বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ফের দুর্ঘটনার কবলে যাত্রীবাহী বাস। শুক্রবার সকালে ভাতারের ভূমশোর এলাকায় এই দুর্ঘটনার জেরে আহত হয়েছেন কমবেশী প্রায় ১০ জন। জানা গেছে, এদিন সকালে বর্ধমান থেকে কাটোয়া যাবার পথে বাসটি ভাতারের ভুমশোরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় নয়ানজুলিতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দ্রুতগতিতে যাওয়ার সময় সামনের চাকা ফেটে গেলে দুর্ঘটনার কবলে পরে বাসটি। বাসে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জন যাত্রী ছিলেন। ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসে ভাতার থানার পুলিশ। এদিকে, গত ২১ দিনে চারবার যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনার ফলে এখনও পর্যন্ত মারা গেছেন ২ জন। আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ জন বাসযাত্রী। চারটি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই প্রাথমিক ভাবে উঠে আসে বাসগুলির যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়টি। আর এর পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি কোনো রকমের রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়ায় ছুটছে সরকারী-বেসরকারী যাত্রীবাহি বাস। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ডিসেম্বর ভাতারের ভুমশোড় মোড়েই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বর্ধমান থেকে কাটোয়াগামী যাত্রীবাহী বাস। আহত হন প্রায় ২০ জন। গত ৮ জানুয়ারী কাটোয়ার ননগর এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পরে দধিয়া-কাটোয়া ভায়া পাচুন্দি রুটের যাত্রীবাহী বাস। দুর্ঘটনায় মারা যান ২ জন। আহত হন প্রায় ১০ জন। ১১ জানুয়ারী গলসীর সারুল মোড় দুর্ঘটনার কবলে পরে কলকাতা-রামপুরহাট রুটের দক্ষিনবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার যাত্রীবাহী বাস। আহত হন ৪ জন। আর এরপর ফের শুক্রবার সকালে ভাতারের ভূমশোড়ে বাস দুর্ঘটনা ঘটল। এদিকে, বারবার এই দুর্ঘটনার জেরে ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাগাতার হানাদারী চলছে। শুক্রবারও বর্ধমানের লক্ষ্মীপুর মাঠ এলাকায় পুলিশ ও পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিকরা বেশ কয়েকটি বাসের ছাদে ওঠার সিঁড়ি কেটে দিয়েছেন। করা হয়েছে বেশ কয়েকটি বাসকে জরিমানাও। অন্যদিকে, এদিন বর্ধমান জেলা বাস এ্যাসোসিয়েশনের সংযুক্ত সম্পাদক তুষার ঘোষ জানিয়েছেন, বাসের ছাদে ওঠার সিঁড়ি মোটেও অবৈধ নয়। কারণ তাঁদের যে ফর্ম পূরণ করতে হয় তাতে যাত্রী-সহ লাগেজ নিয়ে যাবার কথা জানন আছে। আর সেই লাগেজ নিয়ে যাবার জন্যই ছাদে সিঁড়ি ব্যবহার করা হয়। অবশ্যই তিনি এদিন জানিয়েছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হতে পারে ছাদে যাত্রী তুলবেন না। তাঁরা নিশ্চয়ই তা মানবেন। তিনি জানিয়েছেন, কাটোয়ার দুর্ঘটনার পর তাঁরা সমস্ত বাস মালিককে সিঁড়ি কেটে দেবার নির্দেশ দিয়েছেন। তুষারবাবু জানিয়েছেন, বারবার এই দুর্ঘটনার পিছনে অন্যতম কারণ রাস্তায় বেপরোয়া ‘স্পিড ব্রেকার’ বা হাম্প। তিনি জানিয়েছেন, বর্ধমান থেকে কাটোয়া ৫২ কিমি রাস্তায় রয়েছে ১৬০ টি হাম্প। এরফলে প্রায়শই বাসের সামনের মূল পাতি ভেঙে যাচ্ছে। যার ফলেই দুর্ঘটনা ঘটছে। বর্ধমান থেকে আরামবাগ ৪২ কিমি রাস্তায় প্রায় ৫০ টিরও বেশি হাম্প রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এই হাম্প থাকায় একদিকে যেমন রাস্তা খারাপ হচ্ছে তেমনি বাসের যন্ত্রাংশও খারাপ হচ্ছে – দুর্ঘটনার অন্যতম এটা একটা কারণ। এরসঙ্গে রয়েছে বাস রুটে অবৈধভাবে টোটো, অটো, ম্যাক্সি, ট্যাক্সি চলাচল। তিনি জানিয়েছেন, এমনিতেই বাস চালানো এখন লোকসানের মুখে। তার ওপর প্রতিদিনই বাড়ছে প্রতিযোগিতা। তুষার ঘোষ জানিয়েছেন, সবমিলিয়ে তাঁরাও চান সুস্থভাবে দুর্ঘটনা মুক্ত গাড়ি চলাচল করুক। আগামী সোমবার এব্যাপারে জেলা পরিবহণ আধিকারিক বৈঠক ডেকেছেন। বৈঠকে তাঁরা তাঁদের সমস্যার কথা জানাবেন।
Check Also
বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …