E Purba Bardhaman

অবশেষে গ্রেপ্তার কালনা মহকুমার সিরিয়াল কিলার

Police arrested Serial killer (Chain Killer) of Kalna

বিপুন ভট্টাচার্য, কালনা (পূর্ব বর্ধমান) :- এ যেন সেই ভৌতিক গল্পের মতই। আপাত সুস্থস্বাভাবিকঅত্যন্ত শান্ত। কিন্তু যখনই তার ওপর ভর করে অশরীরীআত্মা – তখনই সে হয়ে ওঠে ভয়ংকর। গল্পের এই কাহিনীর মতই পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমা এবং মেমারী থানা এলাকায় পরপর ৬ জন মহিলাকে খুন করা এবং ৩জন মহিলাকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত সেই সিরিয়াল কিলারকে অবশেষে পুলিশ জালে বন্দি করতে পারল রবিবার। সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরেই প্রথমে তাকে আটক এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার তাকে কালনা মহকুমা আদালতে তুলে ১৪ দিনের জেল হেফাজত চায় তদন্তকারী পুলিশ অফিসার। বিচারক ১২ দিনের পুলিশী হেফাজত মঞ্জুর করেছেন। ধৃতের নাম কামরুজ্জামান। তার আদিবাড়ি মুর্শিদাবাদের কালিনগর। বেশ কিছুদিন ধরেই সে কালনার নাদনঘাট থানার সুজনপুরে স্ত্রীএক মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকত। রবিবার কাঁকুড়িয়া এলাকা থেকে তাকে আটক করে এক সিভিক ভলেণ্টিয়ার। উল্লেখ্যচলতি বছরের ২ জানুয়ারী কালনার উপলতি গ্রামে মিটার রিডিং দেখার নাম করে বাড়িতে ঢুকে এক লক্ষ্মীবালা পাল নামে বৃদ্ধাকে গলায় শেকল পেঁচিয়ে খুনের চেষ্টা করে কামরুজ্জামান। এরপর মেমারীর সেগুনবাগানের বাসিন্দা মমতা কিস্কুকে (৫০এবং বড়া গ্রামের বাসিন্দা রীতা রায় (৫২নামে দুই মহিলাকে খুন করে সে। একইভাবে কালনার আনুখালা গ্রামে খুন হন পুষ্প দাস নামে এক বৃদ্ধা। গত ৩১ মার্চ কালনা থানার হাটকালনা গ্রাম পঞ্চায়েতের ধর্মডাঙা গ্রামে ইতি মণ্ডল নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার চেষ্টা চালায় সে। সর্বশেষ তার শিকার সিঙ্গারকোণের বাসিন্দা স্থানীয় বাদলা হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এইভাবেই সে গত ৩ মাসে ৬ জন মহিলাকে খুন এবং বেশ কয়েকজন মহিলাকে খুনের চেষ্টা করেছে সে। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে ছিল কালনা মহকুমা সহ বেশ কিছু এলাকা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছেএলাকায় অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের ছেলে বলেই তার পরিচিতি রয়েছে। নিজেকে বিদ্যুত দপ্তরের মিটার রিডার হিসাবে পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি ব্যবসাও করত বলে পরিচয় দিত।  পুলিশ সূত্রে জানা গেছেকামরুজ্জামান একাকী মহিলাদেরকেই নিশানা করত। এরপর বার কয়েক সেই জায়গায় রেইকি করত। এরপর সুযোগ বুঝে মিটার দেখার নাম করে ঢুকে পড়ে প্রথমে চেন দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করত। মৃত্যু নিশ্চিত করতে লোহার রড দিয়ে আঘাত করত। তারপরই হাতের কাছে যা পেতে নিয়ে পালাত।এভাবেই তার হাতে মৃত্যু হয়েছে ৬ জন মহিলার। আহত হয়েছেন ৩জন।এদিকেবিগত কয়েকমাস ধরেই কালনা ও মেমারী এলাকায় এই সিরিয়াল কিলিংএর ঘটনা ঘটলেও অপরাধীকে ধরতে না পারায় রীতিমত চাপের মুখে পড়ে যায় জেলা পুলিশ। গোটা বিষয় খতিয়ে দেখতে আসেন ডিআইজি বর্ধমান রেঞ্জ। এরপরই পুলিশ বিভিন্ন জায়গা থেকে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করতে শুরু করে। সিসিটিভি ফুটেজ কালনা মহকুমার বিভিন্ন নাকা চেকিং এলাকায় পাঠানো হয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই রবিবার বাইক নিয়ে যাবার পথে আটক করা হয় কামরুজ্জামানকে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে,যেখানে যেখানে এই ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে সেই সমস্ত এলাকায় দেখা গেছিল কামরুজ্জামানকে। তা থেকেই সন্দেহ দৃঢ় হয় পুলিশের। সোমবার ধৃত কামরুজ্জামানকে নিয়ে আসা হয় বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধৃত জেরায় খুনের কথা কবুল করেছে। তার দেখানো জায়গা থেকেই উদ্ধার হয়েছে প্রচুর পরিমাণে সোনারুপা এবং ইমিটেশনের গহনা। উদ্ধার হয়েছে খুনে ব্যবহৃত চেনটিও। পুলিশের দাবীজেরায় প্রাথমিকভাবে কামরুজ্জামান জানিয়েছেনহঠাতই তার মাথায় খুনের ইচ্ছা জাগে। আর তখনই সে এই কাজ করে। কামরুজ্জামানের এই বক্তব্য সম্পর্কে চিকিত্সকদেরও পরামর্শ গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে একের পর এক ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে গেলেও তার বাড়ির লোকজন টের না পাওয়ায় গোটা বিষয়টি রীতিমত ভাবাচ্ছে পুলিশকেও। স্বাভাবিকভাবেই তার খুন করার ইচ্ছা সম্পর্কিত যে গল্প সে পুলিশকে জানিয়েছে আদপেই তা সত্যি কিনানাকি পুলিশকেও সে ঠাণ্ডা মাথায় বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলছে সবটাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছেইতিমধ্যেই যাঁরা কামরুজ্জামানের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন আহত সেই সমস্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকেও পুলিশ কামরুজ্জামানের বিষয়ে জানতে চাইবে। একইসঙ্গেখুনের পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনাও কতটা কাজ করেছে সে সম্পর্কেও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

Exit mobile version