বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- রাজ্যের শস্যগোলা বর্ধমান। আর সেই বর্ধমান তথা পূর্ব বর্ধমান জেলার রাইসমিলগুলি রীতিমত ধুঁকলেও কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের উদাসীনতায় এবং দুই সরকারের জোড়া ফলায় বিদ্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত জেলার রাইসমিলগুলি। সরকারী পর্যায়ে বারবার আবেদন জানালেও আজ পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি রাইস মিলারদের। শুক্রবার থেকে বর্ধমান শহরের কল্পতরু মাঠে শুরু হল রাইস প্রো-টেক এক্সপো ২০২২। দেশ বিদেশের প্রায় ১৭০টি আধুনিক যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী সংস্থা এই মেলায় অংশ নিয়েছেন বলে এদিন জানিয়েছেন, বর্ধমান জেলা রাইস মিল এ্যাসোসিয়েশনের কার্য্যকরী সভাপতি তথা এই মেলা কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক। এদিন তিনি জানিয়েছেন, বর্ধমান জেলায় কমবেশী প্রায় ৫০০ রাইসমিল রয়েছে। কিন্তু ২০১৬ সালের পর রাইসমিলের উৎপাদন খরচ বা মিলিং চার্জ ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানালেও আজও রাজ্য সরকার এব্যাপারে কোনো সুরাহা করেনি। এছাড়াও যেভাবে প্রতিদিন পেট্রোল, ডিজেলের দাম বাড়ছে তাতে পরিবহণ খরচও বাড়ছে তাঁদের। কিন্তু এই পরিবহণ খরচ বাড়ানার দাবীও দীর্ঘদিন ধরেই উপেক্ষিত। ফলে সবমিলিয়েই রাইস মিলগুলি ধুঁকছে। এরই মাঝে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার আতপ ও গোবিন্দভোগ চাল যা বিদেশেও রপ্তানি হয়, তার ওপর ২০ শতাংশ ডিউটি চার্জ বাড়িয়েছে। ফলে এই চাল বিদেশে রপ্তানি হতে পারছে না। এরফলে জেলার প্রায় ৩০০ রাইসমিল সংকটে পড়েছে। আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, এব্যাপারে তাঁরা বারবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। আশা করছেন মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই সুরাহা করবেন। উল্লেখ্য, শুক্রবার নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই এদিন এই মেলার উদ্বোধন করেন রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। যদিও এরপর ফের আর একবার প্রদীপ জ্বালিয়ে মেলার উদ্বোধন করা হয়। প্রথমবার স্বপন দেবনাথের সঙ্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিধায়ক শম্পা ধাড়া। দ্বিতীয়বার মেলার উদ্বোধনে হাজির ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু, জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা, জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন, পুরসভার পুরপিতা পরেশ চন্দ্র সরকার, জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ মেহেবুব মণ্ডল, জেলা খাদ্য নিয়ামক অসীম নন্দী, সাধারণ সম্পাদক সুব্রত মণ্ডল প্রমুখরা। সম্প্রতি দুর্গাপুরের প্রশাসনিক সভায় এসে বর্ধমান শহরের রাইস মিলগুলিকে এক ছাতার তলায় আনতে ফুড পার্ক তৈরীর নির্দেশ দিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেই প্রসঙ্গে এদিন আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, বর্ধমান শহরে প্রায় ২৫টি রাইস মিল রয়েছে। এই মিলগুলি যখন তৈরী হয়েছিল তখন বসতি ছিল না। কিন্তু বর্তমানে উপচে পড়ছে বসতি। স্বাভাবিকভাবেই মিলের ছাই, জল নিয়ে প্রতিনিয়তই নানান অভিযোগ বাড়ছে। এর হাত থেকে বাঁচতে তাঁরাই গত ৫ বছর ধরে রাজ্য সরকারের কাছে এই ফুড পার্ক তৈরী বা শহরের রাইসমিলগুলিকে এক ছাতার তলায় আনার দাবী জানাচ্ছেন রাজ্য সরকারের কাছে। এছাড়াও জেলার বন্ধ থাকা রাইসমিলগুলিকে চালু করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে একটি কমিটিও তৈরী হয়। সেই কমিটির পক্ষ থেকে একবার বৈঠকও হয়। কিন্তু তারপর আর কিছু এগোয়নি। ফলে মিলাররা যে তিমিরে ছিলেন সেই তিমিরেই আটকে রয়েছেন। এদিন এই এক্সপোতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ামক অসীম কুমার নন্দী জানিয়েছেন, বর্ধমান জেলায় ৫০০-র কাছাকাছি রাইস মিল থাকলেও মাত্র ১০০ থেকে ১১০টি মিল রাজ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে। বাকিদেরও এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও অসীমবাবু এদিন প্রস্তাব দেন, রাইস মিল সংযুক্ত বিভিন্ন সহযোগী শিল্পও তৈরী করা হোক। জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলাও এদিন একই প্রস্তাব রাখেন। অন্যদিকে, এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে দেবু টুডু রীতিমত কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হন। তিনি বলেন, কেবল বাংলাকেই বঞ্চনা করা হচ্ছে। যেহেতু বাংলাতেই আতপ ও গোবিন্দভোগ চাল বেশী তৈরী হয় তাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই ২০ শতাংশ ডিউটি চার্জ বসানো হয়েছে এই চালের ওপর। উল্লেখ্য, এদিন এই এক্সপো থেকে রাইস মিল এ্যাসোসিয়েশনের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে একটি স্মরণিকাও প্রকাশ করা হয়। ১৯২১ সালে এই এ্যাসোসিয়শনের প্রতিষ্ঠা হয় বলে জানিয়েছেন, মেলা কমিটির আহ্বায়ক তথা এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত মণ্ডল।
Check Also
বর্ধমান টাউন হলে শুরু হলো লিটল ম্যাগাজিন মেলা, চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- শুক্রবার থেকে শুরু হলো ‘বর্ধমান লিটল ম্যাগাজিন মেলা ২০২৪’। বর্ধমান টাউন …