মঙ্গলকোট, ২৭ ফেব্রুয়ারিঃ- মঙ্গলকোট থানার পূর্বনওয়া পাড়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে অপহরণের পর এক ব্যক্তিকে খুনের ঘটনায় বর্ধমান থানার পুলিশ এক জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম আলতাফুর শেখ। পূর্বনওয়া পাড়াতেই তার বাড়ি। মঙ্গলবার রাতে মঙ্গলকোট থানার ঝিলু থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারি এড়াতে সে গা-ঢাকা দিয়েছিল। বুধবার ধৃতকে বর্ধমানের সিজেএম আদালতে পেশ করা হয়। জড়িত বাকিদের ধরতে এবং খুনের বিষয়ে আরও তথ্য পেতে ধৃতকে ৫ দিন পুলিশি হেপাজতে নেওয়ার আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার। সিজেএম সেলিম আহমেদ আনসারি সেই আবেদন মঞ্জুর করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খুনের ঘটনার কিছুদিন আগে এলাকায় কর্তৃত্ব কায়েম নিয়ে নওয়া পাড়ায় তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার নেয়। তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিট এবং বোমাবাজি চলে। গত ২১ জানুয়ারি নওয়া পাড়ার তৃণমূল সমর্থক শেখ সফিক বর্ধমানে কাজে আসেন। তিনি ভাঙা জিনিসপত্র কেনা-বেচার ব্যাবসা করতেন। বর্ধমানে কাজ সেরে দুপুরেই তাঁর বাড়ি ফেরার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ের অনেক পরেও বাড়ি না ফেরায় চিন্তিত হয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী হামিদা বিবি। এরই মধ্যে গ্রামেরই মনোয়ার কাজীর কাছে একটি ফোন আসে। অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি ফোনে জানায়, নওয়া পাড়ারই জিয়ার মল্লিকের নেতৃত্বে কয়েকজন বর্ধমান স্টেশন এলাকা থেকে সফিককে অপহরণ করেছে। ভাইয়ের খুনি সন্দেহে সফিককে জিয়ার ও তার সঙ্গীরা খুন করবে বলে হুমকি দেয়। এরপর হামিদা বিবি স্বামীকে ফোন করেন। কিন্তু, স্বামীর পরিবর্তে জিয়ার ফোনটি ধরে হামিদা বিবিকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে। সফিক খুন করে লাশ গায়েব করে দেওয়ার হুমকি দেয়। ২২ জানুয়ারি বর্ধমান থানার মীর্জাপুর এলাকায় ডিভিসি ক্যানেল পাড়ের ঝোপ থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির মৃত দেহ উদ্ধার হয়। খবর পেয়ে হামিদা থানায় এসে মৃত দেহটি তাঁর স্বামীর বলে শনাক্ত করেন। স্বামীর দেহ উদ্ধারের আগের দিনই হামিদা বিবি মঙ্গলকোট থানা অপহরণের মামলা রুজু করে। পরে সেই মামলাতেই খুনের ধারা জুড়ে দেওয়া হয়।
খুনের ঘটনার বেশ কিছুদিন পরেও পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে না পারায় মৃতের মা হাফিজা বিবি বর্ধমানের সিজেএম আদালতে মামলা করেন। তার ভিত্তিতে সিজেএম কেস শুরু করে তদন্তের জন্য বর্ধমান থানার আই সিকে নির্দেশ দেন। মৃতের মায়ের দাবি, সিপিএমের কর্মী হওয়ায় রাজনৈতিক শত্রুতার কারনে তৃণমূলের লোকজন তাঁর ছেলেকে খুন করেছে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও আদালতে নালিশ জানান তিনি। ধৃতের আইনজীবী উদয় শংকর কোনার বলেন, মৃতের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলকোট থানা একটি কেস রুজু করে। সেই মামলাটি বর্ধমানে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন কাটোয়ার এসিজেম। তার ভিত্তিতে বর্ধমান থানা কেস রুজু করে। অন্যদিকে মৃতের মায়ের আদালতে দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে একই ঘটনায় অপর একটি কেস রুজু করে বর্ধমান থানা, দুটি মামলা একসঙ্গে চলতে পারেনা। দুটি মামলার পরিবর্তে একটি মামলা করার জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছি।