বর্ধমান, ২১ জানুয়ারিঃ-হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে প্রয়াত সিপিএম নেতা প্রদীপ তা –র পরিবারের নিরাপত্তা বাড়ানো হ’ল। সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ বাবু এবং জেলা নেতা কমল গায়েনের খুনের ঘটনার পরই এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দেওয়ান দিঘীতে একটি পুলিশ ক্যাম্প খোলা হয়। এতদিন সেই ক্যাম্পে ২ জন এ এস আই এবং ৪ জন কনস্টেবল ডিউটিতে থাকতেন। যদিও তারপর এলাকায় তেমন গণ্ডগোল হয়নি। তা সত্ত্বেও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন প্রদীপ বাবুর স্ত্রী চিত্রলেখা তা এবং মেয়ে পৃথা তা। তাঁদের নানাভাবে ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে এবং খুনের ঘটনায় অধরা অভিযুক্তরা এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে হাইকোর্টে নালিশ জানান তাঁরা। এরপরই প্রধান বিচারপতি অরুন কুমার মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচিকে নিয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ দু’জনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে চিত্রলেখা এবং পৃথা-র নিরাপত্তা জোরদার করতে ইতিমধ্যেই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পের শক্তি বাড়ানো হয়েছে। ক্যাম্পে রেডিও ট্রান্সমিটার সিস্টেমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্যাম্পের এক জন করে কনস্টেবল পুলিশের পোশাকে তাঁদের বাড়ির সামনে মোতায়েন রাখা হবে। এছাড়াও সন্ধ্যে থেকে এক এ এস আই এবং ২ জন কনস্টেবল বাড়ির সামনে টহল দেবে। এরই পাশাপাশি বর্ধমান থানার টহলদারি ভ্যানও এলাকায় বিশেষ নজরদারি চালাবে। গোয়েন্দা পুলিশও পরিস্থিতির উপর সব সময় নজর রাখবে। বর্ধমান থানার আই সি, রিজার্ভ ইন্সপেক্টর এবং এস ডি পি ও বিশেষভাবে প্রয়াত সিপিএম নেতার পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবেন। এদিকে, নিরাপত্তা নিয়ে প্রয়াত সিপিএম নেতার স্ত্রী এবং মেয়ে যে অভিযোগ করেছেন তা সর্বৈব মিথ্যা বলে দাবি করেছে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। সোমবার বিকালে এই ইস্যুতে এলাকায় মিছিল বের করা হয়। এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি সিপিএমের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়ার ডাক দেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃনমূলের যুব নেতা নুরুল হাসান বলেন, প্রদীপ বাবুর মেয়ে এবং স্ত্রী নিরাপত্তা নিয়ে যেসব কথা বলছেন তা ঠিক নয়। দু’জনকে কেউই ভয় দেখায়নি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বাজার গরম করতেই এমন করা হচ্ছে। আমাদের দল খুনের রাজনীতি করেনা। দু’জনের প্রতি এলাকার মানুষের যথেষ্ট সহানুভূতি রয়েছে। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মীর্জা বলেন, দেওয়ান দিঘি ক্যাম্পে আরও ৪ জন কনস্টেবল দেওয়া হয়েছে। বাড়ির সামনে পুলিশও দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কয়েকজন পুলিশ অফিসারের ফোন নম্বরও দু’জনকে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন বুঝলেই তাঁরা সেই সব অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। চিত্রলেখা দেবী গলসির স্কুলে শিক্ষকতা করেন। সেখানকার ওসিকেও তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে বলেছি।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান থানা এলাকার দেওয়ানদীঘিতে খুন হন সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ তা এবং জেলা নেতা কমল গায়েন। খুনের ঘটানায় জড়িত ২২ জনের নাম উল্লেখ করে বর্ধমান থানায় অভিযোগ করেন প্রদীপ বাবুর আত্মীয়। পুলিশের তদন্তে সন্তোষ প্রকাষ না করায়, তদন্ত ভার গ্রহণ করে সি আই ডি। পুলিশ এবং সি আই ডি ২২ জনের মধ্যে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে ৮ জনকে পলাতক এবং তিন জন ঘটনায় জড়িত এমন কোনও প্রমান না পাওয়ায় ঐ তিন জনের নাম বাদ দিয়ে সি আই ডি চার্জশিট জমা দেয়। বর্তমানে ২ জন জেলে আছেন। বাকি ন’জন জামিনে মুক্ত।