গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- পাণ্ডবেশ্বর থানার খোট্টাডিহি কোলিয়ারিতে সাধারণ মজদুরের কাজ করেন সুধীর দাস। পাণ্ডবেশ্বর থানারই জামাইপাড়ায় তার বাড়ি। কিছুদিন আগে তিনি ইসিএল থেকে স্বেচ্ছা অবসরের নোটিশ পান। তার এখনও ১৩ বছর চাকরি রয়েছে। নোটিশ পেয়ে তিনি বিস্মিত হন। চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে যায়। স্বেচ্ছা অবসরের জন্য তিনি কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও আবেদন করেন নি। কিভাবে তিনি নোটিশ পেলেন তা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না তিনি। কোলিয়ারিতে খোঁজখবর নেন তিনি। সেখান থেকে তিনি জানতে পারেন, তার এই নোটিশ পাওয়ার পিছনে এলাকার সুদখোর রাজকুমার সাউ ওরফে রাজু গুপ্তার হাত আছে। কোলিয়ারির অফিসারকে হাত করে স্বেচ্ছা অবসরের পাওনা টাকা হাতাতে রাজু নোটিশ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। ঘটনার কথা জানিয়ে তিনি পাণ্ডবেশ্বর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে জাল নথিপত্র তৈরি করে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। যদিও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেপ্তার এড়াতে আগাম জামিনের আবেদন করে রাজু। শুক্রবার বর্ধমানের জেলা ও দায়রা আদালতে সেই আবেদনের শুনানি হয়। অভিযুক্তের আইনজীবী মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর কথা বলে ধৃতের জামিন চান। সরকারি আইনজীবী জামিনের জোরালো বিরোধিতা করেন। সওয়াল শুনে রাজুর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন জেলা জজ কেশাং ডোমা ভুটিয়া।
তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, পাণ্ডবেশ্বর থানার ফুলবাগান মোড়ের বাসিন্দা রাজকুমারের কাছে বছর খানেক আগে আড়াই লক্ষ টাকা ধার নেন সুধীর। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেই টাকা তিনি পরিশোধ করে দেন। এরপর সুধীরের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাঁর এটিএম কার্ড ব্যবহার করে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা তুলে নেয় রাজকুমার। এনিয়ে সুধীর জানতে চাইলে টাকা নেওয়ার কথা রাজু স্বীকার করে। এরপর বুঝিয়ে সুঝিয়ে কোলিয়ারির এক অফিসারের কাছে সুধীরকে নিয়ে যায় সে। সেখানে কিছু কাগজপত্রে তার সই করিয়ে নেয়। সেই সব কাগজপত্র কাজে লাগিয়ে কোলিয়ারির এক অফিসারের মদতে সুধীরের স্বেচ্ছাবসরের টাকা হাতাতে নোটিশ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে রাজু। তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জেনেছে, রাজু সুদের কারবারে জড়িত। বিভিন্ন জনকে চড়া সুদে টাকা ধার দেয় সে। সচরাচর কোলিয়ারির সাধারণ মজদুরদের কাছে টাকা খাটায় সে। টাকা ধার দিয়ে মোটা টাকা সুদ নেওয়ার পাশাপাশি স্বেচ্ছা অবসরের টাকা হাতায় সে। তার পাতা ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। ডালুরবাঁধ কোলিয়ারির বসির মিঞা তার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিল। আড়াই লক্ষ টাকা পরিশোধ করে দেন বসির মিঞা। একই কায়দায় তার স্বেচ্ছা অবসরের ব্যবস্থা করে রাজকুমার। তারপর তাঁর টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাকে ভয় দেখিয়ে এলাকা ছাড়া করে দেয় রাজু। তার প্রতারণার শিকার হয়েছে মাধাইপুর কোলিয়ারির ত্রিলোকী ভূইঞা। রাজুর পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ঠকেছেন ফুলবাগান কোলিয়ারির ভীম দাসও। টাকা ধার দিয়ে তাঁর এটিএম কার্ড ও পে-স্লিপ আটকে রেখে টাকা তুলে নিচ্ছে রাজু। ঘটনার সঙ্গে ইসিএলের এক অফিসার জড়িত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। রাজু ধরা পড়লে সুদের ফঁদে জড়িয়ে ইসিএলের মজদুরদের প্রতারণার পর্দা ফাস করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে পুলিশ।
Tags Bardhaman Burdwan Coal mining Colliery East Bardhaman East Burdwan Eastern Coalfields Limited ECL Purba Bardhaman Voluntary Retirement কোলিয়ারি খবর পাণ্ডবেশ্বর পূর্ব বর্ধমান বর্ধমান বাংলা বাংলা খবর সংবাদ স্বেচ্ছা অবসর
Check Also
বর্ধমান টাউন হলে শুরু হলো লিটল ম্যাগাজিন মেলা, চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- শুক্রবার থেকে শুরু হলো ‘বর্ধমান লিটল ম্যাগাজিন মেলা ২০২৪’। বর্ধমান টাউন …