বর্ধমান, ০২ জানুয়ারীঃ- বাঙালি যুবকদের ফুটবলে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন মোহন বাগানের হয়ে ত্রিমুকুট জেতা এবং জাতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার বিদেশ বসু। বুধবার বর্ধমানের মোহনবাগান মাঠে সর্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন তিনি। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিদেশ বলেন, ফুটবলে চারিদিকে এখন বিদেশিদের রমরমা। বিদেশিরাই এখন এদেশের ফুটবলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এটা অত্যন্ত লজ্জার। অথচ আগে এমন ছিল না। সত্তরের দশকে সুরজিৎ সেনগুপ্ত, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌতম সরকার, সুধীর কর্মকার, সুভাষ ভৌমিকের মতো ফুটবলাররা ছিলেন। বাঙলার ফুটবলাররা তখন দাপিয়ে ফুটবল খেলতেন। সর্বভারতীয় পর্যায়েও গুরদেব সিং, মনজিৎ সিং, হরজিন্দর সিং, পারমারের মতো ফুটবলাররা দেশের হয়ে চুটিয়ে খেলতেন। ফুটবলকে ঘিরে তখন একটা আলাদা ক্রেজ ছিল। কিন্তু, এখন ফুটবল সম্পর্কে বাঙালির আগ্রহ কমেছে। অনেকেই বলেন, সেই সময় স্পোর্টস কোটায় চাকরি হত। এখন স্পোর্টস কোটায় চাকরির সুযোগ কমেছে। একথা যেমন ঠিক, তেমনই এখন ফুটবলে টাকা এসেছে। এখন ফুটবল খেলে কোটি টাকা আয় করা যায়।
তাঁর মতে, ক্রিকেটের কারনেই ফুটবল সম্পর্কে বাঙালির আগ্রহ কমেছে। এদিন হাতে গোনা কয়েকজন দর্শক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের দেশের সেরা টুর্নামেন্টের খেলা দেখতে মাঠে হাজির ছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার বলেন, কয়েকজন ক্রিকেটার এলেই মাঠ দর্শকে ভরে যেত। কিন্তু, ভুললে চলবেনা ২৫ বছরে একটা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় উপহার দিতে পেরেছে আমাদের রাজ্য। অথচ বহুনামী ফুটবলার এরাজ্য থেকে উঠেছেন। ফুটবলকে নিয়ে মানসিকতা বদলাতে হবে।
নিজের উদাহরন তুলে ধরে বিদেশ বলেন, বর্ধমান জেলার কালনার প্রত্যন্ত গ্রামে আমার জন্ম। ফুটবল সম্রাট পেলের বিরুদ্ধে খেলার কথা স্বপ্নেও ভাবিনি। পেলের মতো ব্যক্তিত্বের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি ফুটবলার হওয়ার সুবাদেই। উত্তেজনায় ম্যাচের তিন দিন আগে থেকে ঘুম উড়ে গিয়েছিল। টাকা হয়ত খুব বেশি পাইনি। কিন্তু, ২৮ টি চাকরি পেয়েছিলাম। ফুটবলার হওয়ার জন্যই এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সুযোগ পেয়েছি। এটাও কম সম্মানের নয়। তবে, দল নির্বাচনের জন্য ট্রায়ালের পদ্ধতির সমালোচনা করেন তিনি। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল দল নির্বাচনের ট্রায়ালের উদাহরণ তুলে ধরে বিদেশ বলেন, ৭১ সালে ট্রায়ালে এসেছিলাম। ৩০০ –র মতো ফুটবলার ট্রায়াল দিতে নেমেছিল। মাত্র ১০ মিনিট দেখেই আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এত কম সময়ে একজন ফুটবলারের মান নির্নয় করা যায় না। তবে, ৭৩ সালে তাঁকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় খেলার জন্য ডেকেছিল। কিন্তু, তার আগেই বাংলার জুনিয়র দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করায় এবং অন্য খেলোয়ারকে সুযোগ করে দিতেই তিনি সেই ডাক ফিরিয়ে দেন বলে জানান একদা দেশের দ্রুততম লেফট উইঙ্গার।
অনুষ্ঠানে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ স্মৃতি কুমার সরকার বলেন, খেলায় একদল জিতবে অপর দল হারবে। এনিয়ে মন খারাপ করলে চলবেনা। স্পোর্টসম্যান স্পিরিটটাই আসল। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দলগুলি এসেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা খেলোয়াড়রা নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিয়ে টুর্নামেন্টটিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং প্রানবন্ত করে তুলবে বলে আশাপ্রকাশ করেন উপাচার্য। তবে, অংশগ্রহণকারী দলগুলিকে নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলার পরামর্শও দেন তিনি।অনুষ্ঠানে সাইয়ের ইনচার্জ অনন্ত ঘোষ, প্রাক্তন ফুটবলার গৌরাঙ্গ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।