বর্ধমান, ২২ জুনঃ- লিগ্যাল এইড সার্ভিসের পরিকাঠামো উন্নতির দাবি উঠল সংস্থার আঞ্চলিক সম্মেলনে। আর সেই দাবি তুললেন বিভিন্ন জেলা থেকে সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিচারক এবং সদস্য সচিবরা। পরিকাঠামো নিয়ে সমালোচনা চলাকালীন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন স্টেট লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটির এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান, হাইকোর্টের বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত। পরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সমস্যা গুলির সমাধানের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন সংস্থার এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান।
শনিবার থেকে বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে শুরু হয়েছে স্টেট লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটির দুদিনব্যাপী আঞ্চলিক সম্মেলন। সম্মেলনে হাইকোর্টের দুই বিচারপতি ছাড়াও বর্ধমান, বীরভূম ও হুগলীর জেলা জজ, বিচারক এবং জেলা লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটির সদস্য সচিবরা অংশ নেন। খেটে খাওয়া, গরীব মানুষের কাছে নিখরচায় আইনি পরিষেবা কীভাবে আরও ভালোকরে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে সে ব্যাপারে জেলা সংস্থার সদস্য সচিব ও বিচারকদের কাছে জানতে চান এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান। প্রাথমিকভাবে নিখরচায় আইনি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ ও কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে সেকথাই তুলে ধরেন তিন জেলার জেলা জজ। একই ভাবে লিগ্যাল এইডের জেলার সদস্য সচিবরাও কর্মসূচীর বিষয়গুলিই তুলে ধরতে গেলে তাতে আপত্তি জানান এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান। লিগ্যাল এইড পরিষেবাকে আরও উন্নত করতে করনীয় বিষয় এবং সমস্যা নিয়ে বক্তব্য রাখার জন্য জেলার প্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই পরিকাঠামো নিয়ে সরব হয় হুগলী ও বীরভূম জেলার প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেন, অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের দিয়ে জেলায় লিগ্যাল এইডের অফিস চলছে। সারাদিন মামলা নিয়ে ব্যস্ত থাকার পর বিচারকদের লিগ্যাল এইডের কাজ করতে হয়। সদস্য সচিবরাও আদালতের অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাই, স্থায়ী সদস্য সচিব প্রয়োজন। লিগ্যাল এইডের নিজস্ব গাড়ি নেই। ফলে, গ্রামাঞ্চলে ক্যাম্প করতে যেতে অসুবিধা হয়। লিগ্যাল এইডের প্যানেলভূক্ত আইনজীবীদের মান এবং মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রতিষ্ঠিত আইনজীবীরা লিগ্যাল এইডের প্যানেলভূক্ত হতে চাননা। আর প্যানলভূক্ত আইনজীবীদের অনেকেই মামলা লড়ার তেমন অভিজ্ঞতা না থাকায় বিচারপ্রার্থীরা আস্থা হারান বলেও সভায় কেউ কেউ জানান। তাছাড়া মামলার দায়িত্ব নিয়েও সওয়ালে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আইনজীবীদের অনীহা আছে বলে মত প্রকাশ করেন বিচারকদের কেউ কেউ। আইনজীবীদের ফি বাড়ানোর জন্য দাবিও তোলা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত ঠিকমতো সহযোগিতা করছেনা। এর ফলে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কাজে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে ভেবে কিছু কিছু পঞ্চায়েত লিগ্যাল এইডের কাজে সাহায্য করছেনা। লিগ্যাল এইডের কাজকর্মের বিষয়ে পঞ্চায়েতের প্রধান এবং বিডিওদের উদ্বুদ্ধ করার ব্যাপারেও জোর দেন অনেকেই। এনিয়ে বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, লিগ্যাল এইডের জন্য জেলায় সদস্য সচিব নিয়োগ খুব শীঘ্রই হবে। সমস্যা গুলি নিয়ে অবশ্যই ভাবা হবে। তবে, বিচারকদের মনে রাখতে হবে, আমরা এখন অনেক টাকা বেতন পাচ্ছি। অনেক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি। কোর্ট রুমে ঢোকার পর পরিবারের চিন্তা ত্যাগ করতে হবে। কাজের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। আইনজীবীদের ছাড়া বিচার ব্যবস্থা ভাবা সম্ভব নয়। তাই, আইনজীবীদের লিগ্যাল এইডের হয়ে মামলা লড়ার ব্যাপারে বোঝাতে হবে। সাজার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে অথচ জেলে রয়েছে এমন বন্দিদের তালিকা তৈরীর ব্যাপারে জেলা লিগ্যাল এইড দপ্তরকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি যেসব সাজাপ্রাপ্তের আপিলের শুনানি হাইকোর্টে হয়নি তাদেরও তালিকা তৈরীর নির্দেশ দেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়।