Breaking News

ষষ্ঠীর দিনে জনজোয়ার মণ্ডপে মণ্ডপে, প্রকাশিত হল বিশ্ববাংলা শারদ সম্মানের ফলাফল

Durga Puja. Alamganj Barowari, Burdwan. --- Photo by Sanjoy Karmakar, Purba Bardhaman

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ষষ্ঠীর সকাল থেকেই বর্ধমানের মণ্ডপে মণ্ডপে জনজোয়ার শুরু হল। থিমের রোশনাইয়ে জমে উঠেছে এবারের পুজোর আনন্দ। ‘ভাল থাকিস খোকা – ইতি তোমার মা।’ একটা সময় যখন চিঠি লেখার চল ছিল – যখন ছিল না হাতের মুঠোয় মোবাইল ফোনে বিশ্বকে জয় করার অহংকার। তখন মা-বাবারা দূরবর্তী সন্তানের মঙ্গলকামনায়, তাঁদের কুশল সংবাদ নিতেন, দিতেন এভাবেই। আর চিঠির শেষে লিখতেন – ইতি তোমার মা। এবার দুর্গাপুজোয় এভাবেই অনবদ্য থিমকে তুলে ধরেছেন বর্ধমানের বড়শুল ইয়ংম্যানস ক্লাব। বাজেট প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। পুজোর থিম মেকার বিশ্বভারতীর অংকন শিক্ষক অতনু চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রতিনিয়ত, প্রতিমূহূর্তে তিনি দেখতে পান বাবা-মা বৃদ্ধ হয়ে গেলে কিভাবে তাঁরা অবহেলার শিকার হন। কিভাবে উপযুক্ত ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে ক্রমশই দূরে সরে যান। তাঁদের কিভাবে দূরে সরিয়ে রেখে দেওয়া হয়। আর তাই সমাজের এই অবক্ষয়কেই এবারে বাইমার ২০তম বর্ষে তিনি থিম হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বাইমার মণ্ডপকে সাজানো হয়েছে ৩টি পর্যায়ে। গোটা মণ্ডপকে গড়ে তোলা হয়েছে তালপাতা দিয়ে আদিবাসী মায়ের মূখমণ্ডল দিয়ে। রয়েছে বিভিন্ন মডেলও। ভেতরের প্রথম অংশে রয়েছে মাতৃ জঠরে শিশুর থাকা এবং মায়ের যন্ত্রণাকে কিভাবে মাতৃত্বের সোহাগে তিনি তা উপলব্ধি করছেন তার দৃশ্য। দ্বিতীয় অংশে রয়েছে বৃদ্ধ মায়েদের জেলখানার গরাদের মধ্যে থাকার দৃশ্য। গরাদের মধ্যে থেকেও মা তার সন্তানের জন্য গরাদের বাইরে দুহাত মেলে ধরে সন্তানের সুখ চাইছেন। তাঁদের সমৃদ্ধি চাইছেন। গোটা আকাশ বাতাস জুড়ে মায়ের এই চাওয়াকেই তুলে ধরা হয়েছে দ্বিতীয় অংশে। মণ্ডপের তৃতীয় অংশে রয়েছে সন্তান কোলে বাংলার মায়েদের দৃশ্য।
৩১তম বর্ষে বর্ধমানের বড়শুল জাগরণীর পুজোর থিম রূপসী বাংলা – শিকড়ের টানে মাটির গানে। ১৬ লক্ষ টাকা পুজোর এই বাজেটে তুলে ধরা হয়েছে গ্রামবাংলার খণ্ডচিত্রকে। বিষয়ভাবনাকে আরও জাগ্রত করতে মেদিনীপুরের পিংলার জামেলা চিত্রকরের পটচিত্রকে তুলে ধরা হয়েছে এই মণ্ডপে। এমনকি পুজোর এই কটা দিন তিনি নিজেও হাজির থাকবেন মণ্ডপে। মনসামঙ্গহলের আখ্যানকে তিনি পটচিত্রে ব্যবহার করেছেন এখানে। আরও আকর্ষণীয় বিষয় হল এই মনসা মঙ্গলের পটচিত্রকে বোঝাতে তিনি গান গেয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জনের চেষ্টাও করবেন। মনসামঙ্গলের পাশাপাশি আরও এক পটচিত্রকে ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। রামায়ণের খণ্ডচিত্র কালিঘাটের এই পটচিত্রে দেখা যাবে। পুজো কমিটির প্রচার সচিব কবিতা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই বাংলায় নেই কি। অজস্র সম্পদে সমৃদ্ধ আমার সোনার বাংলা – রূপসী বাংলা। মণ্ডপে সেগুলিই তুলে ধরা হয়েছে। রয়েছে ঢেঁকিতে ধান ভাঙার ছবি। নবান্ন উত্সব জাগরণীর পুজো মণ্ডপে ঢোকার মুখেই থাকছে কাশবন, তালগাছ। তা পেড়িয়ে ঢুকতেই বিশালাকার দুটি ষাঁড় – যারা দেবীকে গরুর গাড়িতে করে মণ্ডপে নিয়ে এসেছে। মণ্ডপের ভেতরে রয়েছে বাংলার বিখ্যাত ডোকরা শিল্পের নির্দশন।
