কাটোয়া, ৬ ফেব্রুয়ারিঃ- কাটোয়ায় ৩ বছরের নাবালিকাকে যৌন নিপীড়ন চালানোর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মেয়েটির মায়ের প্রেমিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কালনা ও কাটোয়া থানার পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করে। কালনা থানার বুলবুলি তলা থেকে পুলিশ তাকে ধরে। সেই সময় নাবালিকার মা অভিযুক্তের সঙ্গেই ছিল। রাতেই বর্ধমানের চাইল্ড ওয়েল ফেয়ার কমিটির তত্ত্বাবধানে থাকা নাবালিকার কাছে দু’জনকে আনা হয়। সেখানেই মেয়েকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। ক্রোধে প্রেমিকের গালে কষে চড়ও মারেন নাবালিকার মা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম আমির শেখ। মুর্শিদাবাদ জেলার শক্তিপুর থানার কাটাইকোনা গ্রামে তার বাড়ি। বুধবার ধৃতকে কাটোয়ার এসিজেএম আদালতে পেশ করা হয়। তদন্তের স্বার্থে ধৃতকে পুলিশি হেপাজতে নেওয়ার আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার। ধৃতকে ৫ দিন পুলিশি হেপাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে এসিজেএম আদালত। এদিনই বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নির্যাতিতা নাবালিকার গোপন জবানবন্দী রেকর্ড করায় পুলিশ। প্রসঙ্গত গত ২৪ ডিসেম্বর কাটোয়ার গোঁয়াই গ্রামে রেল লাইনের পাশে জমি থেকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ৩ বছরের নাবালিকাকে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে কাটোয়া থানার পুলিশ নাবালিকাটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভরতি করে। বেশ কিছুদিনের চিকিৎসায় মেয়েটি সুস্থ হয়। নাবালিকা উদ্ধারের দিনই কাটোয়া থানার পুলিশ ধর্ষনের কেস রুজু করে। পরে খুনের চেষ্টা এবং জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টের ২৩ নম্বর ধারাও কেসে যুক্ত করেছে থানা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আমির পেশায় জামা-কাপড় ফেরিওয়ালা। সেই সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় তার যাতায়াত আছে। কাপড় জামা বিক্রি করতে সে নাবালিকাটির হুগলীর হরিপাল থানা এলাকায় মেয়েটির বাড়িতে যেত। যাতায়াতের ফলে নাবালিকাটির মায়ের সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর নাবালিকাটির মাকে সে ফুসলে নিয়ে দিল্লি পালায়। এরপর পথের কাঁটা মেয়েটিকে পৃথিবী থেকে সরাবার পরিকল্পনা করে আমির। মুম্বই থেকে তারা কাটোয়ায় আসে। ২৩ ডিসেম্বর কাটোয়া স্টেশনে নাবালিকাটিকে নিয়ে দু’জনে পৌঁছায়। মেয়েটির মাকে স্টেশন চত্বরে বসিয়ে রেখে মেয়েটিকে বিস্কুট কিনে দেওয়ার কথা বলে সে নিয়ে যায়। সেখানে মেয়েটিকে যৌন নিপীড়ন করে। যৌনাঙ্গ থেকে রক্ত ক্ষরণের ফলে মারা গিয়েছে ভেবে সেখানেই মেয়েটিকে ফেলে পালায় সে। ফিরে এসে মেয়ে হারিয়ে গিয়েছে বলে জানায়। বিভিন্ন জায়গায় মেয়েটিকে খোঁজার ভনিতাও করে সে। মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে তার মাকে কান্না কাটিও করতে দেখেন স্টেশন চত্বরের কয়েকজন ফল বিক্রেতা। মেয়েটির হদিশ না পেয়ে দু’জনে ফের দিল্লিতে ফিরে যায়। কিছুদিন আগে মেয়ে মারা গিয়েছে ধরে নিয়ে তার পারলৌকিক ক্রিয়া সারতে দু’জনে বুলবুলি তলায় আসে। সেখানে তারা ভাড়া বাড়িতে স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকতে শুরু করে। কীভাবে কিনারা সম্ভব হল ঘটনার? কাটোয়া থানার ওসি সনৎ দাস বলেন, আত্মীয়স্বজনের কাছে মেয়ে মারা গিয়েছে বলে প্রচার করেছিলেন নাবালিকাটির মা। তখন থেকেই মেয়েটির মায়ের গতিবিধির উপর নজর রাখা হচ্ছিল। নানা সূত্রে আমিরের সঙ্গে মেয়েটির ভালোবাসার সম্পর্কের কথা জানা যায়। পথের কাঁটা মেয়েটিকে সরিয়ে দিতেই তার মায়ের প্রেমিক আমির খুনের পরিকল্পনা করে।