জামালপুর (পূর্ব বর্ধমান) :- “আচমকাই চিঠি। আপনি ভারতে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করেননি।” আর তাতেই ঘুম উড়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের। কড়া নেড়েছে লোকসভা ভোট। আর তার প্রাক্কালে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়িতে পৌঁছেছে আধার কার্ড সংক্রান্ত চিঠি। আর সেই চিঠিকে কেন্দ্র করেই রাজনৈতিক উত্তেজনার পাশাপাশি তীব্র আতঙ্ক ছেয়ে গেছে গ্রামবাসীদের মধ্যে। জানা গেছে, কারও চিঠিতে যেমন বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় তথ্য না দেওয়ার জন্য, কারও আধার তথ্য আপডেট না করার জন্য আবার কারও ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার জন্য আধার নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বেশ কয়েকদিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করছিলেন, লোকসভা ভোটের আগে বাংলাতেও এনআরসি, সিএএ নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করতে চাইছে। এমনকি বৃহস্পতিবারও বিধানসভায় তিনি অভিযোগ করেন, অনেক জায়গায় আধার কার্ড বাতিল করে দিচ্ছে (কেন্দ্র) যাতে মানুষ ভোট দিতে না পারেন। আর এই অভিযোগের মাঝেই পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের বহু বাসিন্দা চিঠিতে জানতে পারলেন তাঁদের আধারকার্ডকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই জামালপুর ব্লকের জৌগ্রাম, আবুজহাটি এলাকায় প্রায় ৬০ জনের কাছে ডাকযোগে ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ইউআইডিএআই)-এর রাঁচির আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এই ব্লকের আবুজহাটি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের জুহিহাটি গ্রামের প্রায় ৫০ জন এমন চিঠি পেয়েছেন বলে জানা গেছে। জৌগ্রামের অনেকের কাছেও এই চিঠি এসেছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, যাঁদের কাছে এই ধরনের চিঠি এসেছে তাঁরা সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছেন। গ্রামবাসী রবীন্দ্রনাথ সরকার জানিয়েছেন, চারদিন আগে চিঠি এসেছে। দুজনের আধার কার্ড বাতিল। রেশন বন্ধ, ব্যাংকের টাকা তুলতে পারছেন না। রেশন দোকান, ব্যাংক কোথাও আঙুলের ছাপ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা আধার কার্ড বাতিল না হয় এটাই চাইছেন। এনআরসি নিয়ে আতঙ্কে আছেন। তাঁর পরিবারের ২০০০ সালের রেশন কার্ড আছে। সেখান থেকে দুজনের কার্ড বাতিল হলো কী করে? তাঁরা সব থেকেই বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছেন। আধার কার্ডটাই প্রধান। এতদিন তাঁরা যে ভোট দিয়েছেন তাহলে সেই ভোটগুলো কেনো বাতিল হয়নি? তাঁদের ভোট নিয়েই তো সবকিছু হয়েছে। তাঁরা ভারতের নাগরিক। পূর্ব পুরুষ থেকে নয়, দীর্ঘদিন এখানে বসবাস করছেন। ৩০-৩৫ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে এসে বসিরহাটে, তারপর ১০-১১১ বছর আগে বর্ধমানে এসেছেন। প্রিয়া সরকার, পুতুল সরকার, বিপুল বিশ্বাস, লিপিকা বিশ্বাস-সহ কয়েকজন জানিয়েছেন, কেন এভাবে আধার কার্ড ডিঅ্যাক্টিভেট হয়েছে বুঝতে পারছেন না। এমনকি তাঁদের রেশন, ব্যাংকের লেনদেন-সহ আধার নির্ভর কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গ্রামবাসী লাভলী বিশ্বাস জানিয়েছেন, তিনদিন আগে পোস্ট অফিস থেকে বাড়িতে আধার কার্ডের চিঠি এসেছে। ব্যাংকে, রেশনে কাজ হচ্ছে না। সমস্যায় রয়েছেন। ছেলেমেয়েদের আধার কার্ড বাতিল হয়েছে। তাঁদের দুই পরিবারের ৩০ জনের মধ্যে ১৬ জনের চিঠি এসেছে। যদিও যাদের কাছে এই চিঠি এসেছে তাঁরা কেউ সরাসরি, কেউ আবার ঘুরপথে যে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। অন্যদিকে, এব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিত দাস জানিয়েছেন, সারা ভারতের মানুষ উদ্বিগ্ন। এই সরকার কখন কী করছে নিজেরাই জানেনা। কিছুদিন আগে সিএএ লাগু করবে বলেছিল, সেটাই করছে। গ্রামবাসীরা