বর্ধমানের নামজাদা ক্লাব আলমগঞ্জ বারোয়ারি পুজো কমিটির এবারের থিম স্বর্গোদ্যানে মা। প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকার এই বাজেটের পুজো এবার ৬৮ বছরে পা দিল। গোটা মণ্ডপটাই একটি কাল্পনিক থিম। যেখানে রয়েছে অভূতপূর্ব কারুকাজ। এই মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে ফোম, কাগজকে। স্বপ্নের পরী থেকে স্বপ্নের ঐরাবত। মণ্ডপের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই তৈরী করা হয়েছে দেবী প্রতিমাকে। ষষ্ঠীর সকাল থেকেই দর্শনার্থিদের ভিড় আর সেলফি তোলার ধূম নজরে পড়েছে।
বর্ধমানে এবারই প্রথম কোনো মণ্ডপসজ্জার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে জীবন্ত চিত্রকে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার পেশাদার অভিনেতাদের নিয়ে এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাট কবিতা অবলম্বনে বর্ধমানের তেলিপুকুরে তৈরী করা হয়েছে সহজ পাঠের মণ্ডপ। তেলিপুকুর সুকান্ত স্মৃতি সংঘের সম্পাদক রাসবিহারী হালদার জানিয়েছেন, ১৫ লক্ষ টাকা বাজেটে এবারে তাঁদের পুজোর থিমের মধ্যে দিয়ে সর্বধর্মসমন্বয়কেই তুলে ধরা হয়েছে। এই মণ্ডপের মূল আকর্ষণ লাইট এণ্ড সাউণ্ডের ব্যবহার।
বর্ধমানের ইছলাবাদ কিরণ সংঘ এবারই প্রথম থিম পুজোয় পা রাখল। এবারে তাদের থিম কংক্রিটের শহরে সঞ্জীবনী মা। গোটা মণ্ডপে ব্যবহার করা হয়েছে বাতিল হওয়া বিভিন্ন ওষুধের প্যাকেট, বিস্কুটের প্যাকেট। তুলে ধরা হয়েছে ক্রমাগত সবুজ ধ্বংস করে কিভাবে কংক্রিটের জঙ্গল তৈরী হচ্ছে। হারাচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। পাখিরা নিরাশ্রয় হয়ে পড়ছে। এবারে তাঁদের পুজোর বাজেট প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। এছাড়াও শহরের সেরা পুজোর মধ্যে এবার থিমের পুজোয় নজর কেড়েছে ২নং শাঁখারীপুকুর সার্বজনীন পুজো কমিটির পুজো। ১৪তম বছরে তাদের থিম জুরাসিক পার্ক। এবারে পুজোর বাজেট প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। থিমকে ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে নানান ধরণের ডাইনোসরের মডেলকে। সেগুলিকে যান্ত্রিকভাবে সচল করায় দর্শকদের আকর্ষণ বেড়েছে। এছাড়াও মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে নানারকমের কীটপতঙ্গকেও।
ময়ুরমহল মাতৃ সংঘের পুজোর থিম এবার স্বপ্ন উড়ান। বাজেট ২১ লক্ষ টাকা।
বড়নীলপুর বাজারের শহীদ নিবাস স্মৃতি সংঘের পুজোর থিম নানা রংয়ের মেলা। বাজেট প্রায় ১১ লক্ষ টাকা।
বড়শুল অন্নদাপল্লী সার্বজনীন পুজো কমিটির থিম পাথরে প্রাণ প্রতিমা। বাজেট প্রায় ১২ লক্ষ টাকা।
ছোটনীলপুর আমবাগানের জাগরণী সংঘের পুজোর থিম সমুদ্রের তলদেশ।
৫৭ বছরে পা দেওয়া বর্ধমানের লাল্টু স্মৃতি সংঘের এবারের থিম গুজরাটের ডাণ্ডিয়া উত্সব- নবরাত্রিকে ঘিরে। ক্লাব সম্পাদক তন্ময় সামন্ত জানিয়েছেন, মেদিনীপুরের খেজুরির শিল্পী গোপাল মণ্ডল তৈরী করেছেন এই অভিনব মণ্ডপ। গোটা মণ্ডপকে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন পুতুল তথা মডেল দিয়ে। যেখানে তুলে ধরা হয়েছে গুজরাটের বিভিন্ন দিককে। উটের বিভিন্ন মডেল ছাড়াও মণ্ডপে তুলে ধরা হয়েছে মহিলাদের ডাণ্ডিয়া খেলার বিভিন্ন দৃশ্যকে। মণ্ডপসজ্জার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই কুমারটুলীর শিল্পী মিণ্টু পাল তৈরী করেছেন প্রতিমা। ক্লাব সম্পাদক তন্ময় সামন্ত জানিয়েছেন, এবারে পুজোর বাজেট প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা।
