বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- জামালপুরে প্রায় ২ কোটি টাকা সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ডাটা এন্ট্রি অপারেটারের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। ধৃতের নাম ঋষিতা পাল। জামালপুর থানার কাঁসরা গ্রামে তার শ্বশুরবাড়ি। সেখান থেকেই শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে তার স্বামী সুকান্ত পালকে পুলিস গ্রেপ্তার করেছে। বর্তমানে সে পুলিসি হেফাজতে রয়েছে। আত্মসাত করা টাকায় কেনা একটি গাড়ি পুলিস বাজেয়াপ্ত করেছে। এছাড়াও ধৃতের মোবাইলটিও পুলিস বাজেয়াপ্ত করেছে। গত বছরের ২০ মে থেকে এ বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তার দু’টি অ্যাকাউন্টে ৪২ লক্ষ ৫৬ হাজার ৫১৮ টাকা জমা পড়ে বলে তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে পুলিস। আত্মসাত করা অের্থ প্রচুর সোনার গয়না সে কিনেছে বলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছে পুলিস। স্বামী গ্রেপ্তার হওয়ার পর গয়না ও অন্যান্য দামি জিনিসপত্র সে সরিয়ে ফেলেছে। শনিবার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। সোনার গয়না ও অন্যান্য দামি জিনিসপত্র উদ্ধারের জন্য এবং ঘটনার বিষয়ে জানতে তাকে ১০ দিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায় পুলিস। ধৃতকে ৭ দিন পুলিসি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন সিজেএম রতন কুমার গুপ্তা।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে আঝাপুর পঞ্চায়েতে ডাটা এন্ট্রি অপারেটার হিসাবে কাজে যোগ দেয় সুকান্ত। পরে তাকে বেড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতে বদলি করা হয়। চলতি বছরে অডিটে ইন্দিরা আবাস যোজনা ও ১০০ দিনের প্রকল্পে অর্থ নয়-ছয়ের বিষয়টি সামনে আসে। কোনও রকম বিল, ভাউচার ও অনুমোদন ছাড়াই টাকা দেওয়া হয়। অডিটে অনিয়ম ধরা পড়ায় পঞ্চায়েতের প্রধান অশোক কুমার ঘোষ জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে তিনি জানান, প্রধান ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সহায়কদের ই-টোকেন ব্যবহার করে সরকারি অর্থ তছরুপ করেছে সুকান্ত। ১০০ দিনের প্রকল্পে ৬ লক্ষ ২৫ হাজার ৩০২ টাকা বিভিন্ন স্কিমে বাড়তি পেমেন্ট করা হয়েছে। অন্যের নাম ব্যবহার করে সেই টাকা আত্মসাত করেছে সুকান্ত।
অন্যদিকে, বেড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে নির্বাহী সহায়ক মলয় চন্দন মুখোপাধ্যায় আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে তিনি জানান ১০০ দিনের প্রকল্পের ভার্মি কম্পোস্টের নামে ২৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা কোনও বিল ও ভাউচার ছাড়া পেমেন্ট করা হয়েছে। এনিয়ে পঞ্চায়েত থেকে কোনও অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ইন্দিরা আবাস যোজনাতেও ১১ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা অতিরিক্ত পেমেন্ট করা হয়েছে। অদক্ষ শ্রমিকদের দক্ষ শ্রমিক হিসাবে দেখিয়ে বাড়তি পেমেন্টের টাকা সুকান্ত হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। মাস্টার রোল তৈরির পুরো বিষয়টি সুকান্ত দেখত বলে জানিয়েছেন নির্বাহী সহায়ক।
তদন্তে নেমে পুলিস আরও জেনেছে, সুকান্ত, তার স্ত্রী ও নাবালক ছেলের নামে ৬টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। অ্যাকাউন্টগুলিতে আত্মসাত করা অর্থ জমা করা হয়। পুলিসের আবেদনের ভিত্তিতে অ্যাকাউন্টগুলির লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে ২টি পঞ্চায়েতে প্রায় ২ কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে জানতে পেরেছে পুলিস। জিজ্ঞাসাবাদে সে কয়েকজনকে আত্মসাত করা টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে, এ বিষয়ে কোনও তথ্য সে পুলিসকে দেখাতে পারেনি। তাই, তার টাকা দেওয়ার দাবি মানতে নারাজ পুলিস।