বর্ধমান, ১৯ ফেব্রুয়ারিঃ- বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে খুন হলেন এক গৃহবধূ। তাঁকে খুনের অভিযোগে প্রেমিকের শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে বর্ধমান থানার পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে খুনে ব্যবহৃত রক্তমাখা একটি ছুরি। পুলিশের অনুমান, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কারণেই এই খুনের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম পূর্ণিমা মাঝি ওরফে রাখি পন্ডিত (৩০)। কাটোয়ার বিজয়নগরে তাঁর আদি বাড়ি। তাঁর স্বামী বিকাশ পন্ডিত পেশায় রিক্সা চালক। রাখী বর্ধমান শহরের অফিসার্স কলোনীতে পরিচারিকার কাজ করতেন। কর্মসূত্রে সপরিবারে তিনি বর্ধমান শহরের ছোটনীলপুর আমবাগান এলাকায় থাকতেন। ১৫ বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তাঁর ২ টি ছেলেও আছে। ধৃত মহিলার নাম পুতুল রায়। শহরেরই বড়নীলপুর বটতলা এলাকায় তার বাড়ি। বর্ধমান থানার আই সি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার কারণেই ওই গৃহবহূকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে মৃতার প্রেমিকের শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মৃতদেহ উদ্ধারের জায়গা থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে একটি ঝোপ থেকে খুনে ব্যবহৃত রক্ত মাখা ছুরিটি উদ্ধার হয়েছে। খুনের কেস রুজু করে বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে পেশায় শহরেরই একটি বরফ কলের কর্মী সন্তোষ রায়ের সঙ্গে রেখার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এনিয়ে দু’টি পরিবারের অশান্তি চলছিল। তা সত্ত্বেও দু’জনের সম্পর্কে ফাটল ধরেনি। উলটে ইদানীং দু’জনের মেলামেশা আরও বেড়ে যায়। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সন্তোষের পরিবার। সে ঘরজামাই থাকে। খুনের ঘটনার দিন দুয়েক আগে তার স্ত্রী পদ্মা এবং শাশুড়ি পুতুল রেখার বাড়ি গিয়ে তাঁকে সম্পর্ক ত্যাগ করতে বলে। এনিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়। কথা না শুনলে রেখাকে খুনেরও হুমকি দেওয়া হয়।
অন্যান্য দিনের মতো সোমবার বিকালেও কাজে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন রেখা। বাড়িতে ফিরতে দেরি হবে বলে পরিবারের লোকজনকে তিনি জানিয়ে যান। রাত ৮ টা নাগাদ বর্ধমান থানার পালা শ্রীরামপুর এলাকায় ডিভিসি-র ক্যানেলের পাড়ে গলার নথি কাটা এক মহিলার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এক বাইক আরোহী দেহটিকে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের জানান। খবর পেয়ে পুলিশ দেহটি তুলে আনে। এরপর অনেক রাতেও স্ত্রী বাড়িতে না ফেরায় বর্ধমান থানায় ডায়েরি করতে যান বিকাশ। মৃত দেহ উদ্ধারের কথা জেনে সেটি তাঁর স্ত্রীরই বলে তিনি শনাক্ত করেন। এরপর তাঁর বক্তব্য শুনে খুনে পুতুলের জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে পারে পুলিশ। গভীর রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে নিয়েই তল্লাশি চালিয়ে খুনে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করে পুলিশ। রাস্তার অনেক জায়গায় রক্ত এবং বমি পড়েছিল। তা থেকে পুলিশের অনুমান, আচমকা নলিকাটা যাওয়ার পর বাঁচার মরীয়া চেষ্টা করেছিলেন রেখা। দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু, কিছুদূর যাওয়ার পরই তাঁর মৃত্যু হয়। সংসারে অশান্তি থেকে বাঁচতে সন্তোষই রেখাকে পালা শ্রীরামপুর এলাকায় ডেকে পাঠায়। পরে শাশুড়ি সহ আরও কয়েকজনের সাহায্যে তাঁকে খুন করা হয় বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে। ধৃতের স্বামী পরিমল রায়, মেয়ে পদ্মা রায় এবং জামাই সন্তোষ রায় –এর খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।