বর্ধমান, ২৫ জানুয়ারিঃ- রায়নার ‘ত্রাস’ সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য শেখ কওসর আলিকে অবশেষে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। শুক্রবার ভোরে রায়না থানার পলেমপুরে তার বাড়িতে হানা দিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তার এক সঙ্গীকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ধৃত সিপিএম নেতার বাড়ি থেকে একটি নাইন এম এম পিস্তল, একটি নাইন এম এম কার্বাইন, ৩ টি ম্যাগাজিন এবং ৩৭ টি কারতুজ উদ্ধার হয়েছে। ধৃত অপর জনের নাম আলাউদ্দিন কাজি। রায়না থানারই মাছখান্ডায় তার বাড়ি। পুলিশের দাবি, ধৃতরা দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র কেনা-বেচায় জড়িত। রায়না, খন্ডঘোষ এলাকায় গ্রাম দখলের লড়াইয়ে ধৃতরাই বিভিন্ন গোষ্ঠীকে অস্ত্র সরবরাহ করত বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে। অস্ত্রকারবারে তাদের জড়িত থাকার কথা ধৃতরা পুলিশের কাছে কবুল করেছে। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বিহার প্রভৃতি জায়গা থেকে অস্ত্র এনে তারা বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করত বলে পুলিশের জেরায় ধৃতরা কবুল করেছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের সন্ত্রাস নিয়ে সরব হচ্ছেন সিপিএমের তাবড় নেতারা। দলের নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মণ্ডলের উপর হামলার ঘটনায় জড়িত তৃণমূলের বিধায়ক আরাবুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সোচ্চার হন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। দলেরই এক জোনাল কমিটির সদস্যের বাড়ি থেকে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র এবং কারতুজ উদ্ধারের ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে সিপিএম। যদিও দলের নেতার গ্রেপ্তারের পরই তড়িঘড়ি সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন জেলা সম্পাদক অমল হালদার। সিপিএমের জেলা সম্পাদকের দাবি, কওসর এবং তার সঙ্গীকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসব করা হচ্ছে। পুলিশই অস্ত্র ঢুকিয়ে মামলা সাজিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করব। আরাবুল ইসলামকে লোক দেখানো গ্রেপ্তার করে সিপিএমের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় পুলিশ ফাঁসাচ্ছে। শুধু অস্ত্র উদ্ধারের মামলাতেই নয় রায়নার জোতসাদি গ্রামে বোমাবাজি, লুটতরাজ এবং মাধবডিহি থানার কাইতিতে দুই তৃণমূল কর্মীকে খুনের মামলাতেও তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে এদিনই ধৃতদের বর্ধমানের সিজেএম আদালতে পেশ করে পুলিশ। অস্ত্র কারবারে জড়িত গ্যাংয়ের বাকিদের হদিশ পেতে এবং আরও অস্ত্র উদ্ধারের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে ধৃতদের ১৪ দিন পুলিশি হেপাজতে নেওয়ার আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার। অন্যদিকে ধৃতদের হয়ে সিপিএমের গণতান্ত্রিক আইনজীবী সংঘের এক ঝাঁক আইনজীবী জামিনের আবেদনের পক্ষে সওয়াল করেন। আদালতে ধৃতের বাড়ি ভাঙচুর এবং তার স্ত্রীর উপর পুলিশি অত্যাচার নিয়ে সরব হন আইনজীবীরা। অন্যদিকে সরকারি আইনজীবী চন্দ্রনাথ গোস্বামী পুলিশি হেপাজতের পক্ষে জোরদার সওয়াল করেন। দু’পক্ষের সওয়াল শুনে ভারপ্রাপ্ত সিজেএম ভাস্কর মজুমদার ধৃতদের ৭ দিন পুলিশি হেপাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
পুলিশি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২ জানুয়ারি রায়না থানার জোতসাদি গ্রামে ব্যাপক বোমাবাজি হয়। কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর এবং লুটপাটও চলে। সেই ঘটনায় তৃণমূল নেতা নিয়ামল হক মণ্ডলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রায়নায় গ্রাম দখলের লড়াইয়ে কওসরের অস্ত্র সরবরাহের কথা জানতে পারে পুলিশ। এর পরই বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পুলিশ কওসরের বাড়িতে হানা দেয়। দরজা বন্ধ থাকায় পুলিশ তার ঘরে ঢুকতে পারেনি। সিপিএমের জেলা সম্পাদককে ফোন করে তার কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই সে দরজা খোলে। এরপই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তল্লাশিতে বাড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, কারতুজ উদ্ধার হয়। আগ্নেয়াস্ত্র মুড়ে রাখার কাজে ব্যবহৃত হিন্দী সংবাদপত্রের সূত্র ধরে অস্ত্রগুলি কোথা থেকে আনা হয়েছে সে বিষয়েও তদন্ত করছে পুলিশ। কয়েকমাস আগে মাধবডিহি থানার কাইতি গ্রামে দুই তৃণমূল কর্মী শেখ সারাফত আলি এবং শেখ আতাউলকে খুনের ঘটনাতেও কওসর জড়িত বলে পুলিশ জানিয়েছে।
শুধু এই তিনটি মামলাই নয়, বাম আমলে তৃণমূল কর্মীদের উপর হামলা, বোমাবাজির একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রায়নার বাঁধগাছার তৃণমূল কর্মী শেখ সাবির আলিকে পিটিয়ে মারার মামলাতেও তার নাম রয়েছে। রায়নার হাসমত আলি এবং কাজল মোল্লাকে গুলি করে মারার ঘটনাতেও পুলিশের পাশাপাশি তার নামও জড়ায়। বাম আমলে তার বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা থাকলেও পুলিশ তাকে স্পর্শ করার সাহস পায়নি।