বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- “রাজ্যে রাক্ষুসী রাজ চলছে। মহিলারাই চিরকাল অসুর বধ করে এসেছেন। তাই রাজ্য থেকে এই রাক্ষুসী রাজকে হঠাতেই হবে। আর সেই কাজ করতে মহিলাদের এগিয়ে আসতে হবে হাতা খুন্তি নিয়ে। তৃণমূলের সন্ত্রাস রোধে বাংলার মা–বোনকেই হাতা খুন্তি নিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। ভয় পেলে চলবে না। আগামী লোকসভা নির্বাচনে মহিলারা যদি পোলিং এজেণ্ট হিসাবে এগিয়ে আসতে পারে তাহলে বিজেপির জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।” তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর প্রথম সভায় এভাবেই তৃণমূল সরকারকে বিঁধলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। রবিবার বর্ধমানের উত্সব ময়দানে ভারতীয় জনতা মহিলা মোর্চার ডাকে রাঢ় বঙ্গ জোনের পুরুলিয়া, বীরভূম, বর্ধমান সদর, বর্ধমান পূর্ব, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর এবং আসানসোল সাংগঠনিক জেলার মহিলা মোর্চার সমবেত সম্মেলনে যোগ দিতে আসেন তিনি। সৌমিত্রবাবু এদিন জানিয়েছেন, তিনি এখন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চান। আর বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি সেটাই করছেন। সৌমিত্রবাবু এদিন বলেন, কালিঘাটের ব্যানার্জ্জী পরিবারের সম্পত্তি বাড়ছে। থাইল্যাণ্ড থেকে ২ কিলো সোনা নিয়ে আসছিল ব্যানার্জ্জী পরিবারের লোক। কি করে ৩ হাজার কোটি টাকার মালিক হল ? সারদা নারদার টাকায় বড়লোক। রীতিমত জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী সৌমিত্র খাঁ জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশে তিনি নিজের লোকসভায় ঢুকতে পারছেন না ঠিকই, কিন্তু ২৭ তারিখের পর তিনি আদালতের নির্দেশ মেনেই যখন ঢুকবেন, তখন বিষ্ণুপুর লোকসভায় কোনো তৃণমূলের অফিসই থাকবে না, সব বিজেপির অফিস হয়ে যাবে। এদিন সৌমিত্রবাবু বিজেপির মহিলা মোর্চার উদ্দেশ্যে জানান, ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে গেছে, এখন কেবল দরকার অসুরদের বধ করা। আর সেটা মহিলারাই পারেন। এদিন সৌমিত্র খাঁ বলেন, একসময় তৃণমূল কংগ্রেসের আন্দোলন ছিল রাজ্য থেকে বামপন্থাকে হঠাতে। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে যে সরকার এল পরবর্তী ২ বছরেই তা বদলাতে শুরু করে দিল। যে তৃণমূল নেত্রী কংগ্রেসের পরিবার তন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলতেন, এখন সেই তৃণমূলেই পরিবারতন্ত্র কায়েম হয়েছে। সৌমিত্রবাবু বলেন,২০১৬ সালে তিনি যে পাপ করেছেন এখন তিনি তার প্রায়শ্চিত্ত করছেন। তিনি বলেন, তৃণমূল যে মা মাটি মানুষের কথা বলেন তা তারা পালন করে না। মায়েরা ধর্ষিতা হলে তার কোনো শাস্তি হয় না। মাটি বেচে চলছে সিণ্ডিকেট রাজ। আর মানুষের তো কোনো ভোটাধিকারই নেই। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষের গণতন্ত্রকে হরণ করা হয়েছিল। আর হনুব্রতরা রাস্তায় খড্গ হাতে নিয়ে বলছেন উন্নয়ন দাঁড়িয়ে রয়েছে। সৌমিত্রবাবু এদিন বলেন,কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প চুরি করে এ রাজ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আবাস যোজনার টাকা পেতে গেলে তৃণমূলের নেতাদের কমিশন দিতে হচ্ছে। গোটা দলটাই তোলাবাজের দল হয়ে গেছে। কালিঘাটে ব্যানার্জ্জী পরিবারের সম্পত্তি বাড়ছে। সারদা নারদার টাকা কোথায় গেল? সৌমিত্রবাবু এদিন বলেন, এখন পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে ভোটে জেতানোর জন্য চুক্তি করা হচ্ছে মোটা টাকার বিনিময়ে। পুলিশ অফিসাররা কোটিপতি হয়ে যাচ্ছেন। সৌমিত্রবাবু এদিন বলেন, রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ২৫টি আসন বিজেপি জয় করবেই। উল্লেখ্য, বিষ্ণুপুর লোকসভার অন্তর্গত পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ বিধানসভায় ইতিমধ্যেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে সৌমিত্র খাঁকে পরিযায়ী পাখির সঙ্গে তুলনা করে গদ্দার সৌমিত্র খাঁকে একটি ভোটও নয় বলে প্রচার শুরু করেছে। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ এর বিচার করবে। তিনি কাজ করেছেন কি করেননি, সেটা মানুষই বলবে। তিনি জেতার ব্যাপার ২০০ শতাংশ আশাবাদী। অন্যান্যদের মধ্যে এদিন এই মহিলা মোর্চার সভায় বক্তব্য রাখেন বিজেপির রাজ্য মহিলা মোর্চার সদস্য শশী সিং সহ অন্যান্য জেলা মহিলা নেতৃত্বরাও। মঞ্চে হাজির ছিলেন বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী, সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া আইনুল হক প্রমুখরাও। সৌমিত্র খাঁ-এর অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও বক্তব্য এখনও পাওয়া না গেলেও এদিনই সর্বভারতীয় তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারের উপর ওঠা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। এটি একটি রাজনৈতিক ষড়যন্তের ফল।
Like this:
Like Loading...
Related