশাসনের নানা মহলে জানিয়েও পরিবারটি এখনও গ্রামে ফিরতে পারেনি। রায়না থানার এক অফিসার বলেন, তদন্ত চলছে। অভিযুক্তদের ধরতে সব ধরণের চেষ্টা চলছে। শুধুমাত্র অভিযুক্তদের ধরে এ ধরণের ঘটনা বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য মানুষেরমধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন আছে।

Exit mobile version