বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- শীতের শুরুতেই পরিযায়ী পাখি শিকারের অভিযোগ উঠতে শুরু করল বর্ধমান ১ ও ২ ব্লকের দামোদর নদ তীরবর্তী এলাকগুলিতে। এবিষয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে বর্ধমানের বন দপ্তরেও। বর্ধমান সোসাইটি ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ারের সদস্য অর্ণব দাস জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগেই বড়শুল এলাকার পশুপ্রেমী সোমনাথ নন্দী তাঁদের ফোন করে জানান এলাকায় পরিযায়ী পাখিদের সন্দেহজনকভাবে মৃত্যু হচ্ছে। এরপরই তাঁরা সংগঠনের চারজন এবং চারজন চিত্রগ্রাহক মিলে বর্ধমান ২ ব্লকের আমিরপুর থেকে বড়শুল এলাকা পর্যন্ত নজরদারী শুরু করেন। অর্ণব দাস জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত তাঁরা ৫ টি মৃত পাখি পেয়েছেন। যেগুলি দেখে তাঁদের প্রাথমিক অনুমান বিষযুক্ত খাবার খাওয়ার জন্যই পাখিগুলোর মৃত্যু হয়েছে। মৃত পাখিদের মধ্যে রয়েছে ১ টি রিভার ল্যাপ উইং (River Lapwing), ২ টি রুডি শেলডাক (Ruddy Shelduck ) এবং ২ টি পন্ড হেরন (Pond Heron)। এই পাখির মৃতদেহগুলি পাওয়া গেছে শ্রীরামপুর, পাল্লারোড এবং বড়শুল এলাকার দামোদর নদের পাড়ে। অর্ণব জানিয়েছেন, এর মধ্যে রিভার ল্যাপ উইং (River Lapwing)-এর মৃতদেহটি তাঁরা সোমবার বর্ধমানে বনদপ্তরের হাতে ময়নাতদন্তের জন্য তুলে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের পর-ই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। অর্ণব দাস দাবী করেছন, পাখিশিকারীরা শামুক অথবা ঝিনুকের মধ্যে বিষ দিয়ে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলিতে রেখে দেয়। সেই খাবার খেয়েই পাখিগুলির মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁদের অনুমান। ওই এলাকগুলিতে নদীর চড়ে প্রচুর ঝিনুক-শামুক পরে রয়েছে বলে তাঁরা দেখেছেন। অর্ণব দাস জানিয়েছেন, এখকার মানুষ অনেক সচেতন তা সত্ত্বেও কিছু মানুষ এখনও এই ধরণের বে-আইনি, অমানবিক কাজ করে চলেছেন। মানুষজনকে সচেতন করতে তাঁরা এবং বন দপ্তর একাধিক কর্মসূচী নিচ্ছে। তাতে কিছুটা হলেও কাজ হচ্ছে। গতবছর তাঁরা নদী তীরবর্তী এলাকাগুলিতে সচেতনতার পাশাপাশি নজরদারী চালিয়েছেন। এবছরও তাঁরা সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন করে এই নজরদারী চালাবেন। পূর্ব বর্ধমান জেলার এই এলাকায় পাখি সুমারী করা নাহলেও তাঁদের অনুমান গতবছরের তুলনায় এবছর পরিযায়ী পাখি বেশি সংখ্যক এসেছে। গত বছর তাঁরা রুডি শেলডাক (Ruddy Shelduck) ৮০ টার মত দেখেছিলেন, এবছর এখনই প্রায় ৩৫০ রুডি শেলডাক দেখেছেন। স্মল প্রাটিনকোল (Small Pratincole) গতবছর গতবছর ১০০০ টার মত দেখেছেন, এবছর দেখেছেন প্রায় ২০০০ টি। গতবছর পূর্বস্থলীর চুপি চরে ১ টি এবং বর্ধমানে ১ টি অসপ্রে (Osprey) এসেছিল, এবছর বর্ধমানেই এসেছে ৩ টি অসপ্রে পাখি। এছাড়াও এবছর রিভার ল্যাপউইং এসেছে প্রচুর সংখ্যক। তিনি জানিয়েছেন, পরিযায়ী পাখিদের প্রকৃত সংখ্যা জানতে এবছর যাতে পাল্লা-শ্রীরামপুর থেকে গৈতানপুর চড়মানা পর্যন্ত দামোদর নদ এলাকায় পাখি সুমারি করা হয় সেবিষয়ে উদ্যোগ নেবেন। বর্তমানে পরিযায়ী পাখিদের বেশিরভাগই বর্ধমান ২ ব্লকের আমিরপুর- বড়শুল এলাকার পরিবর্তে বর্ধমান ১ ব্লকের গৈতানপুর চড়মানা এলাকায় অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন অর্ণব দাস।