আরজি কর কাণ্ডে বর্ধমানে প্রতিবাদ মিছিল, উপস্থিত ডেপুটি সিএমওএইচ-সহ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- আর জি কর কাণ্ড নিয়ে গোটা দেশের আন্দোলনের সঙ্গে এবার পূর্ব বর্ধমান জেলার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত পেশার মানুষ মিলিত হয়ে প্রতিবাদে আছড়ে পড়লেন বর্ধমানের রাজপথে। মঙ্গলবার বর্ধমানের কোর্ট চত্বরের নেতাজী মূর্তির পাদদেশ থেকে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, আশা কর্মী, মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ-সহ সমস্ত স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা মিলিত হয়ে আর জি কর কাণ্ডে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানালেন। একইসঙ্গে মহিলাদের নিরাপত্তার দাবীতেও সোচ্চার হলেন। এদিন পূর্ব বর্ধমানের ডেপুটি সিএমওএইচ (৪) সুনেত্রা মজুমদার জানিয়েছেন, আমরা তো সবদিক থেকে সমতা দাবি করি। শুধুমাত্র আমাদের দাবি নয়। এই জায়গায় আমরা স্বাস্থ্য দপ্তরে এত স্টাফ নিয়ে কাজ হয়। সেখানে আমাদের প্রত্যন্ত জায়গায় আমাদের সি এইচ ও, এন এ এম, আশা, নার্সিং স্টাফ একা কাজ করেন এবং সময় অসময়ে কাজ করেন। আজকের এই দাবি আমি একজন চিকিৎসক এবং আরজি করের প্রাক্তন ছাত্রী বলে নয়। আমার অধীনে যারা কাজ করছেন প্রত্যেক মেয়ের নিরাপত্তা সোসাইটির কাছে চাইছি। শুধু আইন করে কিন্তু এভাবে নিরাপত্তা আনা সম্ভব নয়। প্রত্যন্ত এলাকায় নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়, সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো সম্ভব নয়। সোসাইটিকে আমাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। আমাদের পাহারাদার হিসাবে সোসাইটির থাকা উচিত। এটাই আমার দাবি। তিনি জানিয়েছেন, যতটা মনে হয়েছে এটা একজনের কাজ নয়। যেহেতু আমি বর্ধমানে রয়েছি, কলকাতার ওই ঘটনা নিয়ে আমার ফাস্টহ্যান্ড নলেজ আমার নেই। তবে ওই জায়গায়, ওই রুমে আমরাও নাইট ডিউটি করেছি। আমরাও ও ভাবেই ছিলাম। ছিটকিনি লাগানোর প্রশ্ন ওঠে না। কারণ অনেক সময় রোগীর পরিজনেরা এসে ডাকেন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যারা ওখানে ডিউটি করতে যাবেন তাঁদেরকে তো নিরাপত্তা দিতে হবে। প্রশাসন যদি খুব সক্রিয়ভাবে এটা হাতে নেন তবে মনে হয় আগামী প্রজন্ম সাহস পাবে। রাজ্য সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, আমার তো মনে হয় ঠিক আছে। একটু তো সময় লাগবে। প্রথম দিকে যে প্রাথমিক ধাক্কা ছিল সেটার পরে এখন অন্তত কাজ কিছু হচ্ছে। ভাতারেও পুলিশকে জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিয়েছে। কাজ হচ্ছে না এটা বলা ভুল। কোন কোন ক্ষেত্রে সময় লাগছে। তবে আর জি করের এই ঘটনায় একজন প্রাক্তনী হিসাবে অবশ্যই দুঃখ, কষ্ট, লজ্জা লাগছে। নিজের কলেজ উপর দিকে থুথু ফেললে নিজের গায়েই পড়ে। অন্যদিকে, এদিন ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুবর্ণ গোস্বামী জানিয়েছেন, সারা দেশ জুড়ে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরেও এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। তাঁদের দাবি, যাঁরা তদন্ত ধামা চাপা দিতে চেয়েছিলেন, অর্থাৎ আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন এবং বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন তাঁদেরকে তদন্তের আওতায় এনে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে হবে। প্রকৃত দোষীদের আড়াল করা যাবে না। সময় দেওয়ার বিষয়টিতে তদন্তের ক্ষতি হবে। প্রকৃত দোষীদের আড়াল করার চক্রান্ত। তদন্ত দ্রুত করতে হবে। সবাই সব কিছু জানেন। কিন্তু যাঁদের হেফাজতে নেওয়া দরকার, জেরা করা দরকার, মেডিকেল করা দরকার সেটা করা হচ্ছে না। সেটা করতে হবে। যাঁরা ধামা চাপা দিল তাঁদের অন্য দায়িত্ব দিয়ে দিলেন। এটা আমরা মানব না। কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া যাবে না। কলকাতার মত জায়গায় যদি এই রকম হয় তাহলে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে মহিলাদের সংখ্যাই বেশি সেখানে মহিলাদের নিরাপত্তা কোথায়? তাঁদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে হবে, সিসি টিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে। রেলের জন্য আরপিএফ-এর মত হাসপাতাল সুরক্ষা বাহিনী সরকারকে তৈরি করতে হবে। হাসপাতাল প্রোটেকশন ফোর্স বা সিকিউরিটি ফোর্স। বিশেষ সুরক্ষা দল আমাদের লাগবে। ধামা চাপা দেওয়ার কাজে যুক্ত পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের পদত্যাগ করতে হবে। এই ঘটনায় একজনের কাজ এটা নয়, একাধিকজন যুক্ত। একজনকে ধরে তদন্ত গোটানোর যে চেষ্টা চলছে সেটা আমরা মানছি না। কেন আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে, কেন আত্মহত্যা প্রমাণের চেষ্টা হচ্ছে। তিনি কলেজটাকে তাঁর জমিদারি মনে করতেন। এখন আদালতের ধাক্কা খেয়ে তাঁকে রাজ্য ছুটিতে পাঠিয়েছে। এদিনের এই প্রতিবাদ মিছিলে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীদের পাশাপাশি অন্যান্য পেশার মানুষজনও অংশ নেন।