চিন্তায় আছেন, বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন। এই সরকারের খামখেয়ালীপানা বেড়েই চলেছে। এদের উদ্দেশ্যটা কী। এদের নেতারা সিএএ নিয়ে বারবার বাংলার মানুষকে হুমকি দিচ্ছেন। তারই প্রাথমিক ধাপ হিসাবে এটা বলে তাঁদের মনে হচ্ছে। এটা চক্রান্ত। যদিও এই ঘটনা নিয়ে অহেতুক চিন্তা না করার জন্য জানিয়েছেন, বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র। তিনি জানিয়েছেন, জামালপুরে কয়েকটা গ্রামে প্রায় ১০০ মানুষের আধার কার্ড বাতিল নিয়ে যে চিঠি এসেছে এতে ভয়ের কিছু নেই। এতে ষড়যন্ত্রের কোনও বিষয় নেই। আধার কার্ড হয়েছে ২০১৪ সালে, ১০ বছর হয়ে গেছে। তখন সেভাবে ডকুমেন্টস ভেরিফিকেশন হয়নি। এবার সেই তথ্য আপডেটের প্রয়োজন। কেউ বেঁচে আছেন, কেউ বাইরে চলে গেছেন। তাই কেন্দ্র সরকার কিছুদিন আগে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল এই তথ্য আপডেটের জন্য। সেই কাজ করে নিলে এই নোটিশ আসত না। মৃত্যুঞ্জয়বাবু জানিয়েছেন, এরাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের মানুষকে ভয় দেখিয়ে রাজনীতি করছে। চুরি-দুর্নীতি রোধ করতে এই আপডেট দরকার। এদিকে, এব্যাপারে আবুঝহাটি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রমজান শা জানিয়েছেন, তিনি গতকাল বিষয়টি শুনে আজ সকালেই বাড়িগুলোতে গিয়েছিলাম। ২৮এ ধারায় নোটিশ পেয়েছে এমন পরিবারের সদস্যরা চিন্তায় রয়েছেন। অনেকের রেশন বন্ধ হয়ে গেছে। কারো কারো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে, টাকা তুলতে পারছেন না। তাঁরা এখন হতাশাগ্রস্ত, চিন্তাগ্রস্ত। অনেকেরই এনআরসি হয়ে গেছে বলে মনে করছেন। এব্যাপারে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জামালপুরের বিধায়ক অলোক কুমার মাঝি, ব্লক সভাপতি মেহমুদ খান-সহ জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। ওনারা বিষয়টা দেখছেন। স্পিড পোস্টে কিছু নোটিশ এসেছে। কেন্দ্র সরকার এনআরসি, সিএএ লাগু করার চেষ্টা করছে -মানুষ এই আতঙ্কে রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, আধার অথরিটি সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করে কার্ডগুলো সচল করার জন্য আমরা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সবরকম চেষ্টা করব। তিনি জানিয়েছেন, বিডিও-কে বিষয়টা জানানো হয়েছে। উনিও বিষয়টি দেখছেন। তিনি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ৫০ টারও বেশি পরিবারের খোঁজ পেয়েছেন। বাংলার প্রতি কেন্দ্র সরকারের একটা চক্রান্ত চলছে। এব্যাপারে জামালপুরের বিডিও পার্থসারথী দে জানিয়েছেন, আবুঝহাটি ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু বাড়িতে চিঠি এসেছে বলে তাঁরা খবর পেয়েছেন। তাঁদের কাছে অফিসিয়ালভাবে এখনও কিছু আসেনি। তবে তাঁরা বিষয়টা খতিয়ে দেখছেন। অন্যদিকে, লোকসভা ভোটের আগে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রীতিমতো রাজনৈতিক পারদ তুঙ্গে উঠেছে বর্ধমানে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশও গোটা বিষয়টি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নজরে এনেছেন বলে জানা গেছে।
Tags Aadhaar Aadhaar card Bangladeh Citizen Bangladesh Bangladesh Citizenship Bangladeshi Bangladeshi citizen Bangladeshi citizens Bangladeshi Citizenship CAA Citizens of Bangladesh Citizens of India Citizenship Citizenship Act Citizenship Amendment Act India citizen Indian citizen Indian citizens Indian Citizenship National Register of Citizens National Register of Citizens of India NRC UIDAI Unique Identification Authority of India unique identity number
Check Also
বর্ধমান টাউন হলে শুরু হলো লিটল ম্যাগাজিন মেলা, চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- শুক্রবার থেকে শুরু হলো ‘বর্ধমান লিটল ম্যাগাজিন মেলা ২০২৪’। বর্ধমান টাউন …