বর্ধমানের ‘কুশ’ গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই অজানা, এই গ্রামেই ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ব পুরুষরা
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- রাত পোহালেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩ তম জন্মজয়ন্তী পালিত হবে। দিকে দিকে পালিত হবে নানান অনুষ্ঠানও। কিন্তু কী অবস্থা এখন পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান ২ ব্লকের হাটগোবিন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন কুশা তথা কুশ গ্রামের? যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে এত হৈ চৈ, সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ব পুরুষের বাসস্থান ছিল এই কুশ গ্রামেই। তবে তখন তাঁদের পদবী ছিল বন্দোপাধ্যায়। কুশ গ্রামে বাহ্মণ আচার অনুষ্ঠানে খুশী হয়ে তৎকালীন মহারাজ ক্ষিতিশূর কুশ গ্রামকে উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ব পুরুষ দীননাথকে। কুশ গ্রামের অধিকারী হওয়ায় ক্রমে দীননাথ বন্দোপাধ্যায়কে কুশারী উপাধিতে ডাকা শুরু হয় – জানিয়েছেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক মানস বসু। তিনি জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ব পুরুষ এই কুশ গ্রামেই ছিলেন। আস্তে আস্তে তাঁরা যশোর থেকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েন। কুশ গ্রামের অধিকারী হওয়ার জন্য তাঁদের কুশারী পদবীতে ডাকা হতে থাকে। পরবর্তীকালে যেহেতু তাঁরা যজন যাজন, পুজো ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত হন – তাই তাঁদের ঠাকুর নামে ডাকা হতে থাকে। এরপর ব্রিটিশরা এসে এই ঠাকুরকেই উপাধি হিসাবে স্বীকৃতি দেয় ‘টেগোর’ নামে। প্রখ্যাত রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের লেখা “রবীন্দ্রজীবনী ও রবীন্দ্রসাহিত্য – প্রবেশক” বইয়ের প্রথম খন্ডেও ‘বর্ধমান জিলা’-র (বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান) ‘কুশ’ গ্রামের এই তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন মানস বসু। রাত পোহালেই গোটা দেশের সঙ্গে এই কুশ গ্রামের লাইব্রেরীতেও পালিত হবে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী (১৬২ তম জন্মবার্ষিকী)। গ্রামের শিশু, কিশোররা সেই অনুষ্ঠানে অংশও নেবে। কিন্তু এই কুশগ্রামের সিংহভাগ মানুষই জানেন না, এটাই সেই গ্রাম যেখানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ব পুরুষরা ছিলেন এবং এখান থেকেই তাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিলেন। গ্রামের প্রবীণ মানুষ বিমল মন্ডল এবং তাঁর ভাই প্রাক্তন শিক্ষক নির্মল মণ্ডল উভয়েই জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের ঠাকুর্দার কাছ থেকে শুনেছিলেন এই গ্রামেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ব পুরুষরা ছিলেন। কিন্তু সেই কথা নিয়ে তাঁরা এতটা ভাবেননি। এর যে কী গুরুত্ব তাও তাঁরা সেই সময় বুঝতে পারেননি। এখন বুঝছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, গোটা দেশ জুড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে হৈ চৈ হচ্ছে। কিন্তু তাঁর পূর্বপুরুষদের এই ইতিহাস এবং তার সঙ্গে এই কুশা গ্রাম যে যুক্ত সেই ইতিহাসকে সরকার তুলে ধরুক। তাঁরা চান গ্রামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তি বসুক। একইসঙ্গে তাঁর বংশলতিকাও লিপিবদ্ধ করা হোক। যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম জানতে পারেন ইতিহাসকে। বিমলবাবুরা জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষরা ঠিক কোথায় ছিলেন তাও তাঁদের অজানা। এখন সরকারই পারে এব্যাপারকে তুলে ধরতে। বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক মানস বসু জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা জানাতে সরকার এই গ্রামকে ঘিরে রবীন্দ্রনাথ সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে পারে। সরকার পারে এই গ্রামের ইতিহাসকে পর্যটন মানচিত্রে স্থান দিতে। এদিকে, যে রবী ঠাকুরকে নিয়ে এই আবেগ, সেই রবিঠাকুরের পূর্ব পুরুষ এই কুশ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন এই খবরে রীতিমত উৎসাহিত হয়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া। তিনি জানিয়েছেন, জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁরা এই গ্রামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি মূর্তি বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন। একইসঙ্গে তাঁর এই বংশ লতিকাকেও তাঁরা ফলকের মধ্যে লিপিবদ্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। পূর্ব বর্ধমানা জেলা পরিষদের সহকারি-সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, এটা ইতিহাস, তবে জেলার বেশীরভাগ মানুষই এই বিষয়ে অন্ধকারে রয়েছেন। আগামী দিনে জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনিকভাবে এই ইতিহাস সমস্ত মানুষের কাছে তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।