বর্ধমান, ৯ মার্চঃ- চার্জশিট পেশ হওয়ার ১৫ মাস পর রায়নার বাঁধগাছার তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সাবের আলি মন্ডল (৫০) -কে পিটিয়ে মারার ঘটনায় ফের তদন্তের নির্দেশ দিল বর্ধমানের সিজেএম আদালত। সিপিএমের রায়নার নেতা শেখ কওসর আলি, উত্তম ঘোষ, মুন্সি রবিয়েল হোসেন, বর্ধমানের নেতা অরূপ চট্টোপাধ্যায়, তমাল চট্টোপাধ্যায়, এস এফ আই -এর তৎকালীন জেলা নেতা সোমশুভ্র রায় সহ আরও কয়েকজনের নাম বাদ দিয়ে আদালতে চার্জশিট পেশ করেছিল পুলিশ। এনিয়ে কেসের অভিযোগকারীর মতামতও নেওয়া হয়নি। এবিষয়ে তাঁকে কিছু জানানোও হয়নি। আরও কিছু তথ্য মেলার কথা জানিয়ে কেসটি রি-ওপেন করার জন্য বুধবার আদালতে আবেদন জানান বর্ধমান থানার আই সি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়। মৃতের ছেলে সেলিম মণ্ডলও পুলিশের পেশ করা চার্জশিটের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে আদালতে পিটিশন দাখিল করেন। ফের তদন্তের আরজি জানান তিনি। সিজেএম সেলিম আহমেদ আনসারি সেই আবেদন মঞ্জুর করে শুক্রবার ফের তদন্তের নির্দেশ দেন। বাম আমলে অভিযুক্ত সিপিএম নেতাদের নাম বাদ দিয়ে আদালতে চার্জশিট পেশ করেছিল পুলিশ। পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হয়। সরকার পরিবর্তনের পর আরও তদন্তের প্রয়োজনের কথা জানিয়ে আদালতে আবেদন জানানোয় ফের প্রশ্ন চিহ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা। পঞ্চায়েত এবং পুরসভা নির্বাচনের আগে সিপিএমকে চাপে রাখতেই শাসক দলের নির্দেশে চার্জশিট হওয়া একটি মামলাকে পুলিশ চাগিয়ে তুলতে চাইছে বলে রাজনৈতিক মহলের অনুমান।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্ধু শেখ রেজেল ওরফে বেগুকে দেখতে যান সাবের আলি। তাঁর ছেলে সেলিম এবং অশোক রায় নামে আরও একজন সঙ্গে ছিলেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে পৌঁছানো মাত্র কওসরের নেতৃত্বে সিপিএমের লোকজন সাবের আলিকে প্রচন্ড মারধর করে। মারধরের ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে সিপিএমের লোকজন তাঁকে হাসপাতালের কাছেই রাজ কলেজে টেনে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে ফের মারধর করা হয়। মারধরের কথা পুলিশকে না জানানোর হুমকি দিয়ে সিপিএমের লোকজন তাঁকে রিক্সায় চাপিয়ে দেয়। রিক্সাটিকে তিনকোনিয়া বাস স্ট্যান্ডে নিয়ে যেতে বলা হয়। বাসে চেপে পলেমপুরে পৌঁছান সাবের আলি। বাসস্ট্যান্ডে তিনি বমি করতে শুরু করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানতে পেরে পরিবারের লোকজন তাঁকে শহরের তৃণমূল নেতা সমীর রায়ের কাছে নিয়ে আসেন। সমীর বাবু উদ্যোগ নিয়ে তাঁকে বর্ধমান হাসপাতালে ভরতি করেন। সেখানেই গভীর রাতে তিনি মারা যান।
বাবার মৃত্যু নিয়ে এক ছেলে সুমন মন্ডল বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে কোনও সিপিএম নেতার নাম ছিলনা। পরে ২১ আগস্ট মৃতের অপর ছেলে সেলিম সিজেএম আদালতে মামলা করেন। সিজেএম কেস শুরু করে তদন্তের জন্য বর্ধমান থানার আই সি-কে নির্দেশ দেন। কিন্তু, অভিযোগটি অতিরঞ্জিত বলে আদালতে আই সি রিপোর্ট দেন। তার ভিত্তিতে সিজেএম কেস শুরু করে তদন্তের বিষয়ে আগের নির্দেশ খারিজ করে দেন। সিজেএমের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সেলিম জেলা ও দায়রা আদালতের দ্বারস্থ হন। আবেদনটি পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন জেলা জজ । ২০০৯ সালের ১২ জানুয়ারি পঞ্চম জেলা ও দায়রা বিচারক বিনোদ কুমার শ্রীবাস্তব সিজেএমের নির্দেশ খারিজ করে দেন। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। হাইকোর্টের বিচারপতি পার্থসখা দত্ত দু’টি এফ আই আর-কে যুক্ত করে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সেলিমের বক্তব্য যেন প্রথম এফ আই আরের তদন্তকারী অফিসার উপেক্ষা না করেন সে ব্যাপারেও নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তদন্ত করে ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর সাব ইন্সপেক্টর রনবীর বাগ আদালতে চার্জশিট পেশ করে। তাতে এফ আই আরে নাম না থাকা চারজনের নাম রাখেন তদন্তকারী অফিসার। সিপিএম নেতাদের নাম বাদ যায় চার্জশিট থেকে। সেলিমের আইনজীবী উদয় শংকর কোনার এবং অজয় দে বলেন, হাইকোর্ট মৃতের ছেলের বয়ান রেকর্ড করার কথা বললেও সেই নির্দেশ মানেননি তদন্তকারী অফিসার। সিপিএম নেতাদের বাঁচিয়ে আদালতে চার্জশিট পেশ করা হয়েছিল। তাই, নতুন করে তদন্তের আবেদন জানানো হয়। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে।