বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- প্রবাদ আছে ফলতে না ফলতেই এক কাঁদি। ঠিক তেমনই দশা হতে চলেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা বিজেপি দলের। গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই কাতারে তৃণমূল এবং বেশীরভাগ সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেবার হিড়িক ক্রমশই বাড়ছে। আর তাতেই শুরু হয়েছে এবার দলীয় কোঁদল। সোমবার রাতে এই কোঁদল রীতিমত বিজেপির সাংগঠনিক বন্ধনকে প্রশ্ন চিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল। মঙ্গলবার রাতে বিজেপির নব্য ও পুরনো দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠল বর্ধমান শহর। বিজেপি সূত্রে জানা গেছে, এদিন সন্ধ্যেবেলায় বিজেপির জেলা অফিস ডিভিসি মোড়ের ঘোড়দৌড় চটিতে সিপিএম ছেড়ে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া বিশ্বজিত সেন ওরফে খোকন সেন কয়েকজনকে নিয়ে যান বিজেপিতে যোগ দেওয়ানোর জন্য। বিজেপির যুবমোর্চার জেলা সভাপতি শ্যামল রায় অভিযোগ করেছেন, বিজেপির জেলা অফিস যাঁকে তাঁরা মন্দির হিসাবে পুজো করেন। সেই পার্টি অফিসে এসে এদিন খোকন সেন দাপট দেখাতে শুরু করেন। তিনি বিজেপি যুবমোর্চার কয়েকজন কর্মী ও নেতাকে মারধর করেন। আর তাতে অপরাপর বিজেপি কর্মীরা রুখে দাঁড়ালে তিনি ৫ রাউণ্ড গুলি ছোঁড়েন। এই ঘটনায় বিজেপির ৩জন নেতা আহতও হন। শ্যামল রায় জানিয়েছেন, শুধু এটাই নয়, এরপর খোকন সেন তাঁর বিশাল বাহিনী নিয়ে তাঁর (শ্যামল রায়ের) বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়ির জানালা দরজা ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে সেখানে প্রায় ২০০ বিজেপি কর্মী হাজির হলে খোকন সেনের দলবল পালিয়ে যায়। এই সময় শ্যামল রায়ের বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হয় একটি পথচলতি গাড়ি। গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। অন্যদিকে, সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া খোকন সেনের অভিযোগ, কয়েকদিন আগেই বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার সাংসদ সুরেন্দ্রজিত সিং অহলুবালিয়ার হাত ধরে প্রায় আড়াই হাজার তাঁর অনুগামীকে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু সেদিনই ওই অনুষ্ঠানে বিজেপির যুবমোর্চার জেলা সভাপতি শ্যামল রায় তাঁকে বাধাও দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও বিজেপির জেলা নেতৃত্বের উপস্থিতিতে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। আর সোমবার সন্ধ্যেবেলায় তাঁর আরও কিছু অনুগামীকে নিয়ে বিজেপির জেলা অফিসে যান। সেই সময় শ্যামল রায়ের নেতৃত্বে বেশ কিছু বিজেপি সমর্থক তাঁদের মারধর শুরু করেন। তাঁকে বিজেপি পার্টি অফিসেই বেধড়ক মারধর করা হয়। মারধর করা হয় তাঁর কয়েকজন অনুগামীকেও। এই সময় শ্যামল রায়ের নেতৃত্বে জেলা অফিস ভাঙচুরও করা হয়। খোকন সেনের দাবী, গোটা ঘটনায় বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী সহ আরও কয়েকজন জেলা নেতা পার্টি অফিসে হাজির ছিলে্ন। তাঁদের অনুরোধেই তিনি কার্যত গোবেচারা হিসাবে পড়ে পড়ে মার খান। কোনো প্রতিরোধ করেননি। এদিকে, এই ঘটনার পরই তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে গোটা শহর জুড়ে। শ্যামল রায় দাবী করেছেন, অবিলম্বে সিপিএম থেকে আসা খোকন সেনকে দল থেকে বহিষ্কার করা না হলে তাঁরা দল ছাড়বেন। তিনি জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। তাঁদের নির্দেশ না পাওয়ায় এখনও পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। এদিকে, খোদ বিজেপির অন্দরেই এভাবে দুটি গ্রুপের সংঘর্ষ ঘটায় গোটা ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলেছেন বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী। তিনি জানিয়েছএন, কোনো গুলি চালানোর বিষয় তাঁর জানা নেই। তবে বেশ কিছু ইঁট ছোঁড়া হয়। দুপক্ষের মারপিটের ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন, দল বড় হচ্ছে তাই নিয়ন্ত্রণ রাখায় মুশকিল হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এব্যাপারে রাজ্য নেতৃত্বকে সব জানানো হয়েছে। তাঁদের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।
Check Also
বাংলা আবাস যোজনায় নাম দোতলা বাড়ির মালিক বিধায়কের শাশুড়ি এবং পঞ্চায়েত প্রধানের
খণ্ডঘোষ (পূর্ব বর্ধমান) :- পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের তৃণমূল বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের শ্বশুরবাড়ির একাধিক বাড়িতে হুকিং …