বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- গণনা কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মী এবং রাজনৈতিক তথা প্রার্থীর কাউন্টিং এজেন্ট থেকে বাইরের লোকরা যাতে নিজের কেন্দ্র ছেড়ে অন্য কেন্দ্রে ঢুকে পড়তে না পারেন তার জন্য নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েকটি নির্বাচনে ভোট গণনা কেন্দ্রে এই ধরনের একাধিক অভিযোগ আসায় কীভাবে এর মোকাবিলা করা সম্ভব তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে জেলা প্রশাসন। জানা গেছে, এরপরই জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, যেহেতু প্রতিটি লোকসভার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ৭টি করে বিধানসভা। তাই প্রতিটি বিধানসভার জন্য তাঁরা আলাদা আলাদা ‘রং’ চালু করবেন। এর ফলে একটি বিধানসভার ভোট গণনার সঙ্গে যুক্ত কর্মী থেকে রাজনৈতিক দলের কাউন্টিং এজেন্টরা অন্য বিধানসভায় ঢুকলেই তাঁরা জানতে পারবেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার অধীন বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার জন্য তাঁরা নির্দিষ্ট করেছেন হালকা সবুজ স্টিকার দেওয়া সচিত্র পরিচয়পত্র। মন্তেশ্বরের জন্য বেগুনি, বর্ধমান উত্তরের জন্যে মেরুন, ভাতারের জন্যে গোলাপি, গলসির জন্যে হলুদ, দুর্গাপুর পূর্বের জন্য নীল এবং দুর্গাপুর পশ্চিমের জন্যে ধূসর রঙের স্টিকার দেওয়া কার্ড দিচ্ছেন। অন্যদিকে, বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের রায়না বিধানসভার জন্য হালকা সবুজ, জামালপুরের জন্য বেগুনি, কালনার জন্য মেরুন, মেমারীর জন্য গোলাপি, পূর্বস্থলী দক্ষিণের জন্য হলুদ, পূর্বস্থলী উত্তরের জন্য নীল এবং কাটোয়ার জন্য ধূসর রঙের স্টিকার দেওয়া সচিত্র পরিচয় পত্র দিচ্ছেন। এদিন জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রতিটি বিধানসভার জন্য ২৫জন করে ভোট কর্মী থাকছে যাঁরা স্ট্রংরুম থেকে ইভিএম, ভিভি প্যাট মেশিন আনা নেওয়া করবেন। তাঁদের জন্য বিধানসভা ভিত্তিক আলাদা আলাদা রঙের গেঞ্জির ব্যবস্থা করা হয়েছে। জানা গেছে, প্রতিটি বিধানসভার জন্য বিভিন্ন রঙের স্টিকার দেওয়া প্রায় ২২০টি করে সচিত্র পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। শনিবার জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলার এই অভিনব চিন্তাভাবনার সঙ্গে যুক্ত এই জেলায় কোনো অস্থায়ী কর্মীকে ভোট গণনার কাজে লাগানো হচ্ছে না। অন্যান্য জেলাতে কিছু কিছু অস্থায়ী ভোটকর্মীকে কাজে লাগাতে হলেও এই জেলায় একেবারে সরকারি স্থায়ী কর্মীদেরই কাজে লাগানো হচ্ছে যা নজীর। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে গণনার সময় বিভিন্ন ঘরে ‘বাইরের লোক’ ঢুকে পড়েছিল বলে অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। প্রশাসনের তরফে তাঁদের চিহ্নিত করা হয়নি। ফলে, গণনায় তার প্রভাব পড়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। ২০১৯ সালেও লোকসভা ভোটে গণনাতেও রাজ্যের শাসক দলের তরফে একই অভিযোগ করা হয়েছিল। পুনর্গণনার দাবিতে ২০১৯ সালের ভোটে তৃণমূল প্রার্থী মমতাজ সঙ্ঘমিতা হাইকোর্টে মামলাও করেছিলেন। সেই মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।
উল্লেখ্য, আগামী মঙ্গলবার গোটা দেশের সঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলার দুটি লোকসভা কেন্দ্রেরও ভোট গণনা। চলছে তারই চূড়ান্ত প্রস্তুতি। বৃহস্পতিবার জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, ৪ জুন ভোট গণনার জন্য তাঁরা প্রস্তুত। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে জেলার দুটি গণনা কেন্দ্রে। ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে ভোটগণনা করা হবে। এদিন তিনি জানিয়েছেন, বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভোট গণনা হবে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউআইটি ভবনে এবং বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের ভোট গণনা হবে সাধনপুর এমবিসি ইনস্টিটিউশনে। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিটি বিধানসভার জন্য ২টি হলে ১০টি করে টেবিল থাকছে। বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের অধীন মেমারী ও রায়না বিধানসভার জন্য ১৫ রাউন্ড, জামালপুর বিধানসভার জন্য ১৩ রাউন্ড, কালনা, পূর্বস্থলী দক্ষিণ এবং পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য ১৪ রাউন্ড এবং কাটোয়া বিধানসভার জন্য ১৬ রাউন্ড গণনা করা হবে। অন্যদিকে, বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীন বর্ধমান দক্ষিণ, গলসী এবং দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভার জন্য ১৫ রাউন্ড করে গণনা করা হবে। মন্তেশ্বর এবং ভাতার বিধানসভার জন্য ১৪ রাউন্ড গণনা করা হবে। বর্ধমান উত্তর এবং দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভার জন্য গণনা করা হবে ১৬ রাউন্ড করে। অন্যদিকে, জেলাশাসক জানিয়েছেন, বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের জন্য ২টি হলে ১৬টি টেবিলে পোস্টাল ব্যালটের ভোট গণনা করা হবে। অপরদিকে, বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রের জন্য ৩টি হলে ১৬ টি টেবিলে ভোট গণনা করা হবে।