গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- দীর্ঘ জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ সুরেন্দ্রজিৎ সিং অহলুওয়ালিয়াকে প্রার্থী করল বিজেপি। রবিবার দলের তরফে তাঁকে প্রার্থী করার কথা ঘোষণা করা হয়। এই মুহূের্ত তিনি রাজ্যের বাইরে রয়েছেন। সোমবার তিনি মনোনয়ন পত্র জমা দেবেন। শহরের শুলিপুকুর থেকে মিছিল করে জেলা শাসকের দপ্তরে তাঁর মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা। সংসদীয় রাজনীতিতে পোক্ত অহলুওয়ালিয়াকে প্রার্থী করায় খুশি বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। তিনি প্রার্থী হওয়ায় খুশি তাঁরা। এদিনই সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সমর্থনে দেওয়াল লিখন শুরু হয়েছে। প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পর অহলুওয়ালিয়া বলেন, বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম। আরও অনেক নাম ছিল। সেজন্য হয়ত নাম ঘোষণা করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে, এর জন্য কোনও সমস্যা হবেনা। দলের প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে।
বর্ধমানের সঙ্গে অহলুওয়ালিয়ার নাড়ির সম্পর্ক। ১৯৫১ সালের ৪ জুলাই আসানসোলে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াশুনা করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রথমবার রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হিসাবে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় কমিটির সদস্য হয়েছেন। ১৯৯২ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন। ২০০০ সালে তৃতীয়বারের জন্য তিনি রাজ্যসভার সাংসদ সদস্য হন। ২০০৬ সালে চতুর্থবারের জন্য তিনি রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে তিনি স্বরাষ্ট্র সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য হন। প্রিভিলেজ কমিটিরও তিনি সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি অফিস অব প্রফিট সংক্রান্ত সংসদের যুগ্ম কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে তিনি দাির্জলিং থেকে লোকসভায় সদস্য হন। ২০১৬ সালে তিনি কৃষি ও ফারমার্স ওয়েলফেয়ার এবং সংসদীয় বিষয়ক দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী হন। পরে তিনি আরও কয়েকটি দপ্তরের দায়িত্ব পান। তাঁর লেখা বেশ কয়েকটি বই রয়েছে। ১৯৮৪ সালে দাঙ্গায় নিহত শিখদের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত জিএস ধিল কমিটির তিনি সদস্য ছিলেন। সংসদে বিভিন্ন সময়ে তিনি নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছেন। রাজ্যসভায় হল্লা ব্রিগেডের তিনি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।
এবার বিমল গুরুংদের আপত্তিতে দাির্জলিং আসন থেকে দল তাঁকে প্রার্থী করেনি। পাহাড় অশান্ত হয়ে পড়ার সময় সংসদ সদস্য হিসাবে তিনি তাঁর দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেন নি বলে দলীয় মূল্যায়ণে উঠে আসে। এবার তাঁকে প্রার্থী করার ব্যাপারে বিমল গুরুং, রোশন গিরিদের আপত্তি ছিল। তাই, তাঁকে দাির্জলিং থেকে টিকিট দেওয়া হয়নি বলে দলীয় সূত্রে খবর। বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার জন্য বেশ কয়েকজনের নাম উঠে আসে। জেতা আসন থেকে টিকিট না পেয়ে ক্ষুব্ধ হন অহলুওয়ালিয়া। তাঁকে শান্ত করতে এই আসনে প্রার্থী করা হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলে চর্চা চলছে। তিনি এই আসন থেকে প্রার্থী হতে রাজি ছিলেন না। দলের নেতৃত্ব তাঁকে নানাভাবে এই আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য বোঝান। শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত দলের উচ্চ নেতৃত্ব তাঁকে প্রার্থী হওয়ার জন্য বোঝান। শেষমেশ বরফ গলে। প্রার্থী হতে রাজি হয়ে যান অহলুওয়ালিয়া। গতবার এই আসনে তৃণমূলের মমতাজ সংঘমিতা ৫ লক্ষ ৫৪ হাজার ৫২১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। সিপিএমের সাইদুল হক ৪ লক্ষ ৪৭ হাজার ১০৯ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। বিজেপির দেবশ্রী চৌধুরি ২ লক্ষ ৩৭ হাজার ২০৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। বিজেপির মূল্যায়ণে এবার পরিস্থিতি বদলেছে। এই আসনে জেতার মতো পরিস্থিতি রয়েছে বলে মনে করে দলের নেতৃত্ব। ঝানু রাজনীতিবিদ অহলুওয়ালিয়া এবার এই আসনে তৃণমূল ও সিপিএমকে হারিয়ে জিততে পারেন কিনা সেটাই এখন দেখার। তার জন্য ভোটের ফল বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিজেপি প্রার্থী বলেন, আসানসোল আমার জন্মস্থান। বর্ধমানে পড়াশুনা করেছি। বর্ধমান ও দুর্গাপুরের সঙ্গে আমার পরিচিতি দীর্ঘদিন। তাই, কোনও অসুবিধা হবেনা।