E Purba Bardhaman

রাস্তায় পড়ে থাকা অচৈতন্য ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন সহকারী সভাধিপতি

Purba Bardhaman Zilla Parishad Sahakari Sabhadhipati takes away a sick person lying on the road and admitted the sick person to the hospital

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান শহরের বাদামতলা মোড়ে জিটি রোডের পাশে একটি মলের সামনে অচৈতন্য হয়ে পড়েছিলেন মাঝবয়সী এক ব্যক্তি। পথচলতি মানুষ তাঁর দিকে ফিরেও তাকাননি। কিন্তু শুক্রবার সকালে সমবায় নিয়ে মিছিলে পা মিলিয়ে যাবার সময় সেই ব্যক্তিকে চোখে পড়েছিল পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডুর। বর্ধমান টাউন হল থেকে সমবায় নিয়ে আয়োজিত মিছিল বর্ধমান শহর পরিক্রমা করে শেষ হয় টাউন হল প্রাঙ্গণেই। আর মিছিল শেষ হতেই নিজের গাড়ি নিয়ে ছুটে গেছিলেন সেই অচৈতন্য মানুষটির কাছে। নিজের গাড়িতেই তাঁকে তুলে নিয়ে সোজা যান বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে। কিন্তু এদিন জরুরী বিভাগের কাজকারবার দেখে রীতিমত ক্ষুব্ধ হন দেবু টুডু। এদিন সকালে রাস্তা থেকে এক অচৈতন্য এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও ওই ব্যক্তির পরিবারের লোকজন না আসা পর্যন্ত রোগীর ভর্তি তো দূরস্ত, তাঁর চিকিত্সাই শুরু করতে চাননি জরুরী বিভাগের চিকিত্সকরা। এমনকি নিজের পরিচয় দিলেও তাতেও কর্ণপাত করেননি চিকিত্সকরা। পরে হাসপাতাল সুপারকে গোটা বিষয়টি জানালে তারপর শুরু হয় চিকিত্সা। আর সরকারী হাসপাতালের এই ঘটনায় এদিনই তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের উর্ধতন নেতৃত্বের কাছে তাঁর অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন বলে জানা গেছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়েছে হাসপাতাল জুড়ে। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য উজ্জ্বল প্রামাণিক জানিয়েছেন, তিনি হাসপাতালের ঘটনা শুনেছেন। রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকা সত্ত্বেও যদি তাঁকে ভর্তি করা না হয়ে থাকে তাহলে তা অন্যায় হয়েছে। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অন্যদিকে, এদিন দেবু টুডু জানিয়েছেন, এদিন সকালে সমবায় নিয়ে মিছিল যাবার সময় তিনি ওই ব্যক্তিকে রাস্তার ধারে পড়়ে থাকতে দেখেন। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে তিনি তাঁকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিত্সকদের বারবার বলা সত্ত্বেও রোগীর চিকিত্সা করানো হয়নি। বারবারই জরুরী বিভাগের কর্মী চিকিত্সকরা জানাতে থাকেন পরিবারের লোক না এলে ওই রোগীর চিকিত্সা হবে না। এরপর তিনি নিজেই তাঁর পরিচয় জানিয়ে রোগীর পরিবারের বদলে তিনিই প্রয়োজনীয় সইসাবুদ করতে চান। কিন্তু তাতেও কর্ণপাত করেননি চিকিত্সকরা। এরপর গোটা বিষয়টি হাসপাতাল সুপার এবং ডেপুটি সুপারকে জানালে তাদের হস্তক্ষেপে রোগীর চিকিত্সা শুরু হয়। দেবু টুডু জানিয়েছেন, এদিন তাঁর দেহরক্ষী এবং তিনি নিজে ওই ব্যক্তিকে স্ট্রেচারে তুলে নিয়ে যান। হাসপাতালের কেউই এগিয়ে আসেননি। রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করে দেবু টুডু জানিয়েছেন, বর্ধমান হাসপাতালের এদিনের এই ঘটনায় তিনি সত্যিই বিস্মিত হয়েছেন। তিনি নিজে তাঁর পরিচয় ব্যক্ত করা সত্ত্বেও যখন এই ঘটনা ঘটেছে তখন সাধারণ মানুষদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন কি ঘটে তা সহজেই তিনি বুঝতে পেরেছেন। এব্যাপারে তিনি তাঁর উর্ধতন দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন। অপরদিকে, এদিন এই ঘটনা সম্পর্কে মেমারী ২ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মামণি মূর্মূও জানিয়েছেন, প্রতিদিনই হাসপাতালে এভাবেই সাধারণ মানুষকে হয়রানির মুখে পড়তে হয়। এব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অন্যদিকে, হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য উজ্জ্বল প্রামাণিক জানিয়েছেন, তিনি ঘটনার কথা শুনেছেন। একমাত্র মূর্মূর্ষ রোগী ছাড়া হাসপাতালের আউটডোর খোলা থাকলে সেখানেই রোগীদের প্রথম নিয়ে যাবার কথা। একমাত্র আউটডোর বন্ধ হলে তবেই সরাসরি জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়ার নিয়ম। এক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা কি ছিল বা ঠিক কি ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কে তিনি খোঁজখবর নেবেন। অন্যদিকে, জানা গেছে, ওই ব্যক্তির নাম অমর ক্ষেত্রপাল। বাড়ি গলসী থানার বড়দিঘী এলাকায়। কিভাবে তিনি বর্ধমানে এলেন সে সম্পর্কে খোঁজখবর চলছে।

Exit mobile version