বর্ধমান, ০১ ফেব্রুয়ারিঃ- রায়নার সিপিএম নেতা শেখ কওসর আলিকে ফের পুলিশি হেপাজতে নেওয়ার আবেদনের শুনানি হলনা। রায়না থানার অস্ত্র আইন লঙ্ঘনের একটি মামলায় তাকে এবং তার সঙ্গী আলাউদ্দিন কাজিকে ৭ দিন পুলিশি হেপাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল বর্ধমানের সিজেএম আদালত। পুলিশি হেপাজতে থাকা অবস্থায় ধৃতদের দেখানোমতো কওসরের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি ডোবা থেকে ২ টি কারবাইন, ২ টি নাইন এম এম পিস্তল, ২০ টি কারতুজ এবং ৩ টি ম্যাগাজিন উদ্ধার হয়। পুলিশি হেপাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর শুক্রবার ধৃতদের ফের আদালতে তোলা হয়। এর আগেই মাধবডিহি থানার কাইতিতে দুই তৃণমূল কর্মীকে খুন হওয়ার ঘটনায় কওসরকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে সেই কেসে তাকে এদিন ৭ দিন পুলিশি হেপাজতে নেওয়ার আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার। ধৃতদের হয়ে সওয়ালে অংশ নেওয়া এক ঝাঁক আইনজীবী পুলিসি হেপাজতে নেওয়ার আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করেন। আদালতে কওসরের আইনজীবীরা জানান, ডাক্তারি পরীক্ষার সময় রায়না হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখানোর পরামর্শ দেয়। কিন্তু, রায়না থানা সেই পরামর্শ শোনেনি। কওসর বুকে যন্ত্রণা অনুভব করছে বলে আদালতে জানায় তার আইনজীবীরা। সিজেএম সেলিম আহমেদ আনসারিও অভিযুক্তের কাছে তার শারীরিক সমস্যার কথা জানতে চান। তার বুকে যন্ত্রণা হচ্ছে বলে সিজেএমকে জানায় কওসর। এর পরই পুলিশি হেপাজতে নেওয়ার আবেদনের শুনানি মুলতুবি রেখে কওসর এবং আলাউদ্দিনকে জেল হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন সিজেএম। পাশাপাশি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কওসরকে পরীক্ষা করানোর জন্য বর্ধমান জেলা সংশোধনাগারের সুপারকে নির্দেশ দেন সিজেএম। অস্ত্র আইন লঙ্ঘনের মামলায় অবশ্য ধৃতদের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল হেপাজতে রাখার নির্দেশ দেন সিজেএম। মাধবডিহি খুনের মামলায় কওসরকে শনিবার ফের কোর্টে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
গত শুক্রবার ভোরে রায়নার পলেমপুরে কওসরের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে এবং আলাউদ্দিঙ্কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাড়ি থেকে ১ টি কারবাইন, ১ টি নাইন এম এম পিস্তল, ২ টি ম্যাগাজিন এবং ৩৭ টি কারতুজ উদ্ধার হয় বলে পুলিশের দাবি। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর মাধবডিহি থানার কাইতিতে দলের কর্মীসভায় যোগ দিয়ে ফেরার পথে সিপিএমের হামলায় ২ জন তৃণমূল কর্মী মারা যান। কাইতি বাজারের কাছাকাছি সদানন্দ মোড়ের কাছে সভা ফেরত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের উপর লাঠি, তীর, বল্লম, বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সিপিএমের লোকেরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। হামলায় শেখ সারাফত আলি এবং শেখ আতাউল নামে দুই তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়। হামলায় বেশ কয়েকজন জখম হয়। সেই কেসে এফ আই আর-এ কওসরের নাম ছিলনা। তদন্তে নেমে ঘটনায় কওসরের জড়িত থাকার কথা জানতে পারে পুলিশ। মাধব ডিহির ঘটনায় সে জড়িত ছিল বলে জেরায় সে স্বীকার করেছে বলে পুলিশের দাবি।
এদিন সিপিএম নেতাকে দেখতে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। রায়নার বিধায়ক বাসুদেব খাঁ, সিপিএম জেলা সম্পাদকের স্ত্রী সহ বহু নেতা-নেত্রী ধৃত নেতাকে দেখতে আদালত চত্বরে সকাল থেকে ভিড় জমান। গন্ডগোলের আশঙ্কায় প্রচুর সংখ্যক পুলিশ কর্মী আদালত চত্বরে মোতায়েন করা হয়। পুলিশি হেপাজত এড়াতে অসুস্থতার ট্র্যাডিশন চলছেই। সে আরাবুল হন অথবা কওসর পুলিশি হেপাজত এড়াতে একই ফর্মূলা।