বর্ধমান, ০৩ জানুয়ারিঃ- শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ এবং রেজিষ্টার্ড কর্মরত শিক্ষাকদের এক বৎসরের ব্রীজ কোর্স ও দুই বৎসরের ডি এল এড কোর্স সংক্রান্ত কর্মসূচী -র উদ্বোধন
করলেন উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এর উদ্যোগে, সর্বশিক্ষা মিশন এবং বর্ধমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সহোযোগিতায় বর্ধমান শহরের উৎসব ময়দানে একটি কর্মশালার মাধ্যমে এই কোর্স এর সূচনা হ’ল। শিক্ষামন্ত্রী উদ্বোধনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে ধরে রাখতে হবে। শিক্ষার উৎকর্ষ বাড়াতে হবে।এই উদ্দেশ্যে কয়েকটি পদক্ষেপও নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে একটা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ। পাঠক্রমকে আনন্দময় করে রাখা খুব জরুরী।পড়ার আতঙ্ক এবং ভীতি জনক পরিবেশ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বের করে আনাই শিক্ষকদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। একজন ডাক্তারের ভুলে যেমন রোগীর মৃত্যু হতে পারে, একজন বাস্তুকারের ভুলে যেমন সেতু ভেঙে শতশত মানুষের মৃত্যু হতে পারে, তেমনি একজন শিক্ষকের ভুল শিক্ষায় একটা জাতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। অর্থনীতিবীদ অ্যাডামস্মিথ এর প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন যেমন একজন অর্থনীতিবিদের দারিদ্রতা মোচন করা ছাড়া অন্য কোনো দায়িত্ব থাকতে পারে না, তেমনি একজন শিক্ষকের শিক্ষাদান করা ছাড়া অন্য কোনো দায়িত্ব থাকতে পারে না।বুনিয়াদি বা প্রাথমিক শিক্ষাই সবথেকে বড় সম্পদ, এটা দেওয়াই সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ।তাই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও আবেদন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের বেতন স্কেল সবথেকে বেশি রাখা উচিৎ। কারণ, তাঁরা জাতি তৈরী করে, তাঁদের উপরই নির্ভর করে একটি শিশু কেমন ভাবে গড়ে উঠবে। এরপর বিগত রাজ্য সরকারকে এক হাত নিয়ে বলেন, ৩৪ বছর ধরে শিক্ষক মানে হয়ে উঠেছে পাইয়ে দেওয়া, পাইয়ে দিতে হবে। পাইয়ে দেওয়ার, দেওয়া-নেওয়ার রাজনীতি বন্ধ করুন। আমাদের রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যদেরও বলছি, দাবি দাওয়া নিয়ে আসবেন না। সরকার সরকারের মত বুঝে নেবে। কেন্দ্রীয় সরকার যে শিক্ষার অধিকার আইন করেছে, সরকার-শিক্ষক-শিশু এই তিনের মধ্যে একটা সেতু তৈরি করেই সেই উদ্দেশ্য সফল হবে। শিক্ষার অধিকার আইনে এন সি টি ই –র নিয়োম অনুযায়ী ২০০০ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে নিয়োগ হওয়া ৭৫ হাজার শিক্ষককে উপযুক্ত শিক্ষিত করতে হবে। না হলে তাঁরা ভবিষ্যতে শিক্ষকতা করতে পারবেন না। এই সমস্যার সমধানেই আজকের এই কর্মশালা। যাঁদের এক বছরের পিটিটিআই ট্রেনিং নেওয়া আছে তাঁদের আর এক বছরের ব্রিজ কোর্স করতে হবে এবং যাদের কোনো ট্রেনিং নেই তাঁদের দুই বছরের ডিএলএড কোর্স করেতে হবে। দুই ধরণের শিক্ষাই হবে দূর শিক্ষার মাধ্যমে। তা না হলে স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। বর্ধমান, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে এধরণের শিক্ষকের সংখা যথাক্রমে ৪৯১১, ২৫২৮,৬২৭০ এবং ৭১৪০ জন। আগের সরকার এই সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্বোগই নেয়নি। এব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের সমলোচনা করতেও মন্ত্রী ছাড়েননি।ব্রাত্য বাবু বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এই আইন মানতে আমরা পাঠ্যক্রম তৈরি করে কেন্দ্রকে পাঠিয়ে ছিলাম, অনুমোদন পেয়েছি। কারিক্যুলামের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইগনু সহোযোগিতা করবে বলেও, পরে হাত তুলে নেয়। চলতি প্রবাদ ‘ভাত দেওয়ার নাম নেই, কিল মাড়ার গোসাই’ এর কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তখন ঠিক করে ছিলাম দুই বছরের মধ্যেই আমরা পাড়ব। এবং সেই মডেল এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। শিক্ষকদের কাছেও হাতজোড় করে অনুরোধ নিরলস পাঠ দান করে শিশুদের ভবিষ্যৎ তৈরি করুন। সরকারও নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। জেলায় জেলায় মডেল স্কুল তৈরী হচ্ছে। ৩ কিমি অন্তর প্রাথমিক স্কুল হচ্ছে। শিক্ষদের উপর নজরদারি করতে ইনস্পেক্সন চালু হবে। ১৫ জন বয়স্ক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, ডি আই, এস আই –দের নিয়ে ইনস্পেক্সন টিম তৈরি হবে। অবাক লাগে যে, এতদিন ডিআই –রা ইনস্পেক্সন ছাড়া সবই করতেন। প্রত্যেক শিক্ষককে মডেল খাতা দেওয়া হবে। শিক্ষকরা কতগুলো ক্লাস নিলেন, কী–কী করলেন খুঁটিনাটি সব ঐ খাতায় লিখে রাখবেন। ইনস্পেক্সন টিম তিন মাস অন্তর ইনস্পেক্সন করে বছেরের শেষে আমাদের সাথে বসবেন। অনেক তঞ্চকতা, প্রতারণা হয়েছে আমাদের জাতীর সঙ্গে। আর করা চলবে না। এসব একদম বরদাস্ত করা হবে না।
এদিনের সভায় উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রী ছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য, বর্ধমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষ সংসদের সভাপতি ডঃ দেবাশীষ নাগ, এ ডি এম (সাধারণ) সরদ দ্বিবেদী সহ প্রমুখ শিক্ষা ব্যক্তিত্ত্ব উপস্থিত ছিলেন।