বর্ধমান, ১৯ জুনঃ- বর্ধমান শহরের বড়নীলপুর এলাকায় দলের পার্টি অফিসে হামলা চালানোয় এবং মহিলা কর্মীদের শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সুজিত ঘোষ ও তাঁর ৬ সঙ্গীর জামিন হলনা। গত বৃহস্পতিবার বর্ধমান থানার পুলিশ সাত জনকে গ্রেপ্তার করে। পরের দিন ধৃতদের বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। ধৃতদের জেল হেপাজতে পাঠিয়ে বুধবার ফের আদালতে পেশের নির্দেশ দেন সিজেএম। একই সঙ্গে কেস ডায়েরিও পেশের নির্দেশ দেন সিজেএম। সেইমতো এদিন ধৃতদের আদালতে পেশ করা হয়। ধৃতদের হয়ে বিশ্বজিৎ দাস, কমল দত্ত সহ এক ঝাঁক আইনজীবী জামিনের আবেদনের পক্ষে সওয়াল করেন। পুলিশ ধৃতদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের কথা জানিয়েছে। কিন্তু, সেগুলি সুজিতের তিন দেহরক্ষীর এবং আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সও আছে বলে জানান অভিযুক্তদের আইনজীবীরা। অভিযুক্তদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে জানান আইনজীবীরা। সরকারি আইনজীবী চন্দ্রনাথ গোস্বামী জামিনের আবেদনের বিরোধীতা করে সওয়াল করেন। কিন্তু, অভিযুক্তদের আইনজীবীদের গলার আওয়াজে সরকারি আইনজীবীর সওয়াল শোনা যাচ্ছিলনা। এই সময়ই সরকারি আইনজীবীর সমর্থনে এগিয়ে আসেন আইনজীবী স্বপন বন্দ্যোপাধায়্য। কেসের অভিযোগকারীর পক্ষ নিয়ে তিনি জামিনের আবেদনের জোরদার বিরোধিতা করেন। তাঁর সওয়াল করার কোনও এক্তিয়ারই নেই বলে চিৎকার জুড়ে দেন অভিযুক্তদের আইনজীবীরা। আইনজীবীদের বাকবিতন্ডায় কোনও পক্ষের বক্তব্যই ঠিকমতো শোনা যাচ্ছিলনা। দুপক্ষের বাকযুদ্ধে বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে আদালতের কাজকর্ম। অভিযুক্তদের আইনজীবীরা সিজেএমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বেশ কিছুক্ষণ বিতণ্ডার পর শেষমেশ জামিন বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন সিজেএম সেলিম আহমেদ আনসারি। ধৃতদের জেল হেপাজতে পাঠিয়ে ২৫ জুন ফের আদালতে পেশের নির্দেশ দেন সিজেএম।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সুজিত তাঁর দলবল নিয়ে তৃণমূল পার্টি অফিসে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। অফিসে থাকা তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মারধোর করার পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। এমনকি মহিলা কর্মীদের শ্লীলতাহানিও করা হয়। ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী রঞ্জন পালিত থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়েই পুলিশ সাত জনকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের মধ্যে সুজিতের তিন ব্যক্তিগত দেহরক্ষীও আছে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া দুটি বন্দুক এবং একটি পিস্তল দেহরক্ষীদের বলে দাবি করেছেন তাদের আইনজীবীরা।
পুলিশের বিশেষ স্নেহধন্য সুজিতকে গ্রেপ্তার করার ঘটনায় শহরে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়। পুলিশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে মঞ্চ আলো করে থাকতে দেখা যেত। দলের বিভিন্ন সভায় খাবার জোগানো এবং লোক জড়ো করার ব্যাপারে দল তার উপর অনেকটাই নির্ভর করত। সুজিতের পক্ষ নিয়ে কাজকর্ম করায় জেলায় তার বিরোধী এক মন্ত্রী পুলিশের ভূমিকায় খোলাখুলি সমালোচনা করেছেন বহুবার। তা সত্ত্বেও পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি এতদিন। দলের এক শীর্ষ নেতার নির্দেশেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়েছে বলে পুলিশেরই সূত্রে জানা গিয়েছে।