কেন্দ্রীয় সরকারের বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কন্যাশ্রী – যার মূলে রয়েছে কন্যা সন্তানদের রক্ষা করার প্রচেষ্টা। আর সেই কন্যা ভ্রূণকে রক্ষা করার বার্তা দিতে বর্ধমানের সবুজ সংঘের মণ্ডপ সজ্জার থিম কন্যা ভ্রুণে মা। সবুজ সংঘের সম্পাদক বাপি বোস জানিয়েছেন, এবারে তাঁদের পুজোর বাজেট প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। তিনি জানিয়েছেন, যেভাবে দিকে দিকে প্রায়শই কন্যা ভ্রুণকে নষ্ট করার ঘটনা ঘটে তাকেই এবারে মণ্ডপ সজ্জায় তুলে ধরা হয়েছে।
বর্ধমানের আর এক নামী পুজো উদ্যোক্তা পদ্মশ্রী সংঘের এবারের পুজোর বাজেট প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা ছুঁইছুঁই। পুজো কমিটির সদস্য প্রভাত দাস জানিয়েছেন, দক্ষিণভারতের একটি মন্দিরের আদলে কাল্পনিক এই মণ্ডপ তৈরী করা হয়েছে। মণ্ডপে ব্যবহার করা হয়েছে গৃহস্থালীর নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন স্টীলের জিনিসপত্র। যার মধ্যে রয়েছে চামচ, ধূপদানি, স্টীলের বিভিন্ন ধরণের পাত্র। প্লাষ্টিক বোর্ডের ওপর সেগুলিকে বিভিন্ন আঙ্গিকে সাজিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গোটা মন্দিরকে। পদ্মশ্রীর পুজো এবার ৬৮ বছরে পা দিল।
সবমিলিয়ে রীতিমত জমে উঠেছে পুজোর আনন্দ। অন্যদিকে, এবার রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মানে সেরা পুজোর পুরষ্কার ছিনিয়ে নিল পূর্ব বর্ধমানের আলমগঞ্জ বারোয়ারী সমিতি, ময়ুরমহল মাতৃ সংঘ এবং বড়শুল জাগরণী। সেরা পুজোর আর্থিক পুরষ্কার হিসাবে দেওয়া হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা করে। এছাড়াও পূর্ব বর্ধমান জেলার সেরা প্রতিমার পুরষ্কার ছিনিয়ে নিয়েছে কালনার শ্রী সার্বজনীন দুর্গোত্সব কমিটি, বর্ধমান সদরের তেলিপুকুর সুকান্ত স্মৃতি সংঘ এবং কাটোয়ার সাহেববাগান দুর্গামন্দির। পুরষ্কারের আর্থিক মূল্য ২০হাজার টাকা। সেরা মণ্ডপ সজ্জার পুরষ্কার পেয়েছে কাটোয়ার যাজিগ্রাম নবোদয় সংঘ, বর্ধমান সদরের শ্যামলাল সার্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি এবং বর্ধমান সদর দক্ষিণ মহকুমার মেমারী সারদাপল্লী অরবিন্দপল্লী রিক্রেয়শন ক্লাব। পুরষ্কারের আর্থিক মূল্য ৩০ হাজার টাকা।

The announcement is a list of Puja Committee on the Biswa Bangla Sharad Samman Award

সোমবার এই পুরষ্কারের কথা ঘোষণা করেছেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব। এছাড়াও এবছর থেকে চালু হওয়া গ্রীন পুজোয় কাটোয়ার ননগর সবুজ সংঘ প্রথম, দ্বিতীয় বর্ধমান সদরের উদয়পল্লী সুভাষ সংঘ এবং তৃতীয় পুরষ্কার পেয়েছেন ইছলাবাদ কিরণ সংঘ । উল্লেখ্য গ্রীন পুজো পুরষ্কার হিসাবে প্রথম স্থানাধিকারীকে ৩০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় স্থানাধিকারীকে ২০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় স্থানাধিকারীকে ১০ হাজার টাকা পুরষ্কার দেওয়া হবে। জেলাশাসক জানিয়েছেন, গ্রীন পুরষ্কার প্রাপকদের আগামী ২ নভেম্বর রাজ্য পরিবেশ দপ্তরের উদ্যোগে কলকাতার সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে পুরষ্কৃত করা হবে।

The announcement is a list of Puja Committee on the Green Puja Sharad Samman Award

About admin

Check Also

The fifth short film festival was organized in Burdwan

